ট্রেন্ডের বাইরে টিকে থাকা: স্থাপত্যে স্লেটের দর্শন

ফিরোজ আল শামস
৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১৮:৩১  
ট্রেন্ডের বাইরে টিকে থাকা: স্থাপত্যে স্লেটের দর্শন

একটি নতুন বাংলাদেশি স্থাপত্য শিল্প স্টুডিও, যারা মানুষের প্রয়োজন আর উদ্দেশ্যকে প্রাধান্য দিচ্ছে, প্রতিনিয়ত। ঢাকা শহর প্রতিদিনই বদলে যাচ্ছে, চারিদিকে নতুন নতুন ভবন, নতুন নকশা। কিন্তু এই ব্যস্ততার মাঝেও Slate (স্লেট) কাজ করছে তাদের নিজস্বতায়। তারা বিশ্বাস করে, স্থাপত্য শুধু দৃষ্টিনন্দন কিছু নয়; এর আসল উদ্দেশ্য হলো মানুষের জীবনকে সহজ, সুন্দর ও অর্থবহ করা।

স্লেটের জন্য আর্কিটেকচার মানে শুধুমাত্র প্রদর্শন নয়, বরং জীবনের এক অংশ হওয়া। তাদের মূল বিশ্বাস প্রতিটি নকশার পেছনে একটি কারণ থাকা প্রয়োজন যা তাদের শিল্পকে মানুষের কাছে পৌঁছাতে সাহায্য করবে। তাদের ট্যাগলাইন "Design with Purpose” কোনো বিজ্ঞাপনী লাইন নয়, বরং তাদের কাজের মূলনীতি। প্রতিটি প্রকল্প শুরুর আগে তারা নিজেদের প্রশ্ন করে এই জায়গাটা কেন থাকা দরকার?"

এই প্রশ্নের উত্তরই গড়ে দেয় তাদের প্রতিটি কাজের দিকনির্দেশনা। হোক সেটা একটি বাড়ি বা অফিস। প্রতিটি জায়গা তারা এমনভাবে তৈরি করে যেন সেখানে মানুষ যেনো তার স্বাভাবিক ছন্দ অনুভব করতে পারে। তারা চিন্তা করে, একটি বাড়ি এমন একটি পরিবেশ যেখানে পরিবারের সদস্যরা বসবাস করে, বেড়ে ওঠে, একসাথে সময় কাটায়। অফিস প্রজেক্টগুলোর ক্ষেত্রেও একই কথা। এটি শুধু কাজের জায়গা নয়, বরং এমনভাবে ডিজাইন করা যাতে মানুষ তার নিজস্ব সৃজনশীলতার সাথে যুক্ত থাকতে পারে।

স্লেটের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো তারা সবসময় মানুষের অনুভূতিকে প্রাধান্য দেয়। তারা প্রায়ই বলে, “একটি বিল্ডিং তখনই সফল, যখন ভিতরে থাকা মানুষেরা ভালো বোধ করে, নিজেদের কানেক্ট করতে পারে।”

যখন অনেকে করতালির বা সাধুবাদের জন্য বিল্ডিং বানায়, স্লেট সেখানে তার প্রতিটি নকশা করে সময়ের পরীক্ষায় টিকে থাকার জন্য। ফলাফল হিসেবে তৈরি হয় এমন সব স্থাপত্য যা নিঃশব্দে মানুষের জীবনকে উন্নত করে। স্থাপত্যগুলো দেখিয়ে দেয়, নিঃশ্বব্দে নিজস্বতা বজায় রাখা সম্ভব।

বাংলাদেশের অন্যতম চিন্তাশীল ডিজাইন স্টুডিও হিসেবে স্লেট প্রমাণ করেছে ভালো ডিজাইন মানে দামি বা জটিল কিছু নয় বরং সৎ ও অর্থবহ কিছু। তাদের প্রতিটি প্রজেক্ট শুধু বিল্ডিং হয়ে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য নয় বরং মানুষের জীবনের অংশ হয়ে ওঠার জন্য।

স্থাপত্যের মানবিক ভাষা: সৈয়দ মোহাম্মদ ইমরান ও স্লেটের গল্প

 স্থাপত্য শুধু আজকে মুগ্ধ করবে না, আগামীকেও করবে অনুপ্রাণিত।” কথাটি বলেন স্লেট (Slate) এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ মোহাম্মদ ইমরান, যিনি স্থাপত্যের ভাষাকে পড়েন নিজের দর্শনের ভাষায়।

 সৈয়দ মোহাম্মদ ইমরান, প্রথম পরিচিতি পান এডিসন রিয়েল এস্টেট-এ কাজের মাধ্যমে, যেখানে তিনি বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রশংসিত কিছু প্রকল্পের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি বুঝতে পারেন, তাঁর দৃষ্টি প্রচলিত রিয়েল এস্টেটের সীমার বাইরে। তিনি এমন একটি জায়গা তৈরি করতে চেয়েছিলেন যেখানে ডিজাইন শুধুমাত্র বিক্রির হিসাবে নয়, বরং উদ্দেশ্যের দ্বারা পরিচালিত হবে।

 সেই চিন্তা থেকেই জন্ম নেয় স্লেট, যেখানে প্রতিটি নকশা শুরু হয় মানুষের কথা ভেবে।

 শুরুর পর থেকেই স্লেট বাংলাদেশের আধুনিক স্থাপত্যকে এক নতুন রূপ দিয়ে চলছে। চকচকে ভবন আর ধার করা নকশায় যেখানে শহরটা ভরে আছে, সেখানে সেই একই শহরের বুকে স্লেটের কাজ আলাদা জায়গা করে নিয়েছে। তাদের স্থাপত্য বিদেশি স্টাইলের নকল নয়, বরং এমন নকশা তৈরি করা যা আমাদের আবহাওয়া, সংস্কৃতি ও জীবনের সঙ্গে মানিয়ে যায়।

 ইমরানের নেতৃত্বে, স্লেট প্রতিটি প্রকল্পকে এক একটি গল্প হিসেবে দেখে। তাদের প্রথম প্রশ্ন থাকে, “এই জায়গাটা যুগের পর যুগ ধরে কিভাবে বেঁচে থাকবে।?” ছোট্ট একটি বাড়ি হোক বা বড় কোনো উন্নয়ন প্রকল্প, প্রতিটিতেই তারা খুঁজে নেয় বিষয়, অনুভূতি ও টেকসইতা।

ইমরানের কাছে ডিজাইন মানে প্রতিযোগিতা নয়, বরং মানুষের অনুভূতি বুঝতে পারা। তাঁর নেতৃত্বে স্লেটের দল নির্ভুলতা ও সংবেদনশীলতাকে একত্র করে এমন স্থাপনা গড়ে তুলছে, যা দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকছে।

 বাংলাদেশের স্থাপত্য যখন দ্রুত বদলাচ্ছে, স্লেট সেখানে এক নীরব বিপ্লব। তারা মনে করিয়ে দেয়, অগ্রগতি শুধু কাঁচ আর ইস্পাতে হয় না, হয় চিন্তা, সংযম এবং মানবিকতার মধ্য দিয়ে। স্লেটের মাধ্যমে সৈয়দ মোহাম্মদ ইমরান শুধু ভবন নির্মাণ করছেন না, তৈরি করছেন একটি চিন্তার শিল্প। তাঁর বিশ্বাস, একটি ভালো স্থাপত্য মানে মানুষের হৃদয়কে ছুঁতে পারা, শুধু আকাশকে নয়।


লেখকঃ সিনিয়র মিডিয়া অ্যাডভাইজার, টপ অব মাইন্ড


দ্রষ্টব্য: অভিমত-এ প্রকাশিত পুরো মতামত লেখকের নিজের। এর সঙ্গে ডিজিটাল বাংলা মিডিয়া কর্তৃপক্ষের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। বহুমতের প্রতিফলন গণমাধ্যমের অন্যতম সূচক হিসেবে নীতিগত কোনো সম্পাদনা ছাড়াই এই লেখা প্রকাশ করা হয়। এতে কেউ সংক্ষুব্ধ বা উত্তেজিত হলে তা তার একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়।