নতুন গাইডলাইনে সিএমএসপি-তে ইন্টারনেট ব্যবসায়ীদের ৩ ঘোরতর আপত্তি
খসড়া টেলিকম নীতিমালার ওপর বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক কমিশনে (বিটিআরসি) ২৩ পাতার প্রস্তাবনা দিয়েছে ইন্টারনেট সেবাদাতাদের সংগঠন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি)। গণমত আহ্বানে সাড়া দিয়ে ৪টি গাইড লাইনের আলোকে ফিক্সড টেলিকম সার্ভিস গাইড লাইনের (এফটিএস) ত্রুটি-বিচ্যুতি ও সংশোধনী যুক্ত করেই ওই প্রস্তাবনাটি দিয়েছে বাণিজ্যিক সংগঠনটি।
প্রস্তাবনায় খসড়া গাইডলাইনে মোটা দাগে সাতটি বিষয়ে প্রবল আপত্তি উত্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে টেলিকম নীতিমালার সঙ্গে সেলুলার মোবাইল সার্ভিস অপারেটরের (সিএমএসপি) সঙ্গে সাংঘর্ষিক দেখিয়ে তিনটি বিষয়ে ঘোরতর আপত্তি জানিয়েছে। রেফারেন্স ক্লজ উল্লেখ করে দেয়া ওই দাবিতে সিএমএসপি-তে তিনটি সংশোধন দাবি করা হয়েছে। একইভাবে বাকি চারটি দাবি এফটিএস গাইডলাইনের ওপর।
সেলুলার মোবাইল সার্ভিস প্রোভাইডার (সিএমএসপি) গাইডলাইন থেকে এফডাব্লিউএ (ফিক্সড ওয়্যারলেস একসেস) যেমন- জিপিফাই, রবি-ওয়াইফাই, বাংলালিংক ওয়াই-ফাই এবং হটস্পট কানেক্টিভিটি অন্তর্ভুক্ত করার অনুমতি বাতিল করে সিএমএসপি সংশোধন সংশোধনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এতে মন্তব্য হিসেবে লেখা হয়েছে- নীতিমালা অনুযায়ী, এই ফিচারগুলো শুধু এফটিএস- এর আওতায় থাকা উচিত। একইসঙ্গে সিএমএসপি গাইডলাইন থেকে হোম/অফিস/ইনডোর প্রাঙ্গনে ফাইবার সংযোগ স্থাপনের অনুমতি বাতিলের দাবি করা হয়েছে। পাশাপাশি সিএমএসপি গাইডলাইন থেকে সার্ভিস ডেলিভারির জন্য আইএসএম/ওয়াইফাই ব্যান্ড-এর বাণিজ্যিক ব্যবহার নিষিদ্ধ চেয়েছে ফিক্সড ব্যান্ডের ব্যবসায়ীরা।
বিটিআরসি-তে জমা দেয়া প্রস্তাবনায় বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী এফটিএসপি-দের অ্যাক্টিভ অবকাঠামো শেয়ারিং সংক্রান্ত গাইডলাইনে অবকামো ভাগাভাগির বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে আইপিটিএসপি এসএমএস সার্ভিস ও মোবাইল ডায়ালার বিষয় দুটি স্পষ্টিকরণের মাধ্যমে বিস্তারিত নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
এছাড়াও এফটিএসপি গাইডলাইন থেকে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ রেভিনিউ শেয়ারিং ও ১ শতাংশ সোশ্যাল অবলিগেশন ফান্ড (এসওএফ) এবং উচ্চ লাইসেন্স ফি বাতিল বা পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানানো হয়েছে। পাশাপাশি এফটিএসপি (ফিক্সড টেলিকম সার্ভিস প্রোভাইডার) এবং জেলা এফটিএসপি (ফিক্সড টেলিকম সার্ভিস প্রোভাইডার) -এর মধ্যে সার্ভিস বৈষম্য তুলে নেয়ার জোর দাবি করা হয়েছে প্রস্তাবনায়।
ফিক্সড টেলিকম সেবাদাতার মনে করেন, খসড়া গাইডলাইনে মোবাইল অপারেটরদের ফিক্সড ওয়্যারলেস একসেস ও লাস্ট মাইল ফাইবারের মাধ্যমে ফিক্সড কানেক্টিভিটি দেওয়ার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে দেশীয় আইএসপিগুলোর জন্য অসম প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হবে। গ্রাহক পর্যায়ে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের খরচ ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়বে। সেবার মূল্য অস্থিতিশীল হলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও গণমাধ্যমের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে।
প্রস্তাবনা বিষয়ে আইএসপিএবির সভাপতি আমিনুল হাকিম বলেন, সরকারের টেলিকম নীতি তাদের মূল উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত হয়েছে। এসব নিয়মকানুন এখন আর জনস্বার্থের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। সরকার বর্তমানে এই খাত থেকে ২১ দশমিক ৪৫ শতাংশ রাজস্ব আয় করছে। প্রস্তাবিত নীতিমালায় সরকারের রাজস্ব আয় বেড়ে ৪০ দশমিক ২৫ শতাংশ হবে। বিটিআরসির নতুন নিয়ম অনুযায়ী ৭০০ টাকার ইন্টারনেট প্যাকেজের দাম ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা হতে পারে। এই দাম তৃণমূল পর্যায়ের গ্রাহকদের ওপর চাপ তৈরি করবে। ফলে শহর ও গ্রামীণ এলাকার মধ্যে ডিজিটাল বৈষম্য আরও বাড়বে। একদিকে সরকার ইন্টারনেটের দাম কমানোর কথা বলে, অন্যদিকে তাদের নীতিগত সিদ্ধান্ত এটিকে আরও ব্যয়বহুল করে তুলছে।







