স্বর্ণ জয়ী দুই রোবো-কন্যার উপাখ্যান

২৬ জানুয়ারি, ২০২৫  
স্বর্ণ জয়ী দুই রোবো-কন্যার উপাখ্যান

“পৃথিবীটা নাকি ছোট হতে হতে, স্যাটেলাইট আর ক্যাব্‌লের হাতে, ড্রয়িংরুমে রাখা বোকা বাক্সতে বন্দী.. ঘরে বসে সারা দুনিয়ার সাথে, যোগাযোগ আজ হাতের মুঠোতে, ঘুঁচে গেছে দেশ কাল সীমানার গণ্ডী”।  

‘মাহিনের ঘোড়াগুলি’ ব্যান্ডদলের ‘আবার বছর কুড়ি পরে’ অ্যালবামের গানে গানে রোবটকে মুঠোবন্দি করার আকুলতায় যেন নতুন অধ্যায় রচনা করলো উত্তর প্রজন্ম। বিশ্বকে তাক লাগিয়ে ‘তার চেয়ে এসো খোলা জানালায়, পথ ভুল করে কোন রাস্তায়, হয়ত পেলেও পেতে পারি আরো সঙ্গী’ গাইতে গাইতে সৃজনশীলতায় জয় করছে বিশ্ব। মানবকল্যাণে রোবট হয়ে উঠছে ডিজিটাল দাস। আর ক’দিন বাদেই হয়তো উপকূলীয় বর্জ্য অপসারণ করে তা পুণঃব্যবহারযোগ্য করে তুলবে মেইড ইন বাংলাদেশ বট। তারই একটি রিহার্সেল যেন হয়ে গেলো দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে।  আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডের ২৬তম আসরে সেই চমক দেখালো বাংলাদেশের দুই কন্যা। নামিয়া রওজাত নুবালা ও আরিয়েত্তি ইসলাম। তাদের হাতেই বিশ্বমঞ্চে ফের পত-পত উড়লো লাল-সবুজের পতাকা।

প্রথম থেকেই এই মিশনের সিপাহশালার ড. লাফিফা জামাল। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবোটিকস এন্ড মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডের (আইআরও) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। বিচারকের দায়িত্ব পালন করছেন গত সাত বছর ধরে। এবরাও তিনি ছিলেন ৪ সদস্যের হেড জাজদের অন্যতম।

আসরের ৪টি ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ দল অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে ক্রিয়েটিভ মুভি ক্যাটাগরিতে বাংলা-দেশের ছেলে-মেয়েরা গত কয়েক বছর ধরে খুব ভালো করছে। এই ক্যাটাগরিতে প্রতিযোগিতা শুরুর সময়ে দেয়া সাবথিমের উপর ভিত্তি করে প্রতিযোগিতাস্থলে বসে রোবট বানিয়ে গল্প তৈরি, শ্যুটিং করা এবং অডিও ও ভিডিও এডিটিং করে একটি দুই মিনিটের মুভি তৈরি করতে হয়। প্রপস, এডিটিং, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক সবই করতে হয় বেধে দেয়া ৫ ঘণ্টা সময়ের মধ্যেই। রোবট তৈরির কারিগরি জ্ঞানের পাশাপাশি মুভি তৈরির সৃজনশীলতা – দুই এর সমন্বয়ে সর্বশ্রেষ্ঠ দল বিজয়ী হয়। আর ফিজিক্যাল কম্পিউটিং প্রতিযোগিতায় সাবথিমের উপর ভিত্তি করে একটি এনিমেশন স্টোরি তৈরি এবং রোবটকে হাতেকলমে তৈরি করে প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। এক্ষেত্রে রোবট ও এনিমেশন স্টোরি উভয়ের মধ্যে সিংক্রোনাইজেশন থাকতে হয়। এই বাচ্চা ছেলে-মেয়েরা দারুণ নিষ্ঠা আর আমোদের সঙ্গেই কিন্তু সব কাজ করে। বাংলাদেশ দলের সর্বকনিষ্ঠ প্রতিযোগী জুনিয়র গ্রুপের স্বর্ণজয়ী আরিয়েত্তি সকল বিচারক এবং রেফারিদের নজর কেড়ে নিয়েছে। অনেকেই কাজের ফাঁকে ফাঁকে আরিয়েত্তির রোবটের ছবি তুলছিলেন। অর্গানাইজিং কমিটির প্রেসিডেন্টও প্রতিযোগিতা শেষে বাংলাদেশ দলের ধারবাহিক উন্নতির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।        ড. লাফিফা জামাল, সদস্য, আইআরও

আমাদের দুই স্বর্ণ-কন্যা

আরিয়েত্তি ও নুবালা। তাদের নৈপুণ্যে ছোট-বড় দুই ক্যাটাগরিতেই স্বর্ণ জিতেছে বাংলাদেশ। এদের মধ্যে আরিয়েত্তি পড়ে ক্লাস থ্রি-তে। আর নুবালা গ্রেড ৯-এ। দু’জনেই পড়ালেখাতেও টপার। এ যেন- যে ‘রাঁধে সে চুল বাঁধে’ প্রবাদের সাক্ষাৎ কন্যা। জীবনের প্রথম প্রহরে নুবালা জ্বলছে নেবুলা’র মতো। আর আরিয়েত্তি যেন জাপানি কমিক স্ট্রিপ অ্যানিমেশন মুভির বাস্তব নায়িকা। দু’জনের জীবনেই করোনা এসেছিলো যেন আশীর্বাদ হয়ে। ওই সময়টাতে বাবা-মায়ের সান্নিধ্যে তারা গড়ে তোলেন ভিন্ন এক সাম্রাজ্য। আর এই সাম্রাজ্যে মুকুট গেঁথে দিয়েছে বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের মিশাল ইসলাম। দলের এই কোচের প্রশংশা ঝরলো বিজয়ীদের কণ্ঠে। কথা হয় মিশালের সঙ্গে। জানতে চাইলাম এই সফলতার গোপন রহস্য।

বাচ্চাদের মন কাদামাটির মত। যেভাবে মাটির আকৃতি দেয়া হয় ওরা সেভাবেই এগিয়ে যায়। প্রতিবছর বাংলাদেশ দল যে সাফল্য পায় সেটিই পরের বছরের বাচ্চাদের জন্য আরও অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মঞ্চে যেসকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয় তার সবগুলো নিয়েই হাতেকলমে আমাদের বাচ্চাদের দীর্ঘ সময় ধরে প্রস্তুত করে থাকি। হাই পারফরম্যান্স ক্যাম্পগুলোতে রোবটিক্স চর্চার পাশাপাশি বাচ্চারা কোচের সাথে বিশ্বাস ও আন্তরিকতার একটা বন্ধন তৈরি করে ফেলে। এজন্য প্রতিবছরই সব বাঁধা আমরা পেরিয়ে এগিয়ে যেতে পারি একসাথে। আমাদের সবার মনে একটাই বিশ্বাস তখন কাজ করে যে বাংলাদেশের জন্য ভালো কিছু করার চেষ্টা রাখতে হবে। সেটাই আমাদের জয়ের বন্দরে পৌঁছানোর মন্ত্র। আমাদের দেশ এবছর বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে দারুন সাফল্য এনেছে। যেমন ক্রিয়েটিভ মুভি ক্যাটাগরিতে গোল্ড, সিলভার, ব্রোঞ্জ সবই বাংলাদেশ দল পেয়েছে। এই ক্রিয়েটিভ মুভি ক্যাটাগরি সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং একটি ক্যাটাগরি। অন্য দেশেরাও আমাদের এই সাফল্য দেখে আমাদের ভীষণ বাহবা দিয়েছে। আর একমাত্র বাংলাদেশ দলেরই প্রতিযোগী অনুপাতে মেডেল অর্জনের হার সবচেয়ে বেশি।  মিশাল ইসলাম, কোচ

চলুন, ঢুঁ মেরে আসা যাক স্বর্ণজয়ী দুই রোবো-কন্যার দুনিয়ায়।

সিরিয়াসলি ক্লু-লেস  নুবালা

‘আলো-হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী’ হয়ে পথ চলছে বাংলাদেশের রোবটিয়ান দল সিরিয়াসলি ক্লু-লেস দলের সদস্য নামিয়া রওজাত নুবালা। বাবার আগ্রহে আর মায়ের পরিচর্যায় এরই মধ্যে বিশ্বে ঝলক দেখিয়েছে। এর পেছেনের ক্লু খুঁজতে গিয়ে জানা গেলো- বই, কোডিং আর ম্যাথে বুঁদ হয়ে থাকে মোঃ আশরাফুল আমিন ও  আফসানা আশিকা দম্পতির একমাত্র কন্যা। এরই মধ্যে বাবা মায়ের সঙ্গে ঘুরেছেন ১৯টি দেশ। লক্ষ্য এখন এমআইটি-তে পড়া। আর এমন একটি এআই নির্ভর রোবট তৈরি করা যেটির দাম থাকবে হাতের নাগালে আর সমস্যার সর্বোচ্চ সমাধান দেবে সুবিধাবঞ্চিতদের। ছোট বেলা থেকেই জট খুলতে মজা পায় নুবালা। করোনায় ‘গো অ্যাজ ইউ লার্ন’ মেথডে শিখে ফেলে প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ জাভা ও পাইথন। রোবট নিয়ে আগ্রহী হন গত বছরে ঢাবিতে অনুষ্ঠিত বিডিওএসএন এর ওয়ার্কশপ থেকে। এবারের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে সঙ্গে নিয়েছিলেন ১০টি রোবট বানানোর মতো সরঞ্জাম। সেসব দিয়েই প্রতিযোগিতায় দেয়া তিনটি থিমের মধ্যে সমুদ্র সৈকত পরিচ্ছন্ন করার কাজে ব্যবহারের জন্য ৫টি রোবট বানিয়েছে। যেগুলো সমুদ্রতটের ময়লা সংগ্রহ, অতিরিক্ত বালি অপসারণ, কেমিক্যাল প্রস্তুত করে সৈকত পরিচ্ছন করে; একইসঙ্গে কাগজ, প্লাস্টিক কাচ চিনে তা আলাদা করে নির্দিষট বিনে রাখতে সক্ষম এবং সেগুলো রিসাইকেল করে মোল্ডে পরিণত করতে পারে। ফিজিক্যাল রোবটের এমন মুন্সিয়ানা দেখিয়ে তার তৈরি ভিডিওটি তাক লাগিয়েছে বিচারকদের। মুভিতে সে দেখিয়েছে, কিভাবে অপরিচ্ছন্ন বুসানের সৈকতে পর্যটকের ভীড়ে ঘুরতে শুরু করে অর্থনীতির চাকা। অবশ্য নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মুভি বানাতে গিয়ে বিপত্তির কথা তুলে ধরে নুবালা বললো- আশা করিনি গোল্ড পাবো। এডিটিং সফটওয়্যার কাজ করছিলো না।  আরেকটি সফটওয়্যার ডাউনলোড করে এডিট করি। তখন সেটিও কাজ করে না। পরে ফোনের অ্যাপ দিয়ে এডিট করি। অতিরিক্ত এক ঘণ্টার মধ্যে হঠাৎ করে দেখি ক্যাপকাট ও দ্য ভিঞ্চি সফটওয়্যার কাজ করছে না। তবে শেষ পর্যন্ত সক্ষম হলেও ফলাফলের সময় আমি একটু সন্দিগ্ধ ছিলাম। যখন নাম ডাকে তখন থিতু হয়েছিলাম। টিমমেট প্রিয়ন্তি ধাক্কা দিয়ে জানালো তুমি স্বর্ণপদক জিতেছো। প্রথমে আমি এটি বিশ্বাসই করতে পারিনি, এবং মুহূর্তেই আমার মধ্যে গর্ব, উত্তেজনা এবং কৃতজ্ঞতার ঢেউ বয়ে যায়।

স্বর্ণপদক জিতেই নুবালা এখন ব্যস্ত গণিতের যুদ্ধে। রিজওনাল ম্যাথ অলিম্পিয়াড হয়ে আগামী ৭-৮ ফেব্রুয়িরি অনুষ্ঠেয় বৈশ্বিক আসরে নতুন পালক যুক্ত করতে চায়। আর একাধারে সব চাপের মধ্যে মনোযোগ ধরে রাখা এবং দক্ষতার সাথে কাজ করার পাশাপাশি বিজয়ের জন্য সময়মতো একটি বিষয়ে ফোকাস করার পরামর্শ দিলেন আমাদের এই রোবো নিহারীকা।  এর আগেও ২০১৯ সালে, চীনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক আলোহায় দ্বিতীয় রানার-আপ ট্রফি জিতে নামিয়া। গতবছরেও থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড স্কলারস কাপ গ্লোবাল রাউন্ডে অংশগ্রহণ করে এবং ৫টি স্বর্ণপদক সহ ৮টি পদক জিতে। একই বছরের নভেম্বরে, নামিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ড স্কলারস কাপ ‘টুর্নামেন্ট অফ চ্যাম্পিয়নস’-এ অংশগ্রহণ করে ৩টি স্বর্ণ এবং ১টি রৌপ্য পদক জিতে।

লাবণ্যময় আরিয়েত্তি

দলের নাম আনড়ি হলেও সফটওয়্যার প্রকৌশলী মোঃ শামীম রেজা ও ঔপন্যাসিক কামরুন্নাহার দীপার প্রথম সন্তান  আরিয়েত্তি ইসলাম বিশ্বমঞ্চে দেখিয়েছে তার লাবণ্যময় প্রভা। ৮ বছরের জীবনে প্রথম বিদেশ সফরে; প্রতিযোগিতার প্রশ্নপত্রে লেখা ছিলো ছোট্ট একটা প্যারাগ্রাফ। যেখানে নির্দেশনা দেয়া ছিলো বুসানের মেরিন সিটির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া একটা নদীর পানির কোয়ালিটি ইমপ্রুভ করতে হবে। নির্দেশনা অনুযায়ী আয়েত্তি এমন একটি ইন্টারঅ্যাক্টিভ রোবটটি কার বানায় যার রয়েছে একটি ক্রেনের মতো হাত। যেটি নদীর পানিতে থাকা লোহা, নিকেল, কোবাল্ট, ইস্পাত, এদের সঙ্কর ধাতু এবং বিরল মৃত্তিকা ধাতু তথা ফেরোচৌম্বকীয় পদার্থ সনাক্ত করতে এবং সংগ্রহ করতে সক্ষম। নদীর পানি পরিস্কার কাজের পাশাপাশি স্মার্ট প্রোগামিংয়ের মাধ্যমে সংগৃহীত অচৌম্বকীয় পদার্থের ওজন মেপে সেগুলো নির্দিষ্ট বিনে রাখতে পারে। এবারের আসরের স্বর্ণজয়ী এই রোবো কন্যা আগামী  এমন একটি রোবট বানাতে চায় যেটি মানুষের উপকার করবে চ্যাটজিপিটির মতো।

কেমন সেটি জানতে চাইলে বললো- মানুষের উপকারে আসবে এমন রোবট বানানোই আমার লক্ষ্য। মূল লক্ষ্য হলো সমস্যার সমাধান করা এবং জীবনকে সহজতর করা। তাছাড়া, রোবটটি প্রতিযোগিতার জন্য নতুন নতুন ধারণা ও প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নিজের দক্ষতা প্রমাণ করার লক্ষ্যেও তৈরি করতে চাই। দীর্ঘমেয়াদে, এটি বাস্তব জীবনের সমস্যাগুলো সমাধানে কাজ করতে পারবে। তাছাড়া আমি ভবিষ্যতে ছোটদের জন্য বিশেষ রোবট বানাতে চাই। অবসরে কি করো প্রশ্নের উত্তরে বললো- রোবটিক্সের পাশাপাশি আমি মার্শাল আর্ট, অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট, ক্রাফটিং করি। ঘুরতে পছন্দ করি আর ছোটভাইয়ের সাথে খেলা করি। কিছুদিনের মধ্যেই নাকি ব্লাকবেল্টও পেতে যাচ্ছে সে। আরিয়েত্তি তার নামের মতোই ক্র্যাফিটিংয়ে বেশ পারদর্শী। আবার নিজে পুচকে হয়েও ছোটদের জন্য গল্প লিখে। এবারের বইমেলাতে কাকাতুয়া প্রকাশনী থেকে প্রকাশ পাচ্ছে ‘আরিয়েত্তির ছোট্ট ছোট্ট গল্পেরা’।

২০২৫ এ লাল-সবুজের বিজয়ী যারা

এ বছর বাংলাদেশ থেকে মোট ১০ সদস্যের দল আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে অংশ নেয়। এদের মধ্যে ক্রিয়েটিভ ক্যাটাগরির জুনিয়র গ্রুপে আরিয়েত্তি ইসলাম এবং ক্রিয়েটিভ মুভি ক্যাটাগরির সিনিয়র গ্রুপে স্বর্ণপদক পেয়েছে হার্ডকো ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিক্ষার্থী নামিয়া রওজাত নুবালা। স্বর্ণজয়ী  নুবালা আবার ফিজিক্যাল কম্পিউটিংয়ে  বড়দের সিরিয়াসলি ক্লুলেস দলের সদস্য হিসেবে ব্রোঞ্জ এবং ছোটদের গ্রুপে মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থী আনাড়ি দলের হয়ে আরিয়েত্তি জিতেছেন আরেকটি রৌপ্যপদক।

বাংলাদেশ দল থেকে রৌপ্যজয়ী অন্য বিজয়ীরা হলেন- ক্রিয়েটিভ মুভি ক্যাটাগরির সিনিয়র গ্রুপের জিরোথ দলের নুসাইবা তাজরিন, টিম শিফু দলের প্রিয়ন্তী দাস এবং ক্রিয়েটিভ ক্যাটাগরির সিনিয়র গ্রুপে দলীয়ভাবে স্যাফ.এআই দলের হাসিন ইশরাক চৌধুরী, এ জেড এম ইমতেনান কবির এবং আবরার রৌপ্যপদক জিতেছে। এছাড়াও ব্রোঞ্জপদক জিতেছে ফিজিক্যাল কম্পিউটিং জুনিয়র গ্রুপের দ্যা স্ক্রু লুজ দলের নাফিয়া বাসার, একই ক্যাটাগরির সিনিয়র গ্রুপের জিরোথ দলের ওয়াইডাব্লিউসিএ উচ্চ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নুসাইবা তাজরিন এবং ক্রিয়েটিভ মুভি সিনিয়র গ্রুপে দলীয়ভাবে স্যাফ.এআই দলের ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের শিক্ষার্থী হাসিন ইশরাক চৌধুরী তাহা, এ জেড এম ইমতেনান কবির এবং আবরার আবির।  ১০ জনের মধ্যে ৮জনই পেয়েছেন পদক।

রোবো অলিম্পিয়াডে শীর্ষে বাংলাদেশ

বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের হাত ধরে ২০১৮ সাল থেকে রোবট অলিম্পিয়াডে চমক দেখাতে শুরু করেছে বাংলাদেশের ছেলে-মেয়েরা। প্রথমবারেই যোগ দিয়ে ম্যানিলা জয় করে বাংলাদেশের রোবোটাইগার্স। ‘ক্রিয়েটিভ ক্যাটাগরি’ জুনিয়র গ্রুপে স্বর্ণজয় করে চিটাগাং গ্রামার স্কুলের (ঢাকা) কাজী মোস্তাহিদ লাবিব, তাফসির তাহরীম এবং ম্যাপল লিফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের মো. মেহের মাহমুদ। এরপর ২১তম আসরে অংশ নিয়ে ১টি স্বর্ণ, ২টি রোপ্য ও ৬টি ব্রোঞ্জ মিলিয়ে ১০টি পদক; ২২তম আসরে ২টি করে স্বর্ণ ও রৌপ্য সহ ১৫টি; ২৩তম আসরে সর্বোচ্চ ৪টি স্বর্ণসহ ১৫টি পদক নিজেদের ঝুলিতে পুরেছে বাংলাদেশ। এছাড়াও ২৪তম আসরে ১টি স্বর্ণ ও ৬টি রৌপ্যসহ ১৪টি; ২৫তম-তে ৩টি স্বর্ণ ও ৬টি রোপ্যসহ ১৫টি পদক পদক ঘরে তুলেছে আমাদের খুদে রোবটিয়ানরা। সবমিলিয়ে ৭টি আসরে ১৪টি স্বর্ণ, ২২টি রৌপ্য এবং ২৮টি ব্রোঞ্জসহ মোট ৮৩টি সম্মাননা পেয়েছে রোবো টাইগার্সরা। আর এবারের আসরে একমাত্র বাংলাদেশ দলেরই প্রতিযোগী অনুপাতে মেডেল অর্জনের হার সবচেয়ে বেশী। এই আসরে অংশ নেয় ২৬টি দেশের প্রতিযোগী। এরমধ্যে ১৩টি দেশ কোনো মেডেল পায়নি। অথচ বাংলাদেশ থেকে অংশ নিয়ে টেকনিক্যাল কিংবা হাইলি রিকমেন্ডে নয়; জিতেছে স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ।