‘পোস্টাল ভোট বিডি’ উদ্বোধন; নিবন্ধনের সময়সীমা ঘোষণা

১৮ নভেম্বর, ২০২৫ ২১:২৬  
‘পোস্টাল ভোট বিডি’ উদ্বোধন; নিবন্ধনের সময়সীমা ঘোষণা
প্রবাসীদের পাশাপাশি দেশে নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা সরকারি চাকরিজীবী ও কারাবন্দিদের ভোটদানে চালু হয়েছে ‘পোস্টাল ভোট বিডি অ্যাপ’। ১৮ নভেম্বর, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে এক অনুষ্ঠানে অ্যাপটি উদ্বোধন করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন। এসময় নমুনা হিসেবে মিশর, জাপান, আরব আমিরাত, কেনিয়া ও নেদারল্যান্ডস থেকে একজন করে প্রবাসীকে নিবন্ধ করতে দেখা যায়।

নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ, ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ ছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ রাজনীতিবিদরা উদ্বোধনীতের উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ভার্চুয়ালি বিভিন্ন দেশের বাংলাদেশি কূটনীতিক ও প্রবাসীরা অংশ নেন। 

অ্যাপটি উদ্বোধনের পর নিবন্ধনের সময় নির্ধারণ করে দেয় ইসি। অঞ্চলভিত্তিক নিবন্ধিত ভোটারদের কাছে প্রবাসে ব্যালট পেপার পাঠানো হবে। পরে ভোটদান শেষে এটি ১৬ থেকে ২৮ দিনের মধ্যে রিটার্নিং অফিসারের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।

ভোটের প্রক্রিয়া হবে যেভাবে

নিবন্ধন ও ভোট দান প্রক্রিয়া নিয়ে গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকেই প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছে ইসি। মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড, নিবন্ধন, ডাকযোগে ব্যালট পাঠানো, ভোট প্রদান এবং ডাকযোগে ব্যালট ফেরত আসা পর্যন্ত ৫ ধাপে শেষ হবে এ প্রক্রিয়া। 

নিবন্ধনের জন্য প্রবাসীদের গুগল প্লে স্টোর বা আইফোনের অ্যাপ স্টোর থেকে “পোস্টাল ভোট বিডি” অ্যাপ ডাউনলোড করতে হবে। এরপর লগইন করে অ্যাকাউন্ট তৈরি করার সময় মোবাইল নম্বর প্রবেশ করাতে হবে। সেই নম্বরে আসা ওটিপি (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) দিয়ে নম্বর নিশ্চিত করতে হবে। 

এরপর জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) হাতে নিয়ে সেলফি তোলা এবং আলাদাভাবে এনআইডির ছবি জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। পাশাপাশি পাসপোর্ট থাকলে তার ছবিও দিতে হবে। শেষে বিদেশে বর্তমান ঠিকানার তথ্য দিলে নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ হবে। তথ্য যাচাই শেষে “আপনি এখন নিবন্ধিত” বার্তা অ্যাপে দেখা যাবে। 

এরপর অপেক্ষা থাকবে কেবল ব্যালট পেপারের জন্য। নিবন্ধন শেষ হলে সেই তথ্য সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে চলে যাবে। এরপর পৃথক ভোটার তালিকা প্রস্তুত করা হবে। নির্ধারিত সময়ে ভোটারের ঠিকানায় তিন খামের ভেতর ব্যালট পাঠানো হবে। একটি খামের ভেতরে থাকবে ব্যালট পেপার, আরেকটিতে আসন নম্বর ও রিটার্নিং কর্মকর্তার ঠিকানা উল্লেখ থাকবে। ভোটার ব্যালট পেপারে ভোট দিয়ে দ্বিতীয় খামে ভরে নিকটস্থ পোস্ট বক্সে জমা দিলেই ভোটের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।

খাম পাওয়ার পর ভোটারকে তার অ্যাপে লগইন করে মোবাইল নম্বর নিশ্চিত করতে হবে, নিজের ছবি তুলতে হবে এবং খামের ওপর থাকা কিউআর কোড স্ক্যান করতে হবে। এতে প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার পর আসনের সব প্রার্থীর নাম দেখা যাবে। এরপর খাম খুলে ব্যালটে ভোট দিয়ে একটি ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করতে হবে। ব্যালট খামে ভরে তা নিকটস্থ পোস্ট অফিসে জমা দিলেই ভোট সম্পন্ন হবে।

প্রবাসী নিবন্ধন কোন অঞ্চলে, কবে?

সাতটি অঞ্চলে ভাগ করে এই নিবন্ধন প্রক্রিয়া চলবে ১৯ নভেম্বর থেকে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত  চলবে। এই ৩৫ দিনে পাঁচদিন করে নিবন্ধনের সময় দেওয়া হবে। এই প্রক্রিয়া পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা এবং আফ্রিকা অঞ্চলে চলবে ১৯ নভেম্বর থেকে ২৩ নভেম্বর। উত্তর আমেরিকা ও ওশেনিয়া অঞ্চলে নিবন্ধন চলবে ২৪ থেকে ২৮ নভেম্বর। ইউরোপে নিবন্ধন চলবে ২৯ নভেম্বর থেকে ৩ ডিসেম্বর। মধ্যপ্রাচ্যে নিবন্ধন চলবে ৪ থেকে ৮ ডিসেম্বর। দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়াতে নিবন্ধন চলবে ৯ ডিসেম্বর থেকে ১৩ ডিসেম্বর। মধ্যপ্রাচ্য (সৌদি আরব বাদে) ১৪ থেকে ১৮ ডিসেম্বর। এ ছাড়া বাংলাদেশেরে সরকারি কর্মকর্তারা, নির্বাচনী দায়িত্বের কর্মকর্তা, আইনের আওতাধীন ব্যক্তিরা ১৯ থেকে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিবন্ধন করতে পারবেন।

উদ্বোধনী ভাষণে সিইসি এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ নিয়ে সিইসি বলেন, “বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭.১ ঘোষণা করে গণতন্ত্রের মালিক জনগণ। এই মালিকানার কোন ভৌগলিক সীমানায় বাধা নয়। প্রবাসী নাগরিকরা যেমন অর্থনৈতিক নাগরিক হিসেবে ভূমিকা রাখছে, এমনভাবে গণতান্ত্রিক নাগরিক হিসেবে ভূমিকা রাখাও কর্তব্য।

“তাদের ভোটের মাধ্যমে গণতন্ত্রের ভিত্তি হবে আরও বিস্তৃত, প্রতিনিধিত্বশীল এবং আরও শক্তিশালী।”

তিন মাসের কিছুটা বেশি সময়ে মোবাইল অ্যাপ বাস্তবায়নের দিকে যাচ্ছে তুলে ধরে তিনি ‘এটাকে দুঃসাহসী’ বলে দাবি করে তিনি আরো বলেন, বর্তমানে এক কোটি ৩০ লাখ মানুষ প্রবাসে বসবাস ও কর্মরত। এতদিন প্রবাসীরা ভোট দেওয়া থেকে বঞ্চিত হতেন। এই উদ্যোগ তাদের ভোটাধিকার বঞ্চনার অবসান করল। তিনি বলেন, প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার মাধ্যমে গণতন্ত্রের ভিত্তি আরও বিস্তৃত, আরও প্রতিনিধিত্বশীল হবে। সবার ভোটাধিকার নিশ্চিতে নির্বাচন কমিশন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এটা কেবল একটি অ্যাপ নয়, এটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা।

সিইসি বলেন, এটা কেবল একটি অ্যাপ নয়, এটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা।

অনুষ্ঠানে ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ বলেন, পোস্টাল ভোট বিডি অ্যাপ সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার পথে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। অ্যাপে নিবন্ধন করে ভোটাররা ডাকযোগে ব্যালট পাবেন এবং ভোট দিয়ে ফিরতি ডাকে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের কাছে পাঠাবেন। উদ্যোগটি শুধু প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন নয়, এটি বাংলাদেশের সার্বজনীন ও অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্রের জন্য মাইলফলক।

অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, প্রবাসীদের নিবন্ধনে আমাদের বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ আছে। প্রথমটি হলো, নিবন্ধনের হার। বিশ্বে প্রবাসী ভোটারদের গড় নিবন্ধনের হার ২ দশমিক ৭ শতাংশ। দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ হলো, ব্যালট ওয়েস্টেজ রেট। গ্লোবাল ওয়েস্টেজে রেট হলো ২৪ শতাংশ। প্রতি চারটিতে একটি ব্যালট নষ্ট হয়।

তিনি বলেন, আরেকটি চ্যালেঞ্জ হলো সাইবার নিরাপত্তা। বিশ্বে দেখা যায়, এ ধরনের ব্যবস্থার ক্ষেত্রে অন্তত পাঁচ বছর ট্রায়াল করা হয়। আমরা ট্রায়াল করেছি এক মাসও হয়নি। তবে আমরা নিশ্চতি করছি, এমন কোনো ত্রুটি যেন না থাকে যা ভোটকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।

সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে জানান, সৌদি আরবে প্রায় ৩৫ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি বসবাস করছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে অনেকেই নিবন্ধন করবেন এবং ভোট দেবেন। 

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে আউট অব কান্ট্রি ভোটিং সিস্টেম ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ইমপ্লিমেন্টেশন প্রজেক্টের প্রধান বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) সালীম আহমাদ খান পুরো ভোটিং প্রক্রিয়া তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “তফসিল ঘোষণার পরে প্রবাসে ব্যালট পেপার চলে যাবে বাংলাদেশ থেকে। প্রবাসীদের কার্যক্রমের শেষের দিকে দেশের তিন ধরনের ব্যক্তির (অ্যাপে নিবন্ধিত) ঠিকানা ধরে পোস্টাল ব্যালট পাঠানোর কাজ শুরু হবে।”

তিনি বলেন, “তফসিল ঘোষণার পর এখান থেকে ব্যালট পাঠানো শুরু হয়ে যাবে, যাতে প্রতীক বরাদ্দের আগেই পোঁছে যায়। আর বরাদ্দের পর ভোটার নিজের ফোনের মোবাইল অ্যাপে প্রার্থী দেখে ভোটটা দিয়ে দেবেন। তারপর আবার ডাকযোগে পাঠাবেন।”

আয়োজকরা জানান, স্মার্টফোন অ্যাপ এবং ডাক ব্যালটের সমন্বয়ে তৈরি এই হাইব্রিড সমাধানের মাধ্যমে যোগ্য প্রবাসী, নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত সরকারি কর্মকর্তা এবং সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।

ইসির মতে, অ্যাপটির লক্ষ্য অনাবাসী বাংলাদেশি ভোটারদের জন্য দ্রুত, নিরাপদ এবং আরও ব্যবহারকারীবান্ধব প্রক্রিয়া নিশ্চিত করে ভোটদান ব্যবস্থার একটি নতুন পথ উন্মোচন করা। ইসির কর্মকর্তারা জানান, বিশ্বের ১৪৩টি দেশে ৪০ দিনব্যাপী ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপে প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন প্রক্রিয়া চলবে।

ডিবিটেক/বিটিডিটি/মুইম