ফলোআপঃ

স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত বিটিআরসি উপ-পরিচালক নিপু

দুর্নীতি প্রমাণে বিটিআরসি’র প্রথম চাকরিচ্যুতি

১৯ নভেম্বর, ২০২৫ ০০:০৯  
স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত বিটিআরসি উপ-পরিচালক নিপু

দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সাময়িক থেকে স্থায়ী বরখাস্ত হলেন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) প্রশাসন বিভাগের উপ-পরিচালক আমজাদ হোসেন নিপু। আর সাবেক চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমদের এই ব্যক্তিগত সচিবের (পিএস) স্থায়ী বরখাস্তের মাধ্যমে বিটিআরসি-তে নতুন ইতিহাস রচিত হলো। তার স্থায়ী বরখাস্তের মাধ্যমে বিটিআরসি প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তীর আগে প্রশাসনিক শুদ্ধতার পথে দৃঢ় অবস্থান জানান দিলেন বর্তমান চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোঃ এমদাদ উল বারী (অব.)। 

তবে এই বরখাস্তের আগে প্রায় ১৫ মাস ধরে অস্থায়ী বরখাস্ত অবস্থায় নিজেকে দোষ মুক্ত করার সুযোগ পেয়েছেন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে বিটিআরসিতে নিয়োগ প্রাপ্ত সদ্য সাবেক এই কর্মী। তার সঙ্গে একই সময়ে (১১ আগস্ট ২০২৪) সালে  ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন্স (ইঅ্যান্ডও) বিভাগের উপ-পরিচালক মাহদী আহমেদও সাময়িক বরখাস্ত হয়েছিলেন। 

তবে সবশেষ কমিশনের ৩০০তম বৈঠকে মোঃ আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে আনীত গুরুতর অসদাচরণ ও দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে স্থায়ীভাবে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত পাকাপোক্ত হয়। এরপর ১১ নভেম্বর পত্রপাঠ স্থায়ী বরখাস্তের চিঠি পাঠিয়ে দেয়া হয় দোষী সাব্যস্ত হওয়া কর্মকর্তার কুমিল্লার লাকসামের ঠিকানায়।

স্থায়ী বরখাস্ত হচ্ছেন বিটিআরসির উপ-পরিচালক আমজাদ

স্থায়ী বরখাস্তের ওই অফিস আদেশে জানানো হয়, বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও অনলাইন গণমাধ্যমে বিটিআরসি–তে “অসাধু সিন্ডিকেটে” জড়িত থাকার তথ্য প্রকাশ, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হয়রানি এবং প্রশাসনিক বৈষম্যসহ একাধিক গুরুতর অভিযোগের ভিত্তিতে ১১ আগস্ট ২০২৪ তারিখে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

পরবর্তীতে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ ও বিটিআরসি চাকরি প্রবিধানমালা অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয়। অভিযোগনামার জবাব, ব্যক্তিগত শুনানী এবং তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটির পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদনে তার বিরুদ্ধে অসদাচরণ ও দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হয়।

তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে ২৯৮তম কমিশন সভায় তার বিরুদ্ধে ‘চাকরি হতে বরখাস্ত’ সূচক গুরুদণ্ড প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয় বিটিআরসি। এ বিষয়ে দ্বিতীয়বার কারণ দর্শানোর সুযোগ দেওয়া হলেও প্রদত্ত জবাব কমিশন সন্তোষজনক মনে করেনি।

অতঃপর ৩০০তম কমিশন সভায় সর্বশেষ সিদ্ধান্তে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে বহাল রেখে তাকে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এবং বিটিআরসি চাকরি প্রবিধানমালা, ২০২২ অনুযায়ী স্থায়ীভাবে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

স্থায়ী বরখাস্তের সাতটি যুক্তি উল্লেখ করে বিটিআরসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোঃ এমদাদ উল বারী (অব.) স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়েছে—জনস্বার্থে এই বরখাস্তাদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।

আদেশটি সংশ্লিষ্ট সব দপ্তর, তদন্ত নথি এবং অভিযুক্ত কর্মকর্তার নিজস্ব ঠিকানায় প্রেরণ করা হয় এবং কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

এরআগে গত বছরের ১১ আগস্ট কমিশনের প্রায় শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী  আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করে জানান, চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত সচিব (পিএস) আমজাদ হোসেন ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে বিটিআরসিতে নিয়োগ পান এবং পরবর্তীতে বিটিআরসিতেও ব্যাপক দলীয়করণ এবং অনিয়ম ও দুর্নীতি করেন। এসব কাজে তাদের বিশ্বস্ত সহযোগী ছিলেন চেয়ারম্যানের নিয়ন্ত্রণাধীন ইঅ্যান্ডও বিভাগের উপ-পরিচালক মাহদী আহমেদ। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ওই দিনই কমিশনের প্রশাসন বিভাগের পরিচালক আফতাব মো. রাশেদুল ওয়াদুদ স্বাক্ষরিত অফিস আদেশ দুটিতে বলা হয়, উক্ত কর্মকর্তার (আমজাদ ও মাহদী) বিরুদ্ধে বিভিন্ন জাতীয় ও অনলাইন পত্রিকায় অসাধু সিডিকেটে জড়িত থেকে দুর্নীতি করেছেন মর্মে অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ায় এবং কর্মচারীরা বিভিন্ন সময়ে নিপীড়ন ও নিষ্পেষনের প্রেক্ষিতে তাকে বিটিআরসি চাকরি প্রবিধিমালা ২০২২ বিধি-৪৮ ও ৫৪ ধারা এবং সরকারি চাকরি (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৩ (খ), (ঘ), (ই) ও বিধি-১২ (১) অনুযায়ী কমিশনের চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। আমজাদ স্থায়ীভাবে বরখাস্ত হলেও মাহদীর। 

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) ১৬ এপ্রিল, ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০০১ (২০০১ সালের আইন নং ১৮) এর অধীনে একটি স্বাধীন কমিশন হিসেবে গঠিত হলেও পরবর্তীতে মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংস্থায় পরিণত হয়। এমন কাঠামোতেই এমন কঠোর কঠীন সিদ্ধান্ত এবারই প্রথম। 

ডিবিটেক/আইএইচ