হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে দেয়া ১০০১ শিক্ষকের বিবৃতি নিয়ে অনেক শিক্ষকেরই বিস্ময় প্রকাশ
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধ নির্দেশদাতার ভূমিকার জন্য ১৭ নভেম্বর বিকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক জনরোষে পদচ্যুত ও পলাতক বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড রায় ঘোষণার কিছুক্ষণ পর এর কিছুক্ষণ পর কয়েকটি ওয়েবাসইটে খবর প্রকাশিত হয়, “শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রায়ের প্রতিবাদ জানিয়েছেন ১০০১ জন শিক্ষক"। ‘বাংলাদেশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষকবৃন্দ’ নাম ব্যবহার করে বিবৃতিটি মিডিয়ায় পাঠানো হয়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মাহবুব আলম প্ৰদীপ স্বাক্ষরিত এই বিবৃতিতে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০১ জন স্বাক্ষর করেছেন বলে উল্লেখ করা হলেও মোট ৬৫৯ জন শিক্ষকের নাম যুক্ত করা হয়েছে। তবে তালিকায় নিজেদের নাম দেখে অনেকই বিস্ময় প্রকাশ করেছে।
রাতেই ফেসবুকে নিজেদের প্রোফাইলে পোস্ট করে এই বিবৃতির সাথে তাদের সম্পর্ক নেই বলেও জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন শিক্ষক।
এদেরমধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক ফজলুল হালিম তার ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, ''জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় আমার কর্মস্থল। আমি আমার কর্মস্থলে কোন প্রকার শিক্ষক রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত নই। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের একটি বিবৃতি আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। যেখানে আমার নাম ব্যবহার করা হয়েছে। তবে আমি স্পষ্টভাবে জানাচ্ছি যে আমার কোনো অনুমতি বা সম্মতি ছাড়াই এই বিবৃতিতে আমার নাম ব্যবহার করা হয়েছে। বিবৃতিটির বিষয়ে আমাকে অবহিতও করা হয়নি। কাজেই উক্ত বিবৃতিতে আমার নাম অন্তর্ভুক্তকরণ সম্পূর্ণ অননুমোদিত। এ বিষয়ে আমার শুভাকাঙ্ক্ষী ও শুভানুধ্যায়ীদের বিভ্রান্ত না হতে অনুরোধ জানাচ্ছি।''
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আনোয়ার সাইদ লিখেছেন, ''কয়েকটি অনলাইন পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিক্ষকদের নামের তালিকা সম্বলিত একটি বিবৃতি ভাইরাল হয়েছে। এই বিবৃতিতে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এই তালিকায় আমার নাম সংযুক্ত করায় প্রতিবাদ জানাচ্ছি।''
ইতহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম তার ফেসবুক আইডিতে লিখেন, ''অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে আজকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের রায় সংক্রান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নাম সংবলিত বিবৃতিতে ষড়যন্ত্র মূলক ভাবে আমাদের নাম ব্যবহার করা হয়েছে। আমাদের জানামতে আমরা এই ধরনের কোন বিবৃতিতে স্বাক্ষর বা কারো সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা করিনি। বিষয়টি আমাদেরকে হতাশ করেছে। উল্লেখ্য যে সকল ধরনের অতীতের নোংরা ও কলুষিত রাজনীতির সঙ্গে আমাদের কোন সম্পৃক্ততা নাই।''
এদিকে তালিকায় নাম থাকা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের নঈম উদ্দিন হাসান আওরঙ্গজেব, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক বশির আহমেদ, সমাজতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক এসএম মনিরুল হাসান, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন নিজামী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক হাবিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. ওমর ফারুক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক সায়েদুর রহমান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ কাফি প্রমুখও ফ্যাক্টচেকার দি ডিসেন্ট-কে বিবৃতিতে স্বাক্ষর না করার কথা
নিশ্চিত করেছেন। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাবেক প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার অবশ্য স্বীকার করেছেন যে, তিনি এই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন।
ওদিকে সংবাদটি সর্বপ্রথম প্রকাশ করা অনলাইন পোর্টাল বাহান্ননিউজ সম্পাদক ও প্রকাশক বিভাষ বাড়ৈ সংবাদের উৎস 'একটি শিক্ষক সংগঠন' এর নাম উল্লেখ না করলেও পরে সংবাদটি সরিয়ে ফেলেছেন।
ডিবিটেক/ডিএস/মুইম







