নির্বাচনে এআই এর অপব্যবহারে শাস্তির মুখে পড়বে গণমাধ্যমও
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে মিথ্যাচার বা অপপ্রচারের ক্ষত্রে প্রার্থী ও রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি গণমাধ্যমকেও শাস্তির মুখে মুখোমুখি করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। একই সঙ্গে নারীদের লক্ষ্য করে সাইবার বুলিং রোধে আচরণবিধিতে নতুন ধারা যুক্ত করা এবং ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার সংক্রান্ত সব বিধান বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এআই ব্যবহার করে যেকোনো ধরনের মিথ্যাচার বা অপবাদ ছড়ানো ইত্যাদি ব্যাপারে প্রার্থী দল, সংস্থা, মিডিয়া সংস্থা সবার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে বিধান রাখার কথা জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছেন, এটা একটা বৈশ্বিক সমস্যা। এটা শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়। এবং আপনাদের বলি আমি অন্ততপক্ষে ব্যক্তিগতভাবে কমিশনের পক্ষ থেকে পৃথিবীর কমপক্ষে ২০টা ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট বডির সাথে মিটিং করেছি। বিভিন্ন সময় এবং এখানে সবারই একটাই কনসার্ন। এটা একটা গ্লোবাল কনসার্ন। আমরা তো বলছি যে, আমরা চাই না যে আমাদের ব্যান্ডউইথ কমে যায় বা মাধ্যম বন্ধ করে দিই বা কোনো প্লটফর্ম বন্ধ করে দিই। তাহলে আমাদের হাতে কী উপায় আছে? বেসিক্যালি আমরা যে স্ট্র্যাটেজি নিয়ে কাজ করছি, কীভাবে ভালো তথ্য দিয়ে খারাপ তথ্যকে গুরুত্বহীন করা যায়। কারণ আপনি খারাপ তথ্য থামাতে পারবেন না। পৃথিবীব্যাপী নরমাল একটা ইয়ে হচ্ছে ৫০ শতাংশ থেকে আপনি এন্টিটি ট্রেস করতে পারবেন। এটা হচ্ছে গ্লোবাল একটা এভারেজ। দেশের ভেতর থেকে যাকে আমি ট্রেসই করতে পারবো না, আইনের আওতায় আনতে পারবো না, তাকে জবাবদিহিতার আতায় আনব কীভাবে তাহলে? উপায় হচ্ছে দুটো। একটা হচ্ছে ইন্টারনেট কমপ্লিট শাটডাউন অথবা এগুলোকে ওভারপাওয়ার করে দেওয়া ভালো তথ্য দিয়ে।
কমিশন সভা শেষে ১১ আগস্ট, সোমবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের ব্রিফকালে এমনটাই বলেছেন নির্বাচন কমিশনার। তিনি আরো বলেছেন, এবারের ভোটে শুধুমাত্র ডিজিটাল বিলবোর্ডগুলোতে আলোর ব্যবহার করা যাবে। বিদ্যুতের ব্যবহার করা যাবে। তাছাড়া আলোকসজ্জার ওপর যে নিষেধ ছিল সেটা বলবত থাকবে। বৈঠকে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ, আবদুর রহমানেল মাছউদ, তাহমিদা আহমদ, মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, ইসি সচিব আখতার আহমেদসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সানাউল্লাহ বলেন, একটি বিষয় যেটা আচরণবিধিতে যোগ হবে দল এবং প্রার্থীদের জন্য। সেটা হচ্ছে নারীর প্রতি সম্মান নিশ্চিতের লক্ষে যথাযথ কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা। আমি গতকালকেও একটা ফাংশনে এটেন্ড করেছিলাম। সেখানে জনপ্রিয় নেত্রী একটা সমস্যার কথা উত্থাপন করেছিলেন যে সাইবার বুলিংটা বিশেষ করে নারীদেরকে টার্গেট করে অস্বাভাবিক পরিমাণ বেড়ে গেছে। এটা অন্ততপক্ষে দল এবং প্রার্থীদের আচরণবিধির মধ্যে শামিল করা প্রয়োজন। পাশাপাশি আজকে ক্যাবিনেটেও এটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সার্বিকভাবে নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং তাদের জন্য সহনীয় অবস্থান তৈরি করা।
নির্বাচন কমিশনার বলেন, এইক্ষেত্রে গণমাধ্যমের সহায়তা আমাদের ভীষণভাবে প্রয়োজন। আমরাও স্ট্র্যাটেজি ওয়ার্ক আউট করছি। আপনাদের নিয়েও আমরা একটা ওয়ার্কশপ করব। আমরা আশা করি এটার মাধ্যমে এই প্রবণতাটাকে ঠেকাতে পারব মিথ্যাচারকে সত্য কথা দিয়ে।
এর আগে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংস্কার নিয়ে সকালে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে নবম কমিশন সভার মুলতুবি বৈঠক হয়। সন্ধ্যায় ইসির সিদ্ধান্ত তুলে ধরে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ জানান, সবখানে ‘না ভোট’ নয়, একক প্রার্থী হলে ‘না ভোট থাকবে। জোট হলেও নিজ দলের প্রতীকে ভোট করতে হবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় সশস্ত্র বাহিনীকে যুক্ত করা হয়েছে, এতে কমিশন অন্যান্য বাহিনীর মতোই সেনা, নৌ, বিমান বাহিনীর সদস্যদের আইনশৃঙ্খলায় নামাতে পারবে। বর্তমান ইসি দায়িত্ব নেওয়ার পর ইভিএম ব্যবহার করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছিল। এখন আরপিও থেকে তা বাদ দেওয়া হয়েছে। আগে রাজনৈতিক দলগুলো ব্যক্তি পর্যায় থেকে ১০ লাখ টাকা এবং প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত অনুদান বা ডোনেশন নিতে পারত। এটাকে ৫০ লাখ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। তবে শর্ত দেওয়া হয়েছে যে, ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে এই ট্রানজেকশনটা হতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ট্যাক্স রিটার্নে এটা দেখাতে হবে।







