মেট্রোরেলের নির্মাণকালীন ত্রুটির দায় ঠিকাদারকে নিতে হবে: ডিএমটিসিএল এমডি

৩ নভেম্বর, ২০২৫ ১৭:৫২  
মেট্রোরেলের নির্মাণকালীন ত্রুটির দায় ঠিকাদারকে নিতে হবে: ডিএমটিসিএল এমডি

ফার্মগেটে মেট্রোরেল স্টেশনের নিচ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় গত ২৬ অক্টোবর মেট্রোরেলের একটি পিলার থেকে বিয়ারিং প্যাড পড়ে পথচারী আবুল কালাম নিহতের ঘটনায় বিয়ারিং প্যাডের কোনো দোষ নেই বলে জানিয়েছেন মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফারুক আহমেদ। 

তিনি বলেছেন, দোষ কিন্তু বিয়ারিংয়ের নয়। বিয়ারিং যে লাগিয়েছে, সেটি বাজেভাবে লাগানো হয়েছে কি না? যার আসলে বুঝে নেওয়ার দায়িত্ব ছিল, সে বুঝে নিয়েছে কি না, সেগুলো এখন দেখতে হবে। আর এ জন্য মেট্রোরেলের নির্মাণকালীন যেকোনও ত্রুটির দায়ভার ঠিকাদারকেই নিতে হবে বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক।  

৩ নভেম্বর, সোমবার রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়িতে ডিএমটিসিএলের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করেন।

ফারুক আহমেদ বলেন, মেট্রোরেলের আগে সেফটি অডিট হয়নি। তাই সেফটি অডিট করতে চাইছি। যত দ্রুত করা যায়, সেটা আমরা করব। থার্ড পার্টিকে (তৃতীয় পক্ষ) দিয়ে এই অডিট করানো হবে। ইউরোপীয় কোনো প্রতিষ্ঠান দিয়েই করানো হবে। আমাদের কাছে ফ্রান্সের দুটি প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে। সেফটি অডিট করার জন্য আমরা খুব শিগগির টেন্ডারের প্রক্রিয়ায় যাব।

তিনি বলেন, বিয়ারিং প্যাড হঠাৎ করে পড়ে যায়নি। এটা হঠাৎ করে পড়ে যাওয়ার জিনিস নয়। যেহেতু এটা নিয়ে তদন্ত চলছে, ফলে এ বিষয়ে আমি জাজমেন্টাল হতে চাই না। তবে যেটা হতে পারে, সেটা বলতে পারি, ডিজাইন ফল্ট হতে পারে। যে জিনিসের ওপর বসানোর কথা বলা হয়েছিল, যা যা দেওয়ার কথা ছিল, সেটা বসানো হয়নি। যে ডিজাইনে হওয়ার কথা ছিল, সেটা হয়তো ঠিকাদার করেনি। যে পরামর্শককে বুঝে নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তারা হয়তো ঠিক করে জিনিসটা বুঝে নেয়নি। এই চারটা কারণে হতে পারে অথবা এর মধ্যে কোনো একটা কারণও হতে পারে।

এসব কাজ বুঝে নেওয়ার জন্য হাজার কোটি টাকায় বিদেশি পরামর্শক নিয়োগ করা আছে জানিয়ে ফারুক আহমেদ বলেন, “প্রথম ঠিকাদারের কাছ থেকে বুঝে নেবেন পরামর্শক। আমাদের বুঝিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব পরামর্শকদের। তখন এই কাজগুলো কিছুটা তাড়াহুড়া হয়েছে। কেন হয়েছে, সেটার উত্তর তো আমি দিতে পারব না। যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছিল, সেই অংশে অনেক ডিফেক্ট আছে। ফলে সেটা এখনও আমরা বুঝে নিইনি।”

ডিএমটিসিএলের এমডি বলেন, যেখানে বিয়ারিং প্যাড পড়ে গিয়েছিল, ওই অংশের ত্রুটি সারিয়ে দেওয়ার সময়সীমা (ডিফেক্ট লায়াবেলিটি) গত জুন পর্যন্ত ছিল। কিন্তু ডিএমটিসিএল তাদের এই সময়সীমা গ্রহণ করেনি। কারণ, এখনো অনেক বড় ত্রুটি রয়ে গেছে। যত সমস্যা আছে, এগুলো ঠিকাদারকে মেরামত করতে হবে। এ জন্য ‘ডিফেক্ট লায়াবেলিটি’ দুই বছর বাড়ানোর জন্য ঠিকাদারকে বলা হয়েছে।

দুর্ঘটনার পর মেট্রোরেলের সব কটি পিলার পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে জানিয়ে ফারুক আহমেদ বলেন, “এর আগে পুরো পথের বেয়ারিং প্যাডের ছবি ড্রোন ক্যামেরা দিয়ে তোলা হয়েছে। এরপর কর্মকর্তারা সরেজমিনে নিরীক্ষা করেছেন। যেসব স্থানে ত্রুটি শনাক্ত করা হয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে জানানো হয়েছে। ডিএমটিসিএলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলো, যেখানে ত্রুটি বা সমস্যা পাওয়া যাবে, সেখানে বেয়ারিং প্যাড অবশ্যই পরিবর্তন করা হবে।”

নিহত পথচারী আবুল কালাম আজাদের পরিবারের জন্য স্থায়ী সমাধান খোঁজা হচ্ছে জাানিয়ে ডিএমটিসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ঘটনার পরপরই আমরা নিজেরা ভিক্টিমের পরিবারের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হই। হাসপাতালে নেওয়া থেকে শুরু করে জানাজা পর্যন্ত সব কিছু ডিএমটিসিএল ও মন্ত্রণালয় যৌথভাবে সম্পন্ন করেছে। এ ছাড়া সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান তাৎক্ষণিকভাবে নিহত ব্যক্তির পরিবারকে ৫ লাখ টাকা সহায়তা দিয়েছেন। তবে এটি জীবনের মূল্য নয়, তাৎক্ষণিক সাহায্য হিসেবেই প্রদান করা হয়েছে।

ফারুক আহমেদ বলেন আরও বলেন, আমরা শুধু সাময়িক সহায়তা দিয়েই থেমে থাকিনি। আমরা চেষ্টা করছি কীভাবে তার পরিবারকে স্থায়ীভাবে সহায়তা করা যায়। এজন্য গত সপ্তাহে নিহত আবুল কালামের স্ত্রীর সঙ্গে আমার বৈঠক হয়েছে। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী আমরা একটি চাকরির ব্যবস্থা করেছি। তিনি যখন সার্টিফিকেট ও জাতীয় পরিচয়পত্র জমা দেবেন, তখনই চাকরিটি কার্যকর হবে।