ফেসবুকের অ্যাড থেকে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ, বিনিয়োগ প্রতারণার ফাঁদ

১ অক্টোবর, ২০২৫ ১০:৪০  
ফেসবুকের অ্যাড থেকে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ, বিনিয়োগ প্রতারণার ফাঁদ

ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামে ঝকঝকে বিজ্ঞাপন, সেখানে অল্প সময়ে শেয়ারবাজারে বড় মুনাফার প্রতিশ্রুতি। বিজ্ঞাপন থেকে নিয়ে যাওয়া হয় হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে, সেখানে সাজানো প্রশংসা আর তথাকথিত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ। এরপর ভুয়া ওয়েবসাইট বা অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপে নিবন্ধন করিয়ে শেষ ধাপে বিকাশ বা নগদে টাকা পাঠাতে বলা হয়। এভাবেই গড়ে উঠেছে এক বহু-প্ল্যাটফর্ম প্রতারণার জাল।

অনলাইন ভেরিফিকেশন ও মিডিয়া গবেষণা প্লাটফর্ম ডিসমিসল্যাবের এক মাসের অনুসন্ধানে এই স্কিমের বিস্তার স্পষ্ট হয়েছে। শুধু সেপ্টেম্বর মাসেই পাওয়া গেছে অন্তত ১৫টি ফেসবুক পেজ থেকে চালানো শতশত বিজ্ঞাপন, যেগুলোর লক্ষ্য ছিল নতুন নতুন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে মানুষ টেনে নেওয়া। এমন অন্তত ২০টি গ্রুপ শনাক্ত হয়েছে যেখানে সদস্য সংখ্যা সব মিলিয়ে ৩ হাজারের বেশি। গ্রুপগুলো চালানো হচ্ছে দুটি বৈধ ব্রোকারেজ হাউজের নামে: সিটি ব্রোকারেজ লিমিটেড (সিবিএল) এবং ব্র্যাক ইপিএল সিকিউরিটিজ।

ডিসমিসল্যাবের গবেষকেরা গ্রাহক সেজে একাধিক গ্রুপে যোগ দিয়ে গোটা প্রক্রিয়া অনুসরণ করেছেন। সিবিএল গ্রুপে বিনিয়োগকারীদের পাঠানো হয় একটি ভুয়া অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপে, আর ব্র্যাক গ্রুপে নিয়ে যাওয়া হয় একটি ভুয়া ওয়েবসাইটে। তারপর ব্যাংক এবং বিকাশ ও নগদের মতো মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সেবার মাধ্যমে ব্যক্তিগত একাউন্টে সরাসরি টাকা লেনদেন করা হয়। এই পদ্ধতিকে ব্যবহার করে প্রতারকেরা বৈধ ব্রোকারেজ অ্যাকাউন্ট এড়িয়ে সরাসরি নিজেদের পকেটে টাকা তুলছে।

বিজ্ঞাপনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারেরর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস ও ঢাকায় বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেনের মতো বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তির ছবি ও পরিচয় ব্যবহার হচ্ছে।  

ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা ডিসমিসল্যাবকে জানিয়েছেন, তারা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ, সিআইডিকে লিখিতভাবে এই প্রতারণা সম্পর্কে জানিয়েছেন। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন থেকে এক দফায় সাবধানও করা হয়েছে। কিন্তু এ প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত বেশিরভাগ হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ সক্রিয় ছিল এবং ফেসবুকে প্রতিদিন নতুন নতুন বিজ্ঞাপনও চলছিল। 

এর আগে ভারতেও একই ধরণের প্রতারণা দেখা গেছে যেখানে সামাজিক মাধ্যম-মেসেজিং প্লাটফর্ম-ভুয়া ওয়েবসাইট ব্যবহার করে শেয়ারবাজারে উচ্চ মুনাফার লোভ দেখিয়ে সাধারণ গ্রাহকদের লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।