সোহেলকে বাসায় পৌঁছে দিয়েছে ডিবি; ‘প্রোপাগাণ্ডা’র জবাব দিলেন ফয়েজ

১৯ নভেম্বর, ২০২৫ ১১:০১  
১৯ নভেম্বর, ২০২৫ ১১:৫৩  
সোহেলকে বাসায় পৌঁছে দিয়েছে ডিবি; ‘প্রোপাগাণ্ডা’র জবাব দিলেন ফয়েজ

জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রাজধানীর উত্তর বাড্ডার বাসা থেকে মধ্যরাতে ডেকে নিয়ে সকাল ১০টা নাগাদ ফের বাসায় পৌঁছে দেয়া হয়েছে দৈনিক ভোরের কাগজের অনলাইন প্রধান মিজানুর রহমান সোহেলকে।  জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল তাকে তাকে বাসায় পৌঁছে দিয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন সোহেলের স্বজনরা। 

পরে সোহেল নিজেই পোস্ট করে লিখেছেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ। বিনা অপরাধে প্রায় সাড়ে ১০ ঘণ্টা ডিবি হেফাজতে থাকার পর তারা আমাকে স্বসম্মানে মাত্র বাসায় পৌঁছে দিয়েছে।’

অপরদিকে এই ঘটনা নিয়ে একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে নিজের অবস্থান তুলে ধরেছেন  প্রধান উপদেষ্টার ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার স্বার্থেই আমরা এনইআইআর বাস্তবায়ন করছি। অবৈধ হ্যান্ডসেটের লাগাম টানতে সংক্ষুব্ধ পক্ষের সঙ্গে বিটিআরসি বৈঠকও করেছে। এতো কিছুর পরও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে কোনো কোনো অনলাইন নিউজ পোর্টাল আমার ওপর দায় চাপিয়েছে। তাদের উদ্দেশেই আমার বক্তব্য- এটা অনভিপ্রেত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের কাজ করে। এখানে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা থাকার অবকাশই নেই। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক বা তার পরিবারের পক্ষ থেকেও আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই। অথচ একটি স্বার্থান্বেষী মহল আমার কাছ থেকে সুযোগ সুবিধা নিতে ব্যর্থ হয়ে এ ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে জানা যায় জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিককে বাসায় পৌঁছে দেয়া হয়েছে।

 এর আগে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে তাদের বাসা থেকে সোহেলকে ডিবির (গোয়েন্দা পুলিশ) পোশাক গায়ে দেওয়া পাঁচ ব্যক্তি আটক করে নিয়ে যান বলে অভিযোগ করেছিলেন তার স্ত্রী সুমাইয়া সীমা।

সোহেলের স্ত্রীর ভাষ্য, ওই পাঁচজনের একজন নিজেকে আশরাফুল পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান সোহেলের সঙ্গে কথা বলতে চান। এজন্য তাকে নিতে এসেছেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার তাকে ফিরিয়ে দিয়ে যাওয়া হবে।’

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সীমা বলেন, তিনি শুয়ে পড়েছিলেন, সোহেল তখনো ল্যাপটপে কাজ করছিলেন। এসময় কলিংবেলের শব্দ পেয়ে সোহেল গিয়ে দরজা খুলে দেখেন ডিবির জ্যাকেট গায়ে পাঁচজন দরজায় দাঁড়িয়ে আছেন। পরে পাশের রুম থেকে তিনি এসে জানতে চান তারা কী জন্য এসেছেন। তখন ওই কর্মকর্তা সোহেলকে নিতে আসার কারণ তুলে ধরেন।

“আমি খুবই চিন্তায় পড়েছি। রাত বাজে আড়াইটা এখনো ওরা দিয়ে যায়নি। আমি অসুস্থ, আমার বাচ্চাও অসুস্থ,” যোগ করেন তিনি।

এ বিষয়ে রাতে ডিবির পক্ষ থেকে কোনো কর্মকর্তার আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এদিকে সোহেল সেন্টার ফর টেকনোলজি জার্নালিজম (সিটিজে) নামে ঢাকার তথ্যপ্রযুক্তি সাংবাদিকদের যে সংগঠনের সহসভাপতি, সেটির সাধারণ সম্পাদক সাইফ আহমাদ রাতে টেলিযোগাযোগ ও প্রযুক্তি বিটের সাংবাদিকদের কাছে পাঠানো বার্তায় বলেন, “রাত ১২টার পর তাকে (সোহেল) বাসা থেকে তুলে নেওয়ার ঘটনা শুধু উদ্বেগের নয়, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত। ডিবিপ্রধান ঘটনাটি স্বীকার করলেও এত গভীর রাতে একজন সাংবাদিককে কেন এভাবে নেওয়া হল, তার স্বচ্ছ ব্যাখ্যা অত্যন্ত জরুরি।’ ভোরে সংগঠনটির সদস্য মিজানুর রহমান সোহেলকে মধ্যরাতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরাম (বিআইজেএফ)। প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়েছে, একজন গণমাধ্যম কর্মীকে এভাবে গভীর রাতে তুলে নিয়ে যাওয়া শুধু অস্বাভাবিকই নয়; এটি সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তার প্রতি স্পষ্ট হুমকি। ডিবি প্রধান সোহেলকে তাঁদের কার্যালয়ে নেওয়ার কথা স্বীকার করলেও, এমন অস্বাভাবিক সময়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজনীয়তা সম্পূর্ণ অস্পষ্ট ও প্রশ্নবিদ্ধ।

ডিবিটেক/ইক