নির্বাচনে এআই অপপ্রচার ও ড্রোনের ব্যবহার নিষিদ্ধ

২০ অক্টোবর, ২০২৫ ২০:০৮  
নির্বাচনে এআই অপপ্রচার ও ড্রোনের ব্যবহার নিষিদ্ধ

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে  নির্বাচনে এআই অপপ্রচার ও ড্রোন ব্যবহার নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা ও গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে ইসির আনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত সভার কার্যপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

২০ অক্টোবর, সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে বসে নির্বাচন কমিশন।  বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। বৈঠকে চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি, মহাপুলিশ পরিদর্শক বাহারুল আলম, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), কোস্টগার্ড, আনসার, র‌্যাব, এনএসআই, ডিজিএফআই, এনটিএমসি, সিআইডি এবং স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি)-এর ঊর্ধ্বতন প্রতিনিধি উপস্থিত রয়েছেন।

ইসির নির্বাচন পরিচালনা-২ অধিশাখার উপসচিব মনির হোসেন স্বাক্ষরিত কার্যপত্রে বলা হয়েছে, ড্রোন একটি আধুনিক প্রযুক্তি হলেও নির্বাচনকালীন সময়ে এর ব্যবহার নানা ধরনের ঝুঁকি ও অসুবিধা তৈরি করতে পারে। ড্রোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করার চারটি প্রধান কারণ হলো— গোপনীয়তা লঙ্ঘন, নিরাপত্তার ঝুঁকি, আইন ও বিধি লঙ্ঘন এবং ব্যক্তিগত তথ্য চুরি। ড্রোন ব্যবহার করে ভোটারদের ব্যক্তিগত স্থান, অফিস, কিংবা ভোটকক্ষ পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব যা ভোটের গোপনীয়তা রক্ষার অধিকারকে লঙ্ঘন করতে পারে। অননুমোদিত ড্রোন ব্যবহার করে বিপজ্জনক বস্তু বা বিস্ফোরক বহন করা সম্ভব যা ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা ও জনসমাগমের ওপর হামলার ঝুঁকি তৈরি করে। ড্রোন পরিচালনায় কিছু আইনগত নিয়ম রয়েছে, কিন্তু অনেকেই তা অনুসরণ করে না। ফলে নির্বাচনি এলাকায় অনিয়ন্ত্রিতভাবে ড্রোন উড্ডয়ন আইনশৃঙ্খলার জন্য হুমকি হতে পারে। এছাড়া ড্রোনের মাধ্যমে ভোটদানের ছবি বা ভিডিও ধারণ করে তা অপব্যবহার করার সম্ভাবনা থাকে যা নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করতে পারে।

ইসি’র সিদ্ধিান্ত অনুযায়ী, নির্বাচনকালীন পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, সংখ্যালঘু নিরাপত্তা, বিদেশি পর্যবেক্ষকদের সহযোগিতা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এআই প্রযুক্তিনির্ভর ভুল তথ্য প্রচার রোধের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিশেষ কর্মপন্থা নির্ধারণ করা হচ্ছে।

এছাড়াও পোস্টাল ভোটিং ব্যবস্থাপনা : প্রবাসী ও পোস্টাল ব্যালটে ভোটদানে যোগ্যদের জন্য পোস্টাল ব্যালট পেপার নিরাপত্তার সঙ্গে ডাকবিভাগ থেকে সংশ্লিষ্ট দেশে প্রেরণ এবং ফেরত আসার সময় নিরবিচ্ছিন্ন নিরাপত্তা নিশ্চিত করে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে প্রেরণ করতে হবে।

ইসি জানিয়েছে, ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ, আনসার, গ্রাম পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড, আমর্ড পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। ভোটগ্রহণ শেষে সহিংসতা বা বিশৃঙ্খলা রোধে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন থাকবে। এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও নির্বাচনী তদন্ত কমিটি সংক্ষিপ্ত বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।

নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মূলত তিনটি ধাপে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।

তফসিল ঘোষণার পূর্বে : স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে চিহ্নিত অপরাধী, সন্ত্রাসী ও নির্বাচনে বিঘ্ন সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এই ধাপে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া আবশ্যক।

তফসিল ঘোষণা থেকে নির্বাচন পর্যন্ত : অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। সকল প্রার্থীর নির্বিঘ্নে প্রচার-প্রচারণা এবং ভোটারদের নির্ভয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা ও সার্বিক শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার্থে পুলিশ, আনসার ও গ্রাম পুলিশের পাশাপাশি মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে র‍্যাব, পুলিশ, বিজিবি, আমর্ড পুলিশ, ব্যাটালিয়ন আনসার, কোস্টগার্ড এবং ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সশস্ত্র বাহিনী নিয়োজিত থাকবে।

নির্বাচন পরবর্তী কার্যক্রম : নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা রোধে নির্বাচনের পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা বা ২ দিন পর্যন্ত স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতার জন্য মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স নিয়োজিত থাকবে। এই সময়ে আইনগত নির্দেশনা প্রদানের জন্য এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট এবং সংক্ষিপ্ত বিচার কাজের জন্য জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটি দায়িত্ব পালন করবে।