ইন্টারনেট বন্ধ ও এনটিএমসি বাতিলের প্রস্তাব দিয়ে টেলিকম অধ্যাদেশের খসড়া প্রকাশ

৪ নভেম্বর, ২০২৫ ২৩:০৮  
৫ নভেম্বর, ২০২৫ ১৮:২৬  
ইন্টারনেট বন্ধ ও এনটিএমসি বাতিলের প্রস্তাব দিয়ে টেলিকম অধ্যাদেশের খসড়া প্রকাশ

ইন্টারনেট বন্ধ কিংবা এই পথে বাধা সৃষ্টির দরজায় সিলগালা করে এবং নাগরিক গুমের ও নিবর্তনের কারিগর হিসেবে সমালোচিত ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) বিলুপ্তরি প্রস্তাব করেছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। ৪ নভেম্বর, মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ অধ্যাদেশ ২০২৫ এর প্রথম খসড়ার ৯৭ এর খ ধারায় এই প্রস্তাব করা হয়েছে। আগামী ৫ থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত যে কেউ এই প্রস্তাবনার বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব বরাবর পোস্ট বা ই-মেইল করে নিজের মতামত দিতে পারবেন। 

প্রস্তাবিত নীতিমালার খসড়ায় ইন্টারনেট বন্ধের পথ রুদ্ধ করে বলা হয়েছে, ‘এই আইন বা বর্তমানে বলবৎ অন্য কোনো আইনে ভিন্নতর যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোন অবস্থাতেই টেলিযোগাযোগ সংযোগ, টেলিযোগাযোগ সংশ্লিষ্ট যেকোনো সেবা এবং ইন্টারনেট বন্ধ করা যাইবে না, প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি বা সীমিতকরণ করা যাইবে না।’

অপরদিকে ইন্টাসেপশনজনিত তথ্যের সাক্ষ্য হিসবে গ্রহণযোগ্যতা শীর্ষক ধারায় বলা হয়েছে, আদালতের অনুমোদনপূর্বক বা অনুমোদনপ্রাপ্ত ইন্টারসেপশন কার্যক্রমে সংগৃহীত তথ্য আদালতে সাক্ষ্যরূপে গৃহীত হইতে পারিবে। উপধারা (১) এ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কেবলমাত্র গোয়েন্দা কার্যক্রমের উদ্দেশ্যে সংগৃহীত তথ্য আদালতে সাক্ষ্যরূপে গৃহীত হইবে না। তথ্যের উৎস, শুদ্ধতা ও সংরক্ষণ শৃঙ্খলা প্রমাণ করিতে হইবে; আদালত বা আধা-বিচারিক কাউন্সিল প্রয়োজনে সেন্ট্রাল ল’ফুল ইন্টারসেপশন প্ল্যাটফর্মের লগ বা নিরীক্ষা নথি পর্যালোচনা করিতে পারিবে।

এর আগে ৯৭ এর ক ধারায় ডিজিটাল মাধ্যমে নজরদারি বা গোয়েন্দাবৃত্তির পথ বন্ধ করতে ইন্টারশেপশন-কে ‘আইনানুগ ইন্টারসেপশন’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে, নির্ধারিত সময়সীমার জন্য, প্রয়োজনীয়তা (necessity), আনুপাতিকতা (proportionality), বৈধতা (legality) ও দায়বদ্ধতা (accountability) নীতি অনুসারে, আদালত বা আধা-বিচারিক কাউন্সিলের অনুমোদনক্রমে, সুনির্ধারিত প্রবেশাধিকারের স্তর অনুসরণ করে,  অনুমোদিত কর্মকর্তা কর্তৃক যোগাযোগ (যন্ত্র-মানব যোগাযোগসহ), বার্তা, অবস্থান, ডেটা বা তথ্যপ্রবাহ পর্যবেক্ষণ, সংগ্রহ, সংরক্ষণ বা বিশ্লেষণ কার্যক্রমকে লফুল ইন্টারশেপশন হিসেবে সঙ্গায়িত করা হয়েছে।

এই শর্তের অধীনে এনেই টেলিযোগাযোগ সেবা, ভয়েস কল, বার্তা, ইন্টারনেট ট্রাফিক ও স্ট্রিমিং সেশন সংক্রান্ত তথ্য, কল ডিটেইল রেকর্ড (CDR), ইন্টারনেট প্রোটোকল ডেটা রেকর্ড (IPDR), ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের তথ্য-উপাত্ত-কে ইন্টারসেপশনের আওতাভুক্ত করা হয়েছে। 

এতে বলা হয়েছে,  ইন্টারসেপশন কেবলমাত্র নিম্নলিখিত উদ্দেশ্যে পরিচালিত হইবে, আদালতে উপস্থাপনযোগ্য প্রমাণ সংগ্রহ, জিডি (কগনিজেবল অফেন্স), ফৌজদারি মামলার তদন্ত, নাগরিকের প্রাণরক্ষা, জননিরাপত্তায় জরুরি সহায়তা, জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ। তবে কোন ইন্টারসেপশন রাজনৈতিক, আদর্শিক বা মতাদর্শভিত্তিক কারণে কিংবা উহার দমনপীড়ন বা প্রতিহিংসা চরিতার্থের উদ্দেশ্যে পরিচালিত হইবে না।

নীতিমালার খসড়ায় ইন্টারনেট বন্ধ না করার বিধান যুক্ত করায় সাধুবাদ জানিয়েছেন প্রযুক্তিবিদ এবং ভয়েস ফর রিফর্ম সমন্বয়ক ফাহিম মাশুরুর। তবে ইন্টারশেপশন এর সঙ্গা আরো স্পষ্টকরণ এবং অতীতের মতো নজরদারি ও গোয়েন্দাগিরি বন্ধে ল-ফুল ইন্টারশেপশনের ক্ষেত্রে আইনে আদালতের অনুমতি বাধ্যতামূলক করা দরকার। 

১০২টি ধারা নিয়ে রচিত প্রস্তাবিত টেলিযোগাযোগ অধ্যাদেশ ২০২৫ বিষয়ে মতামত নেয়ার পাশাপাশি আগামী সপ্তাহে বহুপক্ষীয় সভা করা হবে বলে জানাগেছে। সূত্রমতে, এক পক্ষের মধ্যে আইনটি নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা বাংলাভাষা বাস্তবায়ন কোষের মাধ্যমে ভাষাগত বিষয় যাচাই এবং এরপর মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের ক্যাবিনেটের যাচাই বাছাই কমিটিতে খসড়া আইনটি পেশ করা হবে। ধারাবাহিক ভাবে উপদেষ্টা পরিষদ সভা এবং নীতিগত অনুমোদন নিতে আইন বিভাগের ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হবে। সবশেষে উপদেষ্টা বৈঠকে পাশ হবে আইনিটি।

আইনটি প্রণয়ণের সঙ্গে সম্পর্কিত একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন,  'আড়িপাতা' বা 'নজরদারি'র কন্সেপ্ট সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বিতর্কিত আইনটি থেকে। টেলিযোগাযোগ আইনের ৯৭ ধারার চূড়ান্ত অপব্যবহার করেই সামরিক নজরদারি চলতো দেশে, সেটির সংস্কারে হাত দিয়েছে রাষ্ট্র। ওদের আইনি ভিত্তিই ফেলে দেওয়া হয়েছে।সামরিক সংস্থা বেসামরিক নাগরিকের উপর ইন্টারসেপশন কার্যক্রম চালাতে পারবে না এই অধ্যাদেশটি পাশ হলে। অননুমোদিত যেকোনো ইন্টারসেপশনের কঠোর শাস্তি প্রস্তাব করা হয়েছে, সেটা যে-ই করুক না কেনো। এছাড়াও, কোনও অবস্থাতেই, কোনও ক্রমেই ইন্টারনেট বন্ধ করা যাবে না এরকম বিধান প্রস্তাব করা হয়েছে। অংশীজনের মতামত গ্রহণ শেষ হলে পর্যায়ক্রমে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এটা পাশের জন্য উঠবে। যেই ইন্টারনেট শাটডাউন আর নজরদারির পটভূমিতে জুলাইয়ের জন্ম, সেটির বিষয়ে রাষ্ট্র এবার তার দেনা শোধ করুক।