৬ নভেম্বরের বৈঠক পর্যন্ত আইএসপিদের অবস্থান ধর্মঘট স্থগিত
রাজধানী ঢাকার আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ভবনের সামনে ৩ নভেম্বর, সোমবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মানববন্ধন করেছেন অড়াই হাজারের মতো গ্রাহক পর্যায়ে সেবাদাতা ইন্টারনেট ব্যবসায়ীরা। বিটিআরসি’র দেয়াল ঘেঁষে চারটি কাতারে রাস্তার পাশে বিক্ষোভ করতে দেখা যায় তাদের।
এসময় তাদের হাতে ছিলো- ‘দেশীয় উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের নীতিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে’; ‘টেলকো’র মেয়াদ শেষ, আইএসপিদের গড়া বাংলাদেশ’ ইত্যাদি প্রতিবাদী ফেস্টুন।
এছাড়াও প্রতীকি কার্টুনে ‘আইএসপি ধ্বংস মানি না, টেলকোর দখল চাই না’; মোবাইল অপারেটর মোবাইলে যাও, দেশীয় আইএসপি’দের বাঁচতে দাও’; ‘দেশের টাকা দেশে রাখি, ডলার পাচার সবাইর রুখি’, ‘নামের আগে দেশী লিখে, স্বার্থ খোঁজে বিদেশী কোলে’; ‘আইএসপি ধ্বংস মানবো না, রাজপথ ছাড়বো না’; ‘দেশের নেটওয়ার্ক দেশের হাতে, বিদেশীরা আসবে কোন নীতিতে’লেখা নানা প্লাকার্ড দেখা যায় ক্ষুব্ধ ইন্টারনেট ব্যবসায়ীদের হাতে।
সমবেত ইন্টারনেট ব্যবসায়ীরা খসড়া টিলিকম নীতিমালা ২০২৫ সংস্কারের দাবিতে নানা স্লোগানে বিক্ষোভ কর্মসূচি শেষে ভবনের নিচে অবস্থান ধর্মঘট পালন করেন তারা। সেখানে তারা বলেন, নতুন গাইড লাইনে মোবাইল অপারেটরদের ওয়াইফাই সেবা দেওয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে। ফলে ফিক্সড ব্রডব্যান্ডের আর অস্তিত্ব থাকবে না।
‘ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাডার্স, বাংলাদেশ (আইএসপিএবি’ এর ব্যানারে এমনি একটি প্লাকার্ড হাতে বিক্ষোভে অংশ নেয়া একটি আইএসপি প্রতিষ্ঠানের সিইও বললেন, মোবাইল অপারেটরদের সরাসরি ফাইবার অপটিক ক্যাবলের মাধ্যমে ফিক্সড ব্রডব্যান্ড সেবা দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে, যা তাদের লাইসেন্সের শর্তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কারণ তাদের লাইসেন্সে ‘সেলুলার সেবা’ প্রদানের অনুমতি থাকলেও কেবলনির্ভর ব্রডব্যান্ড সেবা দেওয়ার সুযোগ নেই। এই অনুমতি পেলে তিনটি মোবাইল অপারেটরের দখলে ইন্টারনেট বাজার চলে যাবে, ফলে প্রায় ২ হাজার ৭০০ দেশীয় আইএসপি প্রতিষ্ঠান অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। আর এটা বন্ধ করতেই আমরা সবাই এখানে অবস্থান করছি।
বিক্ষোভে অংশ নিয়ে আইএসপিএবি সভাপতি আমিনুল হাকিম গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, প্রস্তাবিত খসড়া নীতিমালার বাস্তবায়িত হলে বিদ্যমান ৩ শতাংশ ট্যাক্স-ভ্যাট ১৭ শতাংশে উন্নীত হবে। সব মিলিয়ে গ্রাহক পর্যায়ে ২০ শতাংশ খরচ বাড়বে। ৫০০ টাকার ইন্টারনেট কিনতে গ্রাহককে বাড়তি ১০০ টাকা দিতে হবে। ১০০০ হাজার টাকার সংযোগে ২০০ টাকা বেড়ে খরচ পড়বে ১২০০ টাকা।
এ সময় তিনি স্টারলিংকের লাইসেন্স ফি নিয়েও প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘ইলন মাস্কের স্টারলিংকের লাইসেন্স ফি নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র ১০ হাজার মার্কিন ডলার (প্রায় ১২ লাখ টাকা), অথচ দেশীয় আইএসপিদের জন্য এই ফি ধরা হয়েছে ২৫ লাখ টাকা। এতে দেশীয় উদ্যোক্তাদের প্রতি বৈষম্য তৈরি হচ্ছে এবং তাদের ব্যবসা বন্ধের পথে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।’
তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘যদি এখনই এই খসড়া নীতিমালার বিরুদ্ধে অবস্থান না নেওয়া হয়, তবে ভবিষ্যতে দেশে ডিজিটাল শাটডাউনের মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।’
অতীত অভিজ্ঞতা তুলে আইএসপিএবি মহাসচিব নাজমুল করিম ভূঁইয়া বলেন, ‘নীতিমালার আগে আমরা ১০টি চিঠি দিয়েছি। দফায় দফায় দফায় কনসাল্টেশন করেছি। নীতিমালায় যা বলা হয়েছে গাইডলাইনে তা প্রতিফলিত হয়নি। এর আগেও আমাদের প্রস্তাব, দাবি ও সুপারিশগুলো গুরুত্ব পায়নি। নতুন নীতিমালায় তিন মাসের মধ্যে ক্ষুদ্র ও মাঝারি আইসিপি উদ্যোক্তাদের মৃত্যু ঘটবে। তাই এবারও যদি বিটিআরসি দেশীয় আইএসপিদের স্বার্থ রক্ষায় পদক্ষেপ না নেয়, তবে আমরা কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।’
সূত্রমতে, বিক্ষোভ শেষে আইএসপিএবি সভাপতির নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি টিম দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর বিটিআরসি চেয়ারম্যানের সাক্ষাৎ পেয়েছেন। এর আগে তারা লিগ্যাল অ্যান্ড লাইসেন্সিং বিভাগের মাহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ আমিনুল হকসহ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেন। এসময় আইএসপিএবি মহাসচিব, সহসভাপতি নেয়ামুল হক খান, কোষাধ্যক্ষ মঈন উদ্দিন আহমেদ এবং যুগ্ম মহাসচিব ফুয়াদ মুহাম্মদ শরফুদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। সেখানে বৈঠক শেষে প্রতিনিধি দলটি বিটিআরসি চেয়ারম্যানের কক্ষে গিয়ে লিখিত ভাবে নতুন গাইডলাইনের ওপর আপত্তি ও সমাধান সংক্রান্ত একটি নথি দিয়েছেন। সেখানে বিটিআরসি চেয়ারম্যানের সামনে তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তিও তুলে ধরেন আইএসপি নেতারা।
বৈঠক বিষয়ে জানতে চাইলে আইএসপিএবি মহাসচিব নাজমুল করিম ভূঁইয়া বলেন, বিটিআরসি চেয়ারম্যান কথা দিয়েছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি আইএসপিএবি উদ্যোক্তাদের স্বার্থ বিরোধী কোনো নীতি তিনি করবেন না। এ বিষয়ে আরো আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন। ফলে সন্ধ্যার সময় আমরা অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছি। ৬ নভেম্বরের আগ পর্যন্ত কঠিন কোনো কর্মসূচি নেই। তবে এই বৈঠক যদি লোক দেখানো বা শান্তনার হয়; তাহলো কঠীন সিদ্ধান্তে যাবো। আরো কঠোর কর্মসূচি দেবো। সব ধরনের বৈষম্যের মূলৎপাটন করে আমাদের ন্যায্য দাবি নিয়েই ঘরে ফিরবো।
অপরদিকে বিটিআরসি চেয়ারম্যান এমদাদ উল বারী বলেছেন, দফায় দফায় মিটিং করে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী গাইড লাইন করা হয়েছে। স্ট্যাবলিশড নর্মস ফলো করেছি। তারপরও এটি নিয়ে আপত্তি থাকলে খসড়ার ওপর যে কারও মতামত দেয়ার সুযোগ রয়েছে। আগামী ৬ নভেম্বর এটি নিয়ে আমরা স্টেক হোল্ডার বৈঠক করবো।
সূত্রমতে, ৬ নভেম্বরের পর ৯ নভেম্বর আরও একটি বৈঠক হবে। বৈঠক শেষে চূড়ান্ত নীতিমালায় শেষতক কি কি বিষয় থাকে সেটা দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা।







