২৩ মার্চ যুক্তরাজ্যে পৌঁছবে বাংলাদেশের মাইক্রোটানেল বোরিং মেশিন

বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা যে বিশ্বমানের প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পিছিয়ে নেই, তা প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছেন অনেক তরুণ। আগামী ২৭-২৯ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে অনুষ্ঠিতব্য ইলোন মাস্কের নট আ বোরিং কম্পিটিশনের চূড়ান্ত পর্বে আবারো নিজেদের সেরাটা দেখাতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। টানেল নির্মাণ সম্পর্কিত উদ্ভাবনী ধারণা ও প্রযুক্তি নিয়ে নির্মিত লাল-সবুজের পতাকাবাহী ‘বোরড টানেলারস’ দলের তৈরি টানেলিং মেশিন মাইক্রোটানেল বোরিং মেশিনটি (এমটিবিএম) বিমানযোগে যুক্তরাজ্যে পৌঁছবে ২৩ মার্চ। দলটি এর আগেও এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে জয় করেছিলো ‘রুকি অ্যাওয়ার্ড’।
নগর পরিকল্পনা, পরিবহন, অবকাঠামো, প্রতিরক্ষা, মহাকাশ গবেষণা এবং খনিজ অনুসন্ধানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে টানেল নির্মাণের খরচ কমানো ও কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে বিশ্বিবিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয় ইলন মাস্কের ‘নট আ বোরিং কম্পিটিশন’। টানেল নির্মাণ সম্পর্কিত উদ্ভাবনী ধারণা ও প্রযুক্তি অনুষ্ঠিতব্য এবারের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে আগামী ২৭-২৯ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে অবস্থান করবে ‘বোরড টানেলারস’ এর ৪০ সদস্যের দলের ১৯ সদস্য।
এরাই আগামী ২৭-২৯ মার্চ নিজেদের তৈরি এমটিবিএম ব্যবহার করে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর টানেল খননের দক্ষতায় এগিয়ে থাকার কসরত দেখাবে। এর আগে অবশ্য ২৪-২৬ মার্চ তাদের তৈরি যন্ত্রটির পরীক্ষা ও মূল্যায়ন চলবে। প্রতিযোগিতা শেষে ৩০ মার্চ ক্লিনআপ ও ১ এপ্রিল চূড়ান্ত প্যাকিং সম্পন্ন হবে।
প্রতিযোগিতায় দলগুলোকে ৩০ মিটার দীর্ঘ ও ৬০০ মিলিমিটার প্রশস্ত একেকটি টানেল খনন করতে হবে। খননের গতি, নির্ভুলতা ও নতুন প্রযুক্তির প্রয়োগ এ তিনটি বিভাগে প্রতিযোগীদের মূল্যায়ন করা হবে। প্রতিযোগিতার উদ্দেশ্য হলো নগর পরিকল্পনা, পরিবহন, অবকাঠামো, প্রতিরক্ষা, মহাকাশ গবেষণা এবং খনিজ অনুসন্ধানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে টানেল নির্মাণের খরচ কমানো ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি করা।
বোরড টানেলারস গঠিত হয় ২০২৩ সালে। তারা মাইক্রোটানেল বোরিং মেশিন (এমটিবিএম) নামে একটি বিশেষ যন্ত্র তৈরি করেছে, যা রোবোটিকস এবং মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল, সিভিল ও কম্পিউটার প্রকৌশল ব্যবহার করে কার্যকরভাবে মাটির নিচে সুড়ঙ্গ খনন করতে পারে।
ইডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের (আইইউবি) অ্যাকাউন্টিং বিভাগের শাহ আসিফ হাফিজ ও ফাইন্যান্স বিভাগের দেওয়ান মো. আলিফ এবং আহ্ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের প্রথম অর্ধবর্ষের শিক্ষার্থী রাফিদ রাইয়ানসহ বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ২০২৩ সালে গঠিত হয় বাংলাদেশের ‘বোর্ড টানেলার্স’।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (বুয়েট), রাজশাহী ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (রুয়েট), মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (এমআইএসটি), ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা বোরড টানেলারস দলে যুক্ত রয়েছেন।
বোর্ড টানেলারস তাদের প্রযুক্তি আরো উন্নত করতে বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স সেন্টারের (বিটাক) কারিগরি সহায়তা পাচ্ছে। এতে অর্থায়ন করছে গ্রামীণফোন। এছাড়াও সুপার স্টার গ্রুপ, রবিন্স এডু, স্পেকট্রাম, মার্স সলিউটিওস, ইনোভেটেক্স, দ্য আনটাইটেলড কোম্পানি, কসমো গ্রুপ এবং বাংলাদেশ সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কারিগরি ও আনুষঙ্গিক নানা বিষয়ে সহায়তা করছে।
উপদেষ্টা হিসেবে আছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব হিউস্টনের গ্র্যাজুয়েট টিচিং অ্যান্ড রিসার্চ ফেলো সালমান প্রোমন; বিটাকের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুনুর রশিদ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. আশরাফুজ্জামান এবং এমআইএসটি এর মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের লেকচারার আহসান সিদ্দিকী।
বাংলাদেশের প্রথম আন্ডারগ্রাউন্ড টানেল বোরিং মেশিন বানানো এবং বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশকে তুলে ধরার গল্প নিয়ে টিম বোরড টানেলারসের প্রেসিডেন্ট ও কো-ফাউন্ডার শেখ মোহাম্মদ শিথিল বলেন, বাংলাদেশের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০ জন মেধাবী প্রকৌশলী আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়। এর মধ্য দিয়ে গত বছর আমাদের যাত্রা শুরু হয়।
প্রজেক্ট ম্যানেজার ইমরান খান বলেন, ‘আমাদের দলের বিশেষত্ব হলো ভার্সেটাইল টিম। যেখানে বাংলাদেশের শীর্ষ ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রিক্রুট করা হয়েছে।
ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কো-ফাউন্ডার ফাহিন উদ্দীন এনান বলেন, আমরা প্রথম যে সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি সেটা হলো প্রাথমিক তহবিলের জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগাযোগ করলেও সেটি পাওয়া অনেক কঠিন ছিল।’
দলের আরেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কো-ফাউন্ডার শাহরিয়ার ইকবাল মাহীম বলেন, টিবিএম এমন এক প্রযুক্তি যেটির ওপেন সোর্স রিসোর্স অনেক কম, তবুও ৪০০ প্রতিযোগীর মধ্যে আমরা এশিয়া থেকে নির্বাচিত হয়েছি। আশা করছি আমরা বড় কিছু করতে পারব।
বোরড টানেলারস দলের সদস্য আইইউবির অ্যাকাউন্টিং বিভাগের শিক্ষার্থী শাহ আসিফ হাফিজ বলেন, ‘গত বছর আমরা যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে আমাদের পরিকল্পনা উপস্থাপন করি। ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়া, ভার্জিনিয়া টেক, ইটিএইচ জুরিখ এবং ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসের মতো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয়। তখনো আমাদের যন্ত্রটি পুরোপুরি তৈরি হয়নি, তাই আমরা শুধু আমাদের আইডিয়া উপস্থাপন করেছিলাম এবং ফাইনালে পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিলাম। রুকি অ্যাওয়ার্ডও জিতেছিলাম। এবার আমরা যন্ত্রটিকে আরো উন্নত করেছি এবং আশা করছি যে মার্চে যুক্তরাষ্ট্রে যে প্রতিযোগিতা হবে সেখানে সেটিকে কার্যকরভাবে চালাতে পারব।
টিম বোরড টানেলারসের মিডিয়া অ্যানালিস্ট রাফিদ রাইয়ান বলেছেন, গত বছর ধরে আমরা উন্নত দক্ষতার সঙ্গে আমাদের টানেলিং মেশিনকে পরিমার্জন করেছি। এর মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশকে টানেলিং উদ্ভাবনের কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাই এবং বিশ্বব্যাপী ইঞ্জিনিয়ারিং চ্যালেঞ্জগুলিতে অংশ নিতে আরও বেশি শিক্ষার্থীকে অনুপ্রাণিত করতে চাই।