ডেটা ওয়্যার হাউজের ৭ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ৫ কৌশল নির্ধারণ

১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১৭:২৯  
ডেটা ওয়্যার হাউজের ৭ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ৫ কৌশল নির্ধারণ

কোরিয়ার অর্থায়নে আধুনিক ডেটা ওয়্যারহাউজ স্থাপন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। এ ডেটা স্থাপন হলে পরিসংখ্যান ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা এবং শৃঙ্খলা আনয়নের পাশাপাশি পরিসংখ্যান পরিষেবার সক্ষমতা বাড়বে। বিবিএস’র ডেটায় সবাই প্রবেশাধিকার পাবে। এতে তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াও শক্তিশালী হবে।  তবে এক্ষেত্রে ডেটা সোর্সিং, অবকাঠামো, সক্ষমতা ও দক্ষতা, আর্থিক সীমাবদ্ধতা এবং ডেটার নিরাপত্তা ও গোপনীয়তাকে চ্যালেঞ্জ যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে সাংগঠনিক ও সাংস্কৃতিক বাঁধা ও পরিচালনায় মুন্সিয়ানার অভাব।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বিবিএস মিলনায়তনে মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত এক কর্মশালায় এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়। আলোচনায় এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নির্ধারণ করা হয়েছে বেশ কিছু কৌশলও। এগুলো হলো- পাইলট প্রকল্প গ্রহণ, লিভারেজ ওপেন সোর্স টুলস, আন্তঃ সহযোগিতা, ক্লাউড পরিসেবা এবং পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি করা। এ নিয়ে এ প্রসঙ্গে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেছেন, ‘চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে ডেটার নিরাপত্তা একটি অন্যতম বিষয়। সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করা হচ্ছে। আশা করছি এসব চ্যালেঞ্জ সময়মতো মোকাবিলা সম্ভব হবে।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, সচিব পরিসংখ্যান ও তথ্যবিজ্ঞান বিভাগ মো. মাহবুব হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন- আইসিটি বিভাগ, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মুহাম্মদ আনোয়ার উদ্দিন এবং পরিসংখ্যান ও তথ্যবিজ্ঞান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. হামিদুল হক। 

এসময় বক্তব্য দেন-  কোইকা বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর তাইয়ং কিম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, প্রকল্প পরিচালক কবির উদ্দিন আহমেদ।

বিবিএস জানায়, পরিসংখ্যান পরিষেবার সক্ষমতা বৃদ্ধি ২০২৩ সালের অক্টোবরে প্রকল্পটি শুরু হয়। আগামী ২০২৬ সালের ডিসেম্বর সমাপ্ত হবে। এই প্রকল্পের মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ১৪৪ কোটি ৭ লাখ টাকা। যার মধ্যে জিওবি ফান্ড থেকে ৩৭.৯২ কোটি এবং কোইকার অর্থায়ন অনুদান ১০৬.১৫ কোটি টাকা (প্রকল্প সাহায্য)। 

প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্যগুলো হলো- একটি সমন্বিত ডেটা ওয়্যারহাউজ স্থাপন, বিদ্যমান সার্ভার রুমের সংস্কার, ছোট পরিসরে বিগ ডেটা প্ল্যাটফর্ম স্থাপন, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মানবসম্পদ উন্নয়ন। 

পরিসংখ্যান আইন, ২০১৩ অনুযায়ী দেশের পরিসংখ্যানিক কার্যক্রমকে আরও সুশৃঙ্খল, সময়োপযোগী এবং ডেটা-চালিত করার ক্ষেত্রে এই ডেটা ওয়্যারহাউজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। প্রকল্পের মাধ্যমে একটি কেন্দ্রীয় তথ্য ভাণ্ডার প্রস্তুত করা হবে। যা বিভিন্ন উৎস থেকে আসা বৃহৎ পরিমাণ পরিসংখ্যানিক ডেটা সংরক্ষণ, পরিচালনা এবং বিশ্লেষণের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এতে দেশের পরিসংখ্যান প্রণয়ন ব্যবস্থা আরও কার্যকর ও দক্ষ হবে। তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া শক্তিশালী হবে। তথ্যভাণ্ডারটি ডেটা সংরক্ষণ, স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন, অ্যাক্সেসিবিলিটি, আর্কাইভ, সিকিউরিটি, প্রক্রিয়াকরণ, টাইম সিরিজ ডেটা প্রস্তুতি, বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদন তৈরি এবং পরিসংখ্যান ব্যবস্থার কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। 

বিগ ডেটা প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ডেটা একীকরণ, এনক্রিপশন, ভিজ্যুয়ালাইজেশন, রিয়েল-টাইম প্রক্রিয়াকরণ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভিত্তিক বিশ্লেষণ এবং ডেটা ব্যবস্থাপনা ও বিশ্লেষণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি ও অবকাঠামো প্রস্তুত করা হবে। ফলে বিগ ডেটা এবং বিজনেস ইন্টেলিজেন্স (বিআই) ব্যবহার করে তথ্য প্রক্রিয়াকরণ ও বিশ্লেষণ করা সম্ভব হবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বর্তমানে বিচ্ছিন্নভাবে পরিচালিত সার্ভার-ভিত্তিক সিস্টেমগুলোকে সমন্বিত করা হবে। সার্ভার রুমের অবকাঠামো উন্নয়ন করা হবে। সার্ভার এবং স্টোরেজ ব্যবস্থাপনায় সুশৃঙ্খলা আনয়ন করা হবে। ফলে সার্ভার ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম উন্নয়ন হবে। ডেটা ওয়‍্যারহাউজ প্রতিষ্ঠার ফলে একটি কেন্দ্রীয় স্থানে একই ফরম্যাটে সব ডেটা সংরক্ষণ করা যাবে। এতে ডেটা অ্যাক্সেস সহজ হবে এবং সময় ও সম্পদের সাশ্রয় হবে।

এছাড়া এই প্রকল্পের মাধ্যমে পরিসংখ্যান সেবা আধুনিকীকরণের জন্য একটি মাস্টার প্ল্যান প্রণয়নকরণ, তথ্য প্রযুক্তি অবকাঠামো উন্নয়নকরণ, নতুন সিস্টেম এবং প্রযুক্তির কার্যকর ব্যবহার ও স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে ব্যুরোর জনবলের দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। কোরিয়া আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা বা কোইকার কারিগরি ও আর্থিক সহায়তায় এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে।