টেকসই জ্বালানির ভবিষ্যৎ গঠনে জার্মানি ও বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগ  

আইসিসিবি ইনোভেশনস অ্যান্ড পার্টনারশিপস ফর সাসটেইনেবল এনার্জি ট্রানজিশন সম্মেলন অনুষ্ঠিত

১৫ নভেম্বর, ২০২৫ ১৮:৫৫  
আইসিসিবি  ইনোভেশনস অ্যান্ড পার্টনারশিপস ফর সাসটেইনেবল এনার্জি ট্রানজিশন  সম্মেলন অনুষ্ঠিত

টেকসই জ্বালানি ভবিষ্যৎ গঠনে জার্মানি ও বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগ রাজধানীর আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার (আইসিসিবি) পুষ্পাঞ্জলি হলে প্রদর্শিত হলো নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের নানা উদ্ভাবন। সেমস-গ্লোবাল ও জিআইজেড বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে ‘ইনোভেশনস অ্যান্ড পার্টনারশিপস ফর সাসটেইনেবল এনার্জি ট্রানজিশন’ শীর্ষক দিনব্যাপী এই সম্মেলনে দেশের জ্বালানি খাতকে টেকসই ও পরিবেশবান্ধব করার লক্ষ্যে সমন্বিত উদ্যোগ, উদ্ভাবন এবং দায়িত্বশীল বিনিয়োগের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।

দিনব্যাপী এই সম্মেলনে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, নীতিনির্ধারক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাবিদ ও বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। বাংলাদেশকে নিম্ন-কার্বন ও জ্বালানি-দক্ষ ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে নিতে, সমন্বিত উদ্যোগ, উদ্ভাবন এবং দায়িত্বশীল বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তাসমূহ আলোচনায় উঠে আসে। 

সম্মেলনটি আয়োজন করা হয় ২৭তম পাওয়ার বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক এক্সপো ২০২৫, ২২তম সোলার বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক এক্সপো ২০২৫ এবং ৭ম ঢাকা আন্তর্জাতিক লাইটিং এক্সপো ২০২৫ - এর পাশাপাশি, যা সম্মিলিতভাবে ‘২৭তম পাওয়ার সিরিজ অফ এক্সিবিশনস’ হিসেবে পরিচিত। সেমস-গ্লোবাল আয়োজিত পাওয়ার সিরিজ অব এক্সিবিশন্স দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও আধুনিক আলোক প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম।

সম্মেলনে বারবার উঠে আসে জার্মানির দীর্ঘদিনের উন্নয়ন সহযোগিতার কথা। জিআইজেড বাংলাদেশের মাধ্যমে জার্মানি নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্প্রসারণ, গ্রিড-ইন্টিগ্রেশন, শিল্প ও অবকাঠামো খাতে জ্বালানি-দক্ষতার উন্নয়ন, ই-মোবিলিটি এবং সবুজ দক্ষতা উন্নয়নে সহায়তা দিয়ে আসছে।

বাংলাদেশের টেকসই জ্বালানি রূপান্তর ত্বরান্বিত করতে নীতি-সংলাপ, সক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রযুক্তিগত সহায়তা ও উদ্ভাবনের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয় আলোচনায়। ফসিল জ্বালানির উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে একটি সবুজ, স্থিতিস্থাপক ও সামগ্রিক জ্বালানি ভবিষ্যৎ নির্মাণ এবং স্থানীয় দক্ষ জনশক্তিকে এ রূপান্তরের নেতৃত্ব দিতে সক্ষম করে তোলার বিষয়টিতেও জোর দেন আলোচকেরা।
 
সম্মেলনে বক্তারা বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, গ্রিড-ইন্টিগ্রেশন, শিল্প খাতে জ্বালানি দক্ষতা, ই-মোবিলিটি ও সবুজ দক্ষতা উন্নয়নে জিআইজেড বাংলাদেশের মাধ্যমে জার্মানির সহায়তা দেশের জ্বালানি খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। 

তারা আরও বলেন, ফসিল জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে একটি সবুজ, স্থিতিস্থাপক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক জ্বালানি ভবিষ্যৎ নির্মাণই এই সহযোগিতার মূল লক্ষ্য।

দিনব্যাপী আয়োজনের চারটি সেশনে দেশের জ্বালানি রূপান্তরের বিভিন্ন অগ্রাধিকার নিয়ে আলোচনা হয়। প্রথম সেশনে গ্রিন কুলিং প্রযুক্তি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি সম্প্রসারণ ও শিল্প খাতে জ্বালানি দক্ষতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়। 

দ্বিতীয় সেশনে বিশ্বব্যাংক, ব্র্যাক ও আইএলও প্রতিনিধিরা বলেন, সবুজ অর্থনীতিতে প্রবেশের জন্য তরুণদের শিল্পভিত্তিক দক্ষতা উন্নয়ন এখন সময়ের দাবি। 

দুপুরে অনুষ্ঠিত তৃতীয় সেশনে ছাদে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের সম্প্রসারণে বেসরকারি বিনিয়োগ ও উদ্ভাবনী ব্যবসায়িক মডেলের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করা হয়।

শেষ সেশনে সিটি ব্যাংক, বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি, আইবি ভগট এপ্যাক, বিইপিডিবি এবং এইচঅ্যান্ডএম-এর প্রতিনিধিরা শিল্পে স্বল্প খরচে নির্ভরযোগ্য সবুজ জ্বালানি নিশ্চিতে সিপিপিএ-এর ভবিষ্যৎ ভূমিকার কথা তুলে ধরেন।

আলোচনার সারসংক্ষেপে বলা হয়, সরকার, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এবং বেসরকারি খাতের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই বাংলাদেশকে একটি টেকসই ও স্থিতিস্থাপক জ্বালানি ভবিষ্যতের দিকে দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। এজন্য টেকসই জ্বালানি রূপান্তরের জন্য সরকার, উন্নয়ন সংস্থা ও বেসরকারি খাতকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি সম্প্রসারণ, সবুজ অর্থায়ন, দক্ষতা উন্নয়ন ও নীতিগত সংস্কারের মাধ্যমে বাংলাদেশ দ্রুত একটি জ্বালানি-নিরাপদ ও সবুজ ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে পারে।

সম্মেলনের শেষে, সেমস-গ্লোবাল ও জিআইজেড বাংলাদেশ উদ্ভাবন, দক্ষতা উন্নয়ন এবং কার্যকর নীতি-সংলাপের মাধ্যমে দেশের জ্বালানি রূপান্তরকে আরও গতিশীল করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে।
ডিবিটেক/এএইচকে/মুইম