বাংলাদেশকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করতে চায় স্টারলিংক

সিঙ্গাপুরকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করে ভুটানসহ পার্শ্ববর্তী দেশে ইন্টারনেট সেবা দিতে চায় স্পেসএক্সের উপগ্রহ-ভিত্তিক ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক স্টারলিংক। এ লক্ষ্যে গাজীপুরে হাইটেক পার্কে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গ্রাউন্ড স্টেশন বসানোর পরিকল্পনা প্রতিষ্ঠানটির। এ নিয়ে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানির সঙ্গে আলাপ সারার পাশাপাশি অনুমতি পেতে গত ১৩ আগস্ট আনুষ্ঠানিক অনুমোদন চেয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) চিঠিও দিয়েছে।
চিঠিতে, বাংলাদেশকে হাব করে অন্য দেশে ডাটা পরিবহনের অনুমোদন চেয়ে সেখানে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। স্টারলিংকের এই আবেদন নিয়ে গত ২৭ আগস্ট কমিশন সভায় আলোচনাও হয়েছে। তবে বৈঠকে এ বিষয়ে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
কমিশনের ২৯৮তম বৈঠকে স্টারলিংক সার্ভিসেস বাংলাদেশ লিমিটেড এর পারিচালন কার্যক্রম পরিদর্শন বিষয়ক প্রাথমিক প্রতিবেদন পেশ করেন ইএন্ডও বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শফিউল আজম পারভেজ। তিনি জানান, লাইসেন্সের অনুচ্ছেদ ৫.১ অনুযায়ী স্টারলিংকের বাংলাদেশে গেটওয়ে স্থাপনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে গেটওয়ে পরিদর্শনের বাধ্যবাধকতা নেই। কিন্তু বিটিআরসি’র অন্যান্য লাইসেন্সিং কার্যক্রম শুরুর আগে অপারেশনাল কার্যক্রম পরিদর্শনের নজির রয়েছে। সেই সূত্রধরে গত ১০ আগস্ট ই-মেইলে স্টারলিংক ঢাকার কালিকৈরে ২টি এবং রাজশাহী ও যশোরে একটি করে মোট ৪টি গেটওয়ে স্থাপন করেছে বলে জানিয়েছে। এই মেইল পেয়ে গত ১৩ আগস্ট স্টারলিংককে স্থাপনাসমূহ পরিদর্শনের চিঠি দেয়া হয়। এরপর ১৬ আগস্ট বিটিআরসি থেকে পরিদর্শন আদেশ জারি করা হয়।
পরিদর্শন শেষে দেয়া মতামত অনুযায়ী, প্রতিটি স্থাপনাই ভাড়াই পারিচালিত হচ্ছে। কোথাও স্টারলিংক সার্ভিস লিমিটেডের কোনো প্রতিনিধি পাওয়া যায়নি। এমনটি স্থানীয় অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করে কোনো কারিগরি ব্যক্তির অথবা পরিচালরনার বিষয়ে কোনো তথ্য সংগ্রহ করা যায়নি।
এদিকে এনটিএমসি হতে গত ৩০ জুলাই জননিরাপত্তা বিভাগে পাঠানো চিঠি অনুযায়ী, স্টারলিংক বাংলাদেশে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরুর আগেই তাদের বাংলাদেশে স্থাপিত গেটওয়েতে ডিটিআই স্থাপন সহ এলও রিকয়ারমেন্ট নিশ্চিত করেছে।
এমন পরিস্থিতিতে স্টারলিংক এখন বাংলাদেশের গেটওয়ে দিয়ে ভুটানসহ পার্শ্ববর্তী দেশে ইন্টারনেট সেবা দিতে চায়। সম্প্রতি বিটিআরসিকে চিঠি দিয়ে অনুমোদন চেয়েছে। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে ভুটানের গ্রাহকদের সিঙ্গাপুরের গ্রাউন্ড স্টেশনের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছে স্টারলিংক, যা ব্যয়বহুল আবার ল্যাটেন্সি অনেক বেশি। তাই সামিট, ফাইবার অ্যাট হোম ও বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি থেকে আইপিএলসি এবং আনফিল্টারড আইপি ব্যান্ডউইথ কিনে বাংলাদেশের গেটওয়ে থেকে সিঙ্গাপুর ও ওমান পপে ডাটা পরিবহন করার অনুমতি চেয়েছে স্টারলিংক। বিদেশি গ্রাহকদের জন্য যে আন্তর্জাতিক লিংকটি যাবে, স্টারলিংক চায় সেখানে সরকার কোনো ফিল্টার বা ব্লক করবে না। এক দেশের ট্রাফিক যখন অন্য কোনো দেশের মধ্য দিয়ে ভিন্ন কোনো দেশে যায়, তা সাধারণত মধ্যবর্তী দেশের ফিল্টারিংয়ের আওতায় থাকে না। বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের সব ইন্টারনেট ট্রাফিক সিঙ্গাপুর কিংবা ভারতের মধ্য দিয়ে গেলেও আন্তর্জাতিক প্রাক্টিস অনুযায়ী বাংলাদেশের ডাটা ওই সব দেশের ফিল্টারিংয়ের আওতার বাইরে রয়েছে।
তবে, বাংলাদেশি ব্যবহারকারীদের ইন্টারনেট সেবা স্থানীয় আইআইজি হয়ে যাবে এবং আইন অনুযায়ী সব ধরনের নিরাপত্তা, ফিল্টারিং ও কনটেন্ট ব্লকিং মানা হবে। আইপিএলসি দুটি দেশকে যুক্তকারী আন্তর্জাতিক ডাটা পরিবহন ব্যবস্থা আর আনফিল্টারড আইপি হচ্ছে ফিল্টারবিহীন আইপি ব্লক, যা ব্যবহার করে ডেটা ব্লকিং বা লোকাল নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ ছাড়া সরাসরি আন্তর্জাতিক লিংকে পাঠানো যায়।
এ বিষয়ে ফাইবার অ্যাট হোমের চিফ ইনফরমেশন অফিসার সুমন আহমেদ সাবির বলেছেন, আমাদের পাশের দেশগুলোর স্টারলিংক গ্রহকদের জন্য সেবা পৌঁছাচ্ছে সিঙ্গাপুর, মঙ্গোলিয়া বা অন্য কোনো দেশ দিয়ে। ফলে এ ব্যবসাটা পাচ্ছে ওই দেশগুলো। স্টারলিংক আমাদেরকে ট্রানজিট ব্যবসার মধ্যে ঢুকার সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে। কাজেই পাশের দেশগুলোর ব্যবহারকারীরা কী ব্যবহার করে না করে, সেটা বাংলাদেশ নজরদারি করতে চাইলে সেই ব্যবসা কখনো হবে না।
এমন বাস্তবতায় এনজিএসও গাইডলাইন পর্যালোচনা এবং দেশের স্বার্থ বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারী। গণমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, তারা একটি চিঠি দিয়েছে। টেকনিক্যাল ইস্যু নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আমাদের দেশের বিদ্যমান আইন এবং গাইডলাইন অনুযায়ী দেয়া সম্ভব হলে দেব, না হয় দেব না।