স্পেকট্রাম নিলাম নিয়ে অপারেটরদের উদ্বেগের জবাব দিয়েছে সরকার

২৫ মার্চ, ২০২৫  
২৫ মার্চ, ২০২৫  
স্পেকট্রাম নিলাম নিয়ে অপারেটরদের উদ্বেগের জবাব দিয়েছে সরকার

বাংলাদেশ সরকার আসন্ন ৭০০ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম নিলাম সংক্রান্ত বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জবাব দিয়েছে। আজ (২৫ মার্চ) সরকারের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে জানানো হয়, বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগ অবকাঠামোতে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগকারীদের অবদান সরকার স্বীকার করে এবং তাদের উদ্বেগের বিষয়গুলো গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হচ্ছে।

স্পেকট্রামের মূল্য নির্ধারণ প্রসঙ্গে সরকারের বক্তব্য, বিগত তিন বছরে মার্কিন ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশি টাকার মূল্যমান প্রায় ৪০% হ্রাস পেয়েছে। মুদ্রার এই অবমূল্যায়ন বিবেচনায় আনলে, বর্তমান স্পেকট্রামের মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ রয়েছে। যেহেতু দেশের টেলিযোগাযোগ খাতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য এবং তাদের মুনাফা ডলারে রপ্তানি হয়, তাই মার্কিন ডলারে স্পেকট্রামের মূল্য নির্ধারণকে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।

সরকার আরও জানিয়েছে, ৭০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডের সম্পূর্ণ ২x৪৫ মেগাহার্টজের মধ্যে আপাতত ২x২৫ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম নিলামের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। তবে, বাকি অংশ দ্রুত সময়ের মধ্যে উন্মুক্ত করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে, যাতে প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ও বাণিজ্যিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা যায়।

এছাড়া, ৭০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডের ডিভাইস প্রবেশাধিকার বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, ভবিষ্যতে দেশীয় উৎপাদনকারী ও আমদানিকারকরা নতুন কোনো মোবাইল ফোন বাজারে আনতে পারবে না যা ৭০০ মেগাহার্টজ সমর্থন করে না। বর্তমানে ৪জি ডিভাইসের মধ্যে এই ব্যান্ডের প্রবেশাধিকার প্রায় ৫০%। এই উদ্যোগের ফলে আগামী কয়েক প্রান্তিকে এ হার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সরকারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটরদের (এমএনও) স্পেকট্রাম ব্যবহার বিভিন্ন ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডে ভিন্নমাত্রায় রয়েছে। নিম্ন ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডগুলোর ব্যবহার হার ৮৪%-৯৮% হলেও উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডগুলো কম ব্যবহৃত হচ্ছে (৭%-১৮%)। এ সমস্যার মূল কারণ হিসেবে যথাযথ বেইসব্যান্ড ইউনিট (বিবিইউ) ও রেডিও রিসোর্স ইউনিট (আরআরইউ) স্থাপনের অভাবকে দায়ী করা হয়েছে। এর ফলে, নেটওয়ার্কের গুণগত মান (QoS/QoE) হ্রাস পাচ্ছে এবং গ্রাহকরা ধীরগতির ইন্টারনেট, কল ড্রপ ও অন্যান্য সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।

সরকার আরও উল্লেখ করেছে যে, ইন্টারনেট সেবার উচ্চমূল্য এবং সংক্ষিপ্ত ডেটা ভ্যালিডিটি সমাজে সমালোচনার মুখে পড়েছে। মোবাইল অপারেটররা ইচ্ছাকৃতভাবে ইন্টারনেটের ব্যবহার সীমিত রেখে উচ্চমূল্য ধরে রাখছে, যা ইন্টারনেট সেবার প্রসারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।

স্পেকট্রামের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করা, ইন্টারনেটের খরচ হ্রাস করা এবং নেটওয়ার্ক পরিষেবা উন্নত করতে সরকার মোবাইল অপারেটরদের সঙ্গে আলোচনায় যেতে আগ্রহী। এজন্য, মোবাইল অপারেটররা যদি নেটওয়ার্ক উন্নয়ন ও প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে উচ্চমানের পরিষেবা প্রদানে প্রতিশ্রুতি দেয়, তাহলে স্পেকট্রাম মূল্যে ৫%-১০% পর্যন্ত ছাড় দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হতে পারে।

ডিবিটেক/বিএমটি