দেশের ক্লাউড সার্ভিস ইকোসিস্টেমে বিডিসিসিএল
বাংলাদেশ ডাটা সেন্টার কোম্পানি লিমিটেড (বিডিসিসিএল) নামটি কিছুটা অচেনা লাগতে পারে। কিন্তু অনেকেরই হয়তো জানা নেই, এটি বাংলাদেশ সরকারের "ডিজিটাল বাংলাদেশ" এবং "ভিশন-২০৪১" রূপপ্রকল্পের কৌশলগত অংশীদার একটি প্রতিষ্ঠান। বিডিসিসিএল তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এর অন্তর্ভুক্ত সরকারি মালিকানাধীন বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ এবং টিয়ার-৪ মানের অন্যতম ন্যাশনাল ডাটা সেন্টার এর পরিচালনা প্রতিষ্ঠান। ২০২০ সালের ১৬ই সেপ্টেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গাজীপুরের কালিয়াকৈরে অবস্থিত গভর্নমেন্ট ক্লাউড (জি-ক্লাউড) প্রযুক্তিসম্পন্ন এই ডাটা সেন্টারটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
বাংলাদেশে আমাজন, মাইক্রোসফট এবং গুগল এর মতো দাপুটে ক্লাউড সার্ভিস প্রোভাইডার এর আধিপত্যের মাঝেও ২০০০ বর্গমিটার এর এই ক্লাউড এবং কোলোকেশন ডাটা সেন্টারটি ধীরে ধীরে মাথা উঁচু করে দাঁড়াচ্ছে। তথ্য স্থানীয়করণ, নাগরিক এবং সরকার সম্পর্কিত তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা, এবং সরকারের ভিশন - ২০৪১ কে সামনে রেখে সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিরাপদ এবং অত্যাধুনিক ক্লাউড এবং কোলোকেশন সার্ভিস দেওয়াই বিডিসিসিএল এর মূল লক্ষ্য। তাছাড়া সরকারের কম্পিউটিং ইনফ্রাস্ট্রাকচার এবং তথ্য সংরক্ষণ সংক্রান্ত ব্যয়ে বৈদেশিক মুদ্রার ব্যবহার কমানোও ডাটা সেন্টারটি স্থাপনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
বাংলাদেশের প্রযুক্তির ইতিহাসে মাইলফলক এই ডাটা সেন্টারটিকে তথ্যের সুরক্ষিত কেন্দ্রীয় সংরক্ষণাগার হিসেবে প্রতিষ্ঠিতকরণ এবং তথ্য প্রক্রিয়াকরণের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং অন্যান্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তিকে সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত ব্যবহারকারীদের কাছে সহজলভ্য করে তোলা বিডিসিসিএল এর বাণিজ্যিক মিশনের একটি গুরুত্বপূর্ণ। অর্জনটি কষ্টসাধ্য হলেও লক্ষ্যে পৌঁছানোর প্রচেষ্টায় প্রতিষ্টানটি প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে।
আর তাই বিডিসিএল ক্লাউড প্রযুক্তির আধুনিকতা, উদ্ভাবন, অভিনবত্ব, তথ্যের নিরাপত্তা, এবং "মেড ইন বাংলাদেশ" বিষয়গুলোকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং সংস্থাগুলোর প্রয়োজন বিবেচনা করে বিডিসিসিএল এর “সার্ভিস ইনোভেশন সেন্টার” কোলোকেশন সার্ভিস এর পাশাপাশি "বাংলাদেশ গভর্নমেন্ট ক্লাউড" এবং “মেঘনাক্লাউড” নামে দুটি সর্বাধুনিক ক্লাউড সার্ভিস প্লাটফর্ম চালু করেছে। এই প্লাটফর্মগুলোতে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, প্রতিষ্ঠান, এবং সংস্থা থেকে শুরু করে বেসরকারি ছোট, মাঝারী, এবং বড় কোম্পানিগুলোর জন্যে রয়েছে সুলভ মূল্যের, উচ্চ প্রযুক্তির ক্লাউড সার্ভিস।
কেন ক্লাউড প্রযুক্তি?
ক্লাউড সার্ভিস কমার্শালাইজেশন এর শুরুর গল্পটি মোটেও সহজ ছিল না বরং অনেক টেকনোলজির চেয়ে তুলনামূলকভাবে কঠিন ছিল। এর সবচেয়ে বড় নাটকীয়তাটি ছিল এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে। শুরুতে এন্টারপ্রাইজ ব্যবহারকারীদের একটি বড় অংশই ক্লাউড সার্ভিস ব্যবহারের ক্ষেত্রে এক ধরণের আস্থাহীনতায় ছিল। মূলত: ডাটা প্রাইভেসী, ডাটা সিকিউরিটি, এবং কমপ্লায়েন্স এর মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোর কারণেই ব্যবহারকারীরা এই ইকোসিস্টেমটিকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করতো। কিন্তু গত এক দশকে টেকনোলজি কোম্পানী বিশেষ করে আমাজন, মাইক্রোসফট, গুগল, আইবিএম, ওরাকল, এবং আলিবাবার নিরলস প্রচেষ্টায় ক্লাউড প্রযুক্তির আধুনিকতা ও অভিনবত্বে আমূল পরিবর্তন এসেছে । গ্লোবাল ডিজিটাল ল্যান্ডস্কেপে ক্লাউড কম্পিউটিং আজ একটি "ট্রান্সফর্মেটিভ ফোর্স" হিসাবে প্রতিষ্টিত। শুধু তাই নয়, ক্লাউড কম্পিউটিং এখন সারা বিশ্বে সর্বজনবিদিত একটি ডি ফ্যাক্টো প্রযুক্তি।
গত কয়েক বছরে গোটা বিশ্বে ফাইন্যান্স, ম্যানুফ্যাকচারিং, হেলথ, লজিস্টিকস এবং এগ্রিকালচার ইন্ডাস্ট্রি থেকে শুরু করে ব্যক্তি পর্যায়ের ব্যবহারকারী, এবং সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে উল্যেখযোগ্য হারে ক্লাউড সার্ভিস ব্যবহার করার প্রবণতা বেড়েছে। কম্পিউটিং ইকোসিস্টেম হিসেবে এর বিশ্বাসযোগ্যতা এবং সুলভ মূল্য, সবধরণের ব্যবহারকারীদের কাছে ক্লাউড প্রযুক্তিকে জনপ্রিয় করে তুলেছে। লোকাল এবং জিওগ্রাফিকাল রিডান্ডেন্সি, ইলাস্টিক স্ক্যালিবিলিটি, ডিজাস্টার রিকভারি এবং বিজনেস কন্টিন্যুইটির মতো বৈশিষ্টগুলোর কারণে ক্লাউড প্রযুক্তি ব্যাবহারকারিদের আস্থা অর্জন করতে পেরেছে। সিকিউরিটি, যা এক সময় একটি বড় দুর্বলতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল আজকে তা ক্লাউড এর ইউএসপি (ইউনিক সেলিং পয়েন্ট) হিসেবে গণ্য করা হয়। নানাবিধ সিকিউরিটি মেকানিজম যেমন এনক্রিপশন, আইডেন্টিটি এবং এক্সেস ম্যানেজমেন্ট, ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক, নেটওয়ার্ক সেগমেন্টেশন, এবং ওয়েব এপ্লিকেশন ফায়ারওয়াল বর্তমানে ক্লাউড ইকোসিস্টেম এর ভ্যানগার্ড হিসেবে ব্যবহৃত হয় ।
তবে শুধু প্রযুক্তিগত দৃষ্টিকোণ থেকে ক্লাউড কম্পিউটিং ইকোসিস্টেম এর মূল্যায়ন করলে অনেক কিছু বাকি থেকে যাবে। আর্থিক এবং কৌশলগত দিক দিয়ে এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা রয়েছে। যেমন ক্লাউড ইকোসিস্টেমে একজন ব্যবহারকারীর ক্যাপেক্স (ক্যাপিটাল এক্সপেন্ডিচার) অন-প্রিমিজ (নিজস্ব) ডাটা সেন্টার এর ক্যাপেক্স এর তুলনায় অনেকটাই নগন্য যদি না ব্যবহারকারী কাস্টম হার্ডওয়্যার সার্ভিস ব্যবহার করে থাকে। তাছাড়া ক্লাউড সার্ভিস ব্যবহারকারীরা ইনফ্রাস্ট্রাকচার, প্লাটফর্ম, এবং সফটওয়্যার মেইনটেন্যান্স খরচের একটি পর্বতসম বোঝা এড়াতে পারে। ওপেক্স (অপারেশনাল এক্সপেন্ডিচার) এর ক্ষেত্রেও ক্লাউড মডেল একইরকম কার্যকরী। এর অন-ডিমান্ড স্ক্যাল্যাবিলিটি এবং এবং পে-এজ-ইউ-গো মডেল ক্লাউড ব্যবহারকারীদের অপারেশনাল ব্যায়কে নির্ধারিত বাজেটে রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।
প্রাতিষ্ঠানিক কৌশলগত দৃষ্টিকোণ থেকেও ক্লাউড প্রযুক্তির ব্যবহারিক গুরুত্ব অপরিসীম। প্রাইভেট কিংবা পাবলিক সেক্টর এর প্রতিষ্ঠানগুলো বর্তমানে কৌশলগত কারণে নিজস্ব ইনফ্রাস্ট্রাকচার, প্লাটফর্ম, এবং সফটওয়্যার তৈরীর চেয়ে ক্লাউড সার্ভিস ব্যবহারকে বেশি প্রাধান্য দেয়। অন-প্রিমিজ ইনফ্রাস্ট্রাকচার, প্লাটফর্ম, এবং সফটওয়্যার দক্ষতার সাথে পরিচালনার জন্যে ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানকে যথেষ্ট সময় এবং অর্থ ব্যয় করতে হয় যা ক্লাউড প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এড়ানো সম্ভব। আধুনিক এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এই পৃথিবীতে টিকে থাকার জন্য প্রতিষ্ঠানগুলো ইনফ্রাস্ট্রাকচার বা প্লাটফর্ম ম্যানেজমেন্ট এবং মেইনটেন্যান্স এর পেছনে সময় ব্যয় না করে সার্ভিস ইনোভেশন, এবং স্মার্ট স্ট্রাটেজি তৈরী করাকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে। প্রোভাইডার-ম্যানেজড সার্ভিস ক্লাউড প্রযুক্তির একটি "কুল ফ্যাক্টর" যা ক্লাউডকে ছোট, বড়, এবং মাঝারি কোম্পানি, সরকারি, আধা-সরকারি, এবং বেসরকারিসহ সবধরণের প্রতিষ্ঠানের কাছে জনপ্রিয় করেছে।
বিডিসিসিএল ক্লাউড ইকোসিস্টেম
ডিজিটাল ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানের প্রয়োজনীতার বাস্তবতায় একটি টিয়ার-৪ ন্যাশনাল ডাটা সেন্টার প্রতিষ্টার ধারণাটি আসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্মানিত উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এর কাছ থেকে। পরবর্তীতে কোলোকেশন ও ক্লাউড সার্ভিস নিয়ে গঠিত এই হাইব্রিড ডাটা সেন্টারটিকে পরবর্তী প্রজন্মের প্রযুক্তিতে রূপান্তরকরণের লক্ষে মাননীয় তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এর নেতৃত্বে চলতি বছরের শুরুর দিকে জেননেক্সট টেকনোলজির সাথে যৌথ উদ্যোগে বিডিসিসিএল চালু করে মেঘনাক্লাউড সার্ভিস প্লাটফর্ম যা দেশের প্রযুক্তির ইতিহাসে এক বিশাল অর্জন। দেশিয় প্রযুক্তিবিদদের নিজস্ব দক্ষতায় ওপেন সোর্স টেকনোলজি ব্যবহার করে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এই ক্লাউড সার্ভিস প্লাটফর্মটি তৈরী করা হয়। আবার এ বছরের এপ্রিল মাসে বিডিসিসিএল এর তত্বাবধানে বিখ্যাত প্রযুক্তি কোম্পানি ওরাকল এর সাথে যৌথ উদ্যোগে দেশি এবং আন্তর্জাতিক একদল দক্ষ প্রযুক্তিবিদ এর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় স্থাপন করা হয় বাংলাদেশ গভর্নমেন্ট ক্লাউড সার্ভিস প্লাটফর্ম। ওরাকলের স্বনামধন্য ডেডিকেটেড রিজিওন @কাস্টমার ক্লাউড (ডিআরসিসি) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরী করা হয় এই সার্ভিস প্লাটফর্মটি।
ভিশন - ২০৪১ কে সামনে রেখে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং অঙ্গসংস্থানগুলোর "মিশন ক্রিটিক্যাল" এপ্লিকেশনের প্রয়োজনীয়তাকে মাথায় রেখে এই দুটি জি-ক্লাউড প্রযুক্তি সমন্বয়ে গঠিত বিডিসিসিএল এর বর্তমান ক্লাউড সার্ভিস ইকোসিস্টেমটি। ইনফ্রাস্ট্রাকচার, প্লাটফর্ম, ডাটাবেজ, সিকিউরিটি, বিগ ডাটা, এনালাইটিক্স, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং ইন্টিগ্রেশন ক্যাটেগরিতে প্রায় ১০০টির মতো সার্ভিস নিয়ে গঠিত এই ক্লাউড ইকোসিস্টেমটির বর্তমান গ্রাহক মূলত সরকারের মন্ত্রণালয় এবং অঙ্গসংস্থান সমূহ। ফাইন্যান্স, ব্যাঙ্কিং, কৃষি, শিক্ষা, যোগাযোগসহ সব ধরণের কোম্পানি, প্রতিষ্ঠান, ও অন্যান্য সংস্থার ক্ল্যাসিক্যাল বা ডাটা-ইনটেনসিভ স্মার্ট এপ্লিকেশন, ডাটা এনালাইটিক্স, ইমেজ প্রসেসিং এবং এনালাইসিস, কনভার্সেশনাল এআই তৈরিতে বিডিসিসিএল ক্লাউড ইকোসিস্টেমটি বাংলাদেশে অপ্রতিদ্বন্দী।
বিডিসিসিএল এর ক্লাউড ইকোসিস্টেমটিতে চার ধরণের কম্পিউটিং সার্ভিস রয়েছে: ভিসিপিউইউ, ওসিপিইউ, ক্লাউড বেয়ার মেটাল সার্ভার, এবং জিপিইউ।
ব্যবহারকারীরা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী সার্ভিস ব্যবহার করে নিজেদের ভার্চুয়াল মেশিন প্রস্তুত করতে পারে। স্ট্যান্ডার্ড ভার্চুয়াল মেশিন থেকে শুরু করে হাই -পারফরমেন্স কম্পিউটিং মেশিন পর্যন্ত সবধরণের প্যাকেজের সুবিধা রয়েছে বিডিসিসিএল ক্লাউড এ। এছাড়াও রয়েছে ম্যানেজড কন্টেইনার সার্ভিস যা ক্লাউড নেটিভ এপ্লিকেশন ডেপ্লয়মেন্ট এর জন্য ব্যবহৃত হয়।
ডাটা সংরক্ষণের জন্যে রয়েছে ফাইল স্টোরেজ, ব্লক স্টোরেজ, এবং অবজেক্ট স্টোরেজ সার্ভিস। বিডিসিসিএল ক্লাউড ইকোসিস্টেম ব্লক স্টোরেজ এর প্রত্যেকটি হোস্ট এর জন্যে NVMe SSD এবং ননব্লককিং নেটওয়ার্ক কানেক্টিভিটি ব্যবহার করে যা স্টোরেজ এর ল্যাটেন্সি লো রাখে এবং IOPS বাড়ায়। ধারাবাহিক হাই-পারফর্মেন্স, ইন-ট্রানজিট TLS এনক্রিপশন, AES 256 এট-রেস্ট এনক্রিপশন, ডাইনামিক পারফরমেন্স স্কেলিং, এবং অটোমেটিক ইন্টেগ্রিটি মনিটরিং এর মতো অসাধারণ কিছু বৈশিষ্টের জন্য বিডিসিসিএল এর ব্লক স্টোরেজ অনন্য। তাছাড়া ব্লক স্টোরেজ এর রয়েছে যেকোনো ফরমেট এর ডাটা সংরক্ষণের ক্ষমতা এবং কাস্টোমাইজেবল ভলিউম পারফরমেন্স ইউনিট যা হাই-পারফরমেন্স এর জন্য অত্যন্ত কার্যকরী। আনস্ট্রাকচারড ডাটা সংরক্ষণের জন্যে রয়েছে অবজেক্ট স্টোরেজ সার্ভিস। বিডিসিসিএল এর ফাইল স্টোরেজ সার্ভিস কোনো ধরণের প্রভিশন ছাড়াই ১ কিলোবাইট থেকে ৮ এক্সাবাইট পর্যন্ত স্কেল-আপ হতে পারে।
ডেভেলপমেন্ট প্লাটফর্ম ব্যবহারকারীদের জন্যে ব্লকচেইন, ভিজ্যুয়াল বিল্ডার, এবং এবং এপেক্স প্লাটফর্ম এর মতো অত্যাধুনিক সার্ভিস রয়েছে। এনালাইটিক্স সল্যুশন ডেভেলপ করার জন্যে এন্টারপ্রাইজ এনালাইটিক্স প্লাটফর্ম, ইন্টিগ্রেশন এর জন্যে গোল্ডেনগেট এবং ডাটা ইন্টিগ্রেশন প্লাটফর্ম, এবং আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এজেন্ট তৈরীর জন্যে ল্যাঙ্গুয়েজ এআই, এবং এনোমালি ডিটেকশন এআই এর মতো অত্যাধুনিক প্লাটফর্ম সার্ভিস পাওয়া যায়। এছাড়া লোড ব্যালেন্সার, DNS ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট, ভিপিএন, ফাস্টকানেক্ট এবং আরো একগুচ্ছ নেটওয়ার্ক এবং কানেক্টিভিটি সার্ভিস অফার করা হয় যা ব্যবহারকারীরা লোকাল এবং রিমোট কমিউনিকেশন এর জন্য তাদের টেনেন্ট এ ব্যবহার করতে পারে। এছাড়াও ক্লাউড সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট এর জন্য বিডিসিসিএল সার্ভিস ইকোসিস্টেমটিতে রয়েছে এপ্লিকেশন পারফরমেন্স মনিটরিং, রিসোর্স ম্যানেজার, টেনেন্ট ম্যানেজার, লগ এনালাইটিক্স যা ব্যবহারকারীরা তাঁদের নিজস্ব টেনেন্ট মনিটরিং এবং ম্যানেজমেন্ট এর জন্যে ব্যবহার করতে পারে।
বিডিসিসিএল এর ডাটাবেজ সার্ভিসটি এক কথায় অনন্য। আধুনিক ডাটাবেজ সিস্টেম এর আঁতুরঘর ওরাকল এর ম্যানেজড “অটোনমাস ট্রানজাকশন প্রসেসিং” (এটিপি) ডাটাবেজ সার্ভিসটি এর মূল শক্তি। এন্টারপ্রাইজ গ্রেডের এই ক্লাউড সার্ভিসটির অসাধারণ কিছু বৈশিষ্ট রয়েছে। এটি সম্পূর্ণ অটোনমাস আর তাই কোনো ম্যানুয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ছাড়াই এতে স্কেল-আপ থেকে শুরু করে টিউনিং, ব্যাকআপ, রিপেয়ারিং, ফেইলওভার হয় স্বয়ংক্রিয়ভাবে । এটিপি রিলেশনাল এবং নন-রিলেশনাল দু ধরণের ডাটা মডেলই সাপোর্ট করে, রয়েছে মেশিন লার্নিং মডেল ইন্টিগ্রেশন এর সুবিধা, এবং এটিপিতে ওরাকল এপেক্স ব্যবহার করে এপ্লিকেশন ডেভেলপ করাও সম্ভব।
এটিপি ছাড়াও বিডিসিসিএল এর গ্রাহকদের জন্য রয়েছে বহুল পরিচিত এবং বহুল ব্যবহৃত MySQL এবং NoSQL ডাটাবেজ সার্ভিস। MySQL সার্ভিসটি সম্পূর্ণরূপে কাস্টমাইজেবল, আর তাই ব্যহারকারীরা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী ইনস্ট্যান্স স্পেসিফিকেশন নির্বাচন করতে পারেন, বিশেষত: ডাটাবেজ সার্ভার এর ওসিপিইউ, মেমরি, এবং স্টোরেজ গ্রাহকগণ তাঁদের পছন্দ অনুযায়ী নির্বাচন করতে পারেন। NoSQL বিডিসিসিএল এর একটি ম্যানেজড সার্ভিস। এটি বিগ ডাটা প্রযুক্তির অত্যন্ত সুপরিচিত একটি ডাটাবেজ যা মূলত আনস্ট্রাকচার্ড ডাটা ম্যানেজমেন্ট এবং ম্যানিপুলেশন এর জন্যে ব্যবহৃত হয়।
বিডিসিসিএল ক্লাউড সার্ভিস ইকোসিস্টেম এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো সিকিউরিটি । যেহেতু বিডিসিসিএল সার্ভিস প্লাটফর্মগুলো তৈরী করা হয়েছে সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, এবং বাংলাদেশি নাগরিকদের গোপনীয় ডাটা সংরক্ষণের জন্যে, বিডিসিসিএল এই দুটো প্লাটফর্মের নিরাপত্তার দিকটিতে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে। এছাড়াও ভার্চুয়াল মেশিন এবং টেনেন্ট এর নিরাপত্তায় গ্রাহকদের জন্য বিডিসিসিএল এর বিভিন্ন ধরণের সিকিউরিটি সার্ভিস প্যাকেজ রয়েছে। উল্লেখযোগ্য কিছু সার্ভিস এর মধ্যে রয়েছে আইডেন্টিটি এবং এক্সেস ম্যানেজমেন্ট, ভালনেরাবিলিটি স্ক্যানিং, DDoS প্রটেকশন, ওয়েব এপ্লিকেশন ফায়ারওয়াল, ইন্ট্রুডার ডিটেকশন, ডিপ প্যাকেট ইন্সপেকশন, Security Information and Event Management (SIEM), এবং Security Orchestration, Automation and Response (SOAR )। উল্ল্যেখ্য বাংলাদেশে একমাত্র বিডিসিসিএল এর ডিআরসিসিরই রয়েছে CSA STAR, SOC 2, SOC 3, ISO 27001, ISO 27017, এবং ISO 27018 আন্তর্জাতিক কমপ্লায়েন্স সার্টিফিকেট।
বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের প্রায় ৩০ টির ও বেশি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা বিডিসিসিএল এর বিভিন্ন ক্লাউড সার্ভিস ব্যবহার করছে। এছাড়াও বেশ কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও বিডিসিসিএল এর ক্লাউড সার্ভিস ব্যবহার করছে। আধুনিকতা, অভিনবত্ব, গ্রাহক-কেন্দ্রিক পলিসি এবং ইকোসিস্টেম ইন্টিগ্রেশন এর ক্ষমতা বিডিসিসিএল এর সার্ভিস ইকোসিস্টেমটিকে দিয়েছে অনন্যতা। পাবলিক এবং প্রাইভেট সেক্টর এর সব ধরণের প্রতিষ্ঠান এবং কোম্পানীসমূহের স্ট্যান্ডার্ড এপ্লিকেশন যেমন এন্টারপ্রাইজ রিসৌর্স প্ল্যানিং, কাস্টমার রিলেশনশিপ ম্যানেজমেন্ট, হিউমান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট থেকে শুরু করে অ্যাডভান্সড এপ্লিকেশন যেমন ডাটা লেক, ডাটা ওয়্যারহাউজিং, ডেস্ক্রিপটিভ, প্রেডিক্টিভ এবং প্রেস্ক্রিটিভ এনালাইটিক্স, এবং কনভার্সেশনাল ইন্টেলিজেন্স (চ্যাটবট) এর মতো ইউজ কেস বাস্তবায়নের এর জন্যে বিডিসিসিএল সার্ভিস ইকোসিস্টেমটি অসাধারণ এবং অনন্য। উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে একটি প্রযুক্তি এবং জ্ঞান নির্ভর বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে সরকারের "ভিশন - ২০৪১" (স্মার্ট গভর্নমেন্ট, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট সোসাইটি, এবং স্মার্ট সিটিজেন) এর অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিডিসিসিএল নিরলস কাজ করে যাবে। সরকারের “মেড ইন বাংলাদেশ” স্লোগানকে সামনে রেখে দেশীয় ক্লাউড প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও এর ব্যবহার ত্বরান্বিত করতে বিডিসিসিএল এর প্রচেষ্টা অব্যহত থাকবে। গ্রহণযোগ্য এবং টেকসই ক্লাউড-ফার্স্ট কৌশল প্রণয়ন করে বিডিসিসিএল সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, এবং ছোট, বড়, এবং মাঝারি কোম্পানিগুলোতে সাশ্রয়ী এবং বিশ্বস্ত সেবা প্রদানের মাধ্যমে ক্লাউড এর ব্যবহার সম্পসারণ করবে। বাংলাদেশে তথ্যের নিরাপত্তা, গোপনীয়তা, এবং আগামী প্রজন্মের উদ্ভাবনী প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করাই বিডিসিসিএল এর মূল লক্ষ্য।