রমনার ডিসি’র মুখ চেপে ধরা ছবি কি এআই দিয়ে তৈরি?

২৯ আগষ্ট, ২০২৫ ১১:১৯  
২৯ আগষ্ট, ২০২৫ ২২:০৯  
রমনার ডিসি’র মুখ চেপে ধরা ছবি কি  এআই দিয়ে তৈরি?

গত ২৭ আগস্ট ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. মাসুদ আলমকে নিয়ে এক ছাত্রের মুখ চেপে ধরার ছবিটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি বলে দাবি করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। 

অপরদিকে চারটি ভিন্ন সংবাদপত্রের ফটো সাংবাদিক জানিয়েছেন, তারা প্রত্যক্ষভাবে ঘটনাস্থল থেকে ছবিটি তুলেছেন।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত দ্য ডেইলি স্টারের আলোকচিত্রী অর্কিড চাকমা ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। অর্কিড বলেন, "অন্যান্য আলোকচিত্রীদের সাথে আমি শহীদ আবু সাঈদ আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টার এবং ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের মধ্যবর্তী সড়ক বিভাজকের কাছে দাঁড়িয়ে ছিলাম," ।তিনি আরও বলেন "গতকাল দুপুর সোয়া ২টার দিকে, মিন্টো রোড থেকে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের দিকে আসা একদল পুলিশ শিক্ষার্থীদের কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউয়ের দিকে ঠেলে দেয়। সেই মুহূর্তেই পুলিশ বিক্ষোভকারীদের একজনকে আটকে দেয়। বেশ কয়েকজন আলোকচিত্রী সেই মুহূর্তটি ক্যামেরাবন্দি করেন। পরে, জনতা ছত্রভঙ্গ করার জন্য জলকামান ব্যবহার করা হয়।তখন আমার আশপাশে আরও কয়েকজন ছিলেন, যারা ছবিটা তুলেছেন। এটা এআই জেনারেটেড হওয়ার প্রশ্নই আসে না।”

মুখ চেপে ধরার ওই ছবি বৃহস্পতিবার প্রথম পাতায় ছেপেছে দৈনিক মানবজমিন, ছবিটি তুলেছেন পত্রিকাটির ফটো সাংবাদিক আবু সুফিয়ান জুয়েল। ওই ছবিতে মুখ চেপে ধরে কিছুটা ঝুঁকে থাকার ভঙ্গিতে রয়েছেন দুজনই। তিনি বলেন, “ভাই, আমার ছবিই সাক্ষী। আমি নিজ হাতে তুলেছি।”


বাংলাদেশ প্রতিদিনের ফটো সাংবাদিক জয়ীতা রায় ফেসবুকেও ছবিটি শেয়ার করেছেন। তিনি বলেন, ছবিটি ইন্টারকন্টিনেন্টালের মোড়ে আবু সাঈদের নামে যে হাসপাতালটি করা হয়েছে, তার সামনে থেকে তোলা বুধবার দুপুর ২টার দিকে। শিক্ষার্থীদের মিছিলটিকে ঠেকাতে না পেরে পুলিশ যখন জলকামান, টিয়ার শেল ছোঁড়া শুরু করে, তখন ওই পুলিশ কর্মকর্তা পেছন থেকে এক বিক্ষোভকারীকে জাপটে ধরার চেষ্টা করেন। তাদের মধ্যে সামান্য ধস্তাধস্তির মত পরিস্থিতি হয়। খুব অল্প সময়ের মধ্যে ঘটে যায় সেই ঘটনাটা এবং পরে অবশ্য অন্য বিক্ষোভকারীরা এসে সেই ছেলেটিকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।


একই ধরনের মুখ চেপে ধরার একটি ছবি গণমাধ্যম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড তাদের ফেসবুক পেজে শেয়ার করে জানান ছবিটি তুলেছেন তাদের সাংবাদিক রাজিব ধর।

তবে ছবিটি বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর  বৃহস্পতিবার ডিএমপি থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছে, কে বা কারা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যমূলকভাবে এই ছবিটি তৈরি করে জনমনে অহেতুক বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ছবিটি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে বোঝা যায় তা সম্পূর্ণ এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি এবং বাস্তবতা বিবর্জিত।

ফ্যাক্ট-চেক বিশ্লেষণ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাইফুল আলম চৌধুরী ছবিটি বিশ্লেষণ করেছেন। তিনি ‘সাইট ইঞ্জিন’সহ ছয়টি টুলসে যাচাই করে দেখেন—ছবিটি এআই জেনারেটেড নয়।


তিনি বলেন, পুলিশের দাবির কোনো প্রযুক্তিগত ভিত্তি নেই। “এআই জেনারেটেড ছবি শনাক্ত করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো মেটাডেটা এনালাইসিস। পুলিশের মধ্যে এমন দক্ষতা নেই বলেই আমার মনে হয়।"

সমালোচকরা এখন বলছেন, শিক্ষার্থীদের দমনে পুলিশ পুলিশ ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অনুরূপ যে অন্যায় পথ অবলম্বন করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রমনা বিভাগ কর্তৃক তা গোপন করার অপচেষ্টা স্পষ্ট হয়েছে এবং পুলিশের এই স্বৈরাচারী আচরণ পুনরায় আলোচনার জন্ম দিয়েছে।