পুরস্কৃত হলেন ৬ এআই চ্যাম্পয়ন
সরকারের হস্তক্ষেপ ছাড়া এআই রেভ্যুলিউশন অসম্ভব : বিটিআরসি চেয়ারম্যান

শিক্ষা, কৃষি, স্বাস্থ্য, ফিনটেক ও শিল্পখাতে এআই অন্তর্ভুক্তির বিষয় নিয়ে শেষ হলো দেশের প্রথম এআই সম্মেলন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বাড্ডায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত দিনব্যাপী সম্মেলনের সমাপনীতে দেশের জন্য এআই কৌশলপত্র তৈরির ওপর জোর দিয়েছেন বিটিআরসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. এমদাদ উল বারী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান বলেছেন, সরকারের হস্তক্ষেপ ছাড়া এআই রেভ্যুলিউশন হওয়াটা অসম্ভব। কারণ এতে ডাটা প্রাইভেসি এবং ক্রস বর্ডার ডাটা এক্সচেঞ্জ এর বিষয় গুলো জড়িত।
ব্যক্তি জীবনের নানা অভিজ্ঞতা শেয়ার করে এমদাদ উল বারী প্রশ্ন রাখেন, আমরা কি এআই-কে ব্যবহার করব সবার জন্য, নাকি এটাকে হতে দেব বৈষম্যের মাধ্যম? নিজেই এর উত্তর দিয়ে বলেন, “আমাদের কাজই ঠিক করে দেবে, প্রযুক্তির এই অপার সম্ভাবনার সুষ্ঠ ব্যবহারে কিভাবে জনজীবনে কল্যাণ বয়ে আনতে পারে। এআই এখন আর শুধু ভবিষ্যতের বিষয় নয়, এটি এখন আমাদের জীবনের অংশ। এখনই আমাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়।”
তিনি আরো বলেন, “এই প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন খাতের বিশেষজ্ঞরা একত্রিত হয়ে কেবল জ্ঞান বিনিময় করেননি—তারা আমাদের সামনে খুলে দিয়েছেন এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার। এই আলোচনা আমাদের বুঝতে শিখিয়েছে, এআই একদিকে যেমন বিশাল সুযোগ এনে দিচ্ছে, অন্যদিকে তেমন কিছু গভীর চ্যালেঞ্জও সামনে আনছে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তাটি হচ্ছে—এই প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ কেমন হবে, তা নির্ভর করছে আমাদের আজকের সিদ্ধান্তের ওপর।”
সমাপনী অধিবেশনে সামাজিক উন্নয়ন ও বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকেন্দ্রীকরণের গুরুত্ব তুলে ধরেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার। তিনি বলেন, জাতীয় উন্নয়ন এবং আর্থিক সেবার পরিধি বাড়াতে এআইয়ের ভূমিকা নিয়ে অপরিসীম। এ ছাড়া শিক্ষা খাতে এআইয়ের মাধ্যমে সহজলভ্য শিক্ষার সুযোগ তৈরিসহ উদ্ভূত নৈতিক চ্যালেঞ্জ, বিশেষ করে গোপনীয়তা ও ক্ষমতার ভারসাম্যের ওপর আমাদের গুরুত্বারোপ করতে হবে।
সম্মেলেন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত এআআই হ্যাকাথনে ৬টি উদ্ভাবনী এআই সমাধানকে পুরস্কৃত করা হয়। হ্যাকাথনে ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দলের মেশিন মাইন্ডসেট; স্বস্থ্য খাতের সল্যুশন নিয়ে মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (এমআইএসটি) দলের কিউআরএআরজি, ফিনটেক সমাধান দিয়ে ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি থেকে রানটাইম টেররস, কৃষিতে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যায়ের কোড ফার্মারস থেকে কৃষি সেক্টরে, নাগরিক সমস্যার সমাধান দিয়ে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের টিম গ্ল্যাডিয়ার্স এবং শিক্ষায় রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) বুরাক প্রথম এআই হ্যাকাথন চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।
সম্মেলন চলাকালে গত মার্চে অনুষ্ঠিত এআই হ্যাকাথনের সেরা ৩১টি দল নিজেদের তৈরি উদ্ভাবন প্রদর্শন করে। এদের মধ্যে অনুষ্ঠানে এই ছয় বিজয়ী দলের হাতে ১ লক্ষ টাকার স্বারক চেক তুলে দেন বিটিআরসি চেয়ারম্যান। এসময় অন্যান্যের মধ্যে ব্র্যাক বিজনেস স্কুলের ডিন মোহাম্মাদ মজিবুল হক ও বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম এবং বাংলাদেশ ইনোভেশন কনক্লেভের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরিফুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে বিভিন্ন প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তারা বলেন, বর্তমানে দেশ-বিদেশের কোটি কোটি মানুষ দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)–নির্ভর বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন। অন্য সব প্রযুক্তির তুলনায় এআই বেশ গতিশীল। তাই পুরো বিশ্ব এখন এআই বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানেও এআইকে কাজে লাগাতে হবে।
প্যানেল আলোচনায় গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইয়াসির আজমান বলেন, এআই এখন অনেক শক্তিশালী। এখন এই প্রযুক্তি দিয়ে অনেক কাজ করা যাচ্ছে। ব্যক্তিগত কাজ হোক বা পেশাদার, সব কাজেই এআই উপস্থিত। এআই দিয়ে ভালো কাজ করতে হবে। নৈতিকতার বিষয়গুলোকে মাথায় রাখতে হবে। এআই যেন ভালো ও কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যায় সে বিষয়ে প্রযুক্তিবিদ, ব্যবহারকারী ও সরকারি-বেসরকারি সংস্থার সম্মিলিত ভূমিকা থাকতে হবে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, এখন সবখানেই প্রযুক্তির ছোঁয়া দেখা যাচ্ছে। স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে কৃষি, সব ক্ষেত্রেই এআইয়ের উপস্থিতি রয়েছে। প্রযুক্তি আসলে এমন একটা মাধ্যম, যা মানুষকে শক্তিশালী করে তোলে। এ জন্য বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে এআইকে ব্যবহার করতে হবে।
অন্যান্য প্যানেল আলোচনায় বক্তারা জাতীয় উন্নয়ন এবং আর্থিক সেবার পরিধি বাড়াতে এআইয়ের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন। এ ছাড়া শিক্ষা খাতে এআইয়ের মাধ্যমে সহজলভ্য শিক্ষার সুযোগ তৈরিসহ উদ্ভূত নৈতিক চ্যালেঞ্জ, বিশেষ করে গোপনীয়তা ও ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়ে আলোচনা করা হয়।