‘বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও ক্যারিয়ার  উন্নয়ন’ ‘সম্পাদক’ প্রার্থী যারা

ডাকসুতে গুরুত্ব পাচ্ছে আরও ৩ পদ; ফ্যাক্টর হতে পারে সোশ্যাল মিডিয়া

২১ আগষ্ট, ২০২৫ ০০:৫৩  
২১ আগষ্ট, ২০২৫ ১৩:১৭  
ডাকসুতে গুরুত্ব পাচ্ছে আরও ৩ পদ; ফ্যাক্টর হতে পারে সোশ্যাল মিডিয়া

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন-২০২৫-এ অংশ নিতে এরই মধ্যে আত্মপ্রকাশ করেছে ৮টি প্যানেল। গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’, ছাত্রশিবিরের ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’, উমামা ফাতেমার নেতৃত্বে ‘স্বতন্ত্র ঐক্যজোট’, বামপন্থি শিক্ষার্থীদের ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’, ছাত্র অধিকার পরিষদের ‘ডাকসু ফর চেঞ্জ’, ইসালামী ছাত্র আন্দোলনের ‘সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ’ এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক মাহিন সরকারের স্বতন্ত্র প্যানেল ‘ডিইউ ফার্স্ট’। 

নির্বাচনে ভিপি, জিএস এবং এজিএস ছাপিয়ে এবার  ‘গেস্টরুম সংস্কৃতির’ নামে হলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন এবং হলে লেজুড় বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতির বিপরীতে শিক্ষার্থীদের একাট্টা থাকতে দেখা গেছে। তাই এই নির্বাচনে আলোচনায় রয়েছে কমনরুম রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদটি। এই পদে নারী প্রার্থীর প্রাধান্য দেখা যাচ্ছে। তবে বড় পদগুলো ছাপিয়ে প্রচ্ছন্ন ভাবে যুথবদ্ধ ক্যারিয়ার ফোকাস নেতৃত্ব বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে। সঙ্গত কারণেই জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী ডাকসু নির্বাচনে ১৩ নির্বাহী সদস্যের মধ্যে প্রাধান্য পাচ্ছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক এবং ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদকের পদ। 

এই দুই পদে প্যানেল ভিত্তিক প্রার্থীদের মধ্যে সবার আগে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল প্রকাশ করা ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক পূর্ণাঙ্গ প্যানেল’ থেকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে ইকবাল হায়দার এবং ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক মাজহারুল ইসলামকে মনোনয়ন দিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্র শিবির। তাদের প্যানেলে আছেন কমনরুম রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে উম্মে সালমা।   

ক্যাম্পাসে নেতৃত্ব দিতে আগ্রহী জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্যানেলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে এহসানুল ইসলাম এবং ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক পদে মো. আরকানুল ইসলাম রূপককে মনোয়নয়ন দেয়া হয়েছে। এর বাইরে আলোচিত কমন রুম, রিডিং রুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে তাদের প্রার্থী চেমন ফারিয়া ইসলাম মেঘলা। 

‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেল থেকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে আহাদ বিন ইসলাম শোয়েব এবং ক্যারিয়ার ও উন্নয়ন সম্পাদক পদে রেজওয়ান আহম্মেদ রিফাত প্রার্থী হয়েছেন। এই প্যানেলে কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে মিতু আক্তার। 

এছাড়াও বাম সংগঠনগুলোর মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’ প্যানেলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে ফাতিন ইশরাক এবং লিটন ত্রিপুরাকে দেয়া হয়েছে ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক পদের টিকিট। আর কমনরুম, রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে প্রার্থী নূজিয়া হাসিন (রাশা)।

‘ভোট ফর চেঞ্জ’ স্লোগানে ছাত্র অধিকারের ‘ডাকসু ফর চেঞ্জ’  প্যানেলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে মো. শাকিল খানের নাম ঘোষণা করা হলেও ক্যারিয়ার কিংবা কমনরুম সম্পাদকে কোনো প্রার্থী দেয়া হয়নি। 

‘সমন্বিত শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে আবদুল্লাহ ইবনে হানিফ আরিয়ান এবং কমন রুম, রিডিং রুম ও কাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে ফারজানা আক্তার মিতু-কে প্রার্থী করা হয়েছে। তবে ক্যারিয়ার উন্নয়নে তারা কোনো প্রার্থী দেয়নি। 

এদিকে নির্বাচনে যৌথ প্যানেল ঘোষণা করেছে তিনটি বামপন্থী ছাত্রসংগঠন। ছাত্রসংগঠনগুলো হলো ছাত্র ইউনিয়ন (মাহির–বাহাউদ্দিন), সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (বাসদ) ও ছাত্রলীগ–বিসিএল (বাংলাদেশ জাসদ)।‘অপরাজেয় ৭১–অদম্য ২৪’ নামের ১৫ সদস্যের এই প্যানেলে রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে সুর্মী চাকমার নাম ঘোষণা করা হলেও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক এবং ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক পদে কোনো প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি।

উমামা ফাতেমার নেতৃত্বে ‘স্বতন্ত্র ঐক্যজোট’ এবং ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের প্যানেলেও বিজ্ঞান ও ক্যারিয়ার সম্পাদক পদ দুটিতে কোনো প্রার্থী দেয়া হয়নি।  

তবে বড় তিন পদের বাইরে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রতিযোগিতামূলক সময়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং ক্যারিয়ান উন্নয়ন সম্পাদকের পদটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন অর্গানাইজেশন স্ট্রাটেজি অ্যান্ড লিডারশিপ বিভাগের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার হোসাইন শিশির। তার মতো অনুজীব বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেনের মতে, দেশের সর্বোচ্চ এই বিদ্যাপিঠ ভবিষ্যত মানব সম্পদ গঠনের ক্ষেত্রে অনন্য। ফলে অবশ্যই নির্বাচনে ক্যারিয়ার উন্নয়ন পদটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করলেন ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের শিক্ষার্থী তাছলিমা আক্তার বিথি।

বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীদের তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সবাই নিজেদের প্যানেলকে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক’ দেখাতে চেয়েছে। সে জন্য প্রায় সবাই নিজেদের প্যানেলে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থী এবং নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছে। তবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং ক্যারিয়ার উন্নয়নকে গুরুত্ব দিতে ততটা অন্তর্ভূক্তিমূলক দেখা যায়নি।   

এদিকে নির্বাচনের ভোটের প্রচার প্রচারণা শুরু না হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হলভিত্তিক বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। এসব গ্রুপে ইতোমধ্যে কে কোন পদে দাঁড়াচ্ছেন, কী পরিবর্তন আনতে চান, তা জানাচ্ছেন প্রার্থীরা। নির্বাচনের নিয়ে অনলাইনে উৎসবের পরিবেশ তৈরি হয়েছে।কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ-০২ নামে দুটি ফেসবুক গ্রুপ বেশ সক্রিয়। প্রথম গ্রুপে ৬৭ হাজার এবং দ্বিতীয় গ্রুপে ৪৯ হাজার শিক্ষার্থী যুক্ত রয়েছেন। ফলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংযোগ ঘটাতে নিয়মিতই এই গ্রুপগুলোতে পোস্ট করছেন প্রার্থীরা। 

এছাড়াও নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অনেকেই বিভিন্ন হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করছেন। অনেকেই নিজের ছবি এবং ইশতেহার সংবলিত ছবি ব্যবহার করছেন। কেউ কেউ লেখার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে নিজের ভাবনা এবং ভিশন তুলে ধরছেন। ফলে নির্বাচনে ফেসবুকের প্রচার-প্রচারণা একটি বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারে। এরইমধ্যে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদসহ বিভিন্ন প্যানেল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নিজেদের দিকে ভোট টানতে অনলাইন পরিসরে কার্যক্রম শুরু করেছেন। ভোটের মাঠে এটি বড় প্রভাবক হতে পারে।

ডাকসু নির্বাচনে ২০ আগস্ট, বুধবার মনোনয়নপত্র জমা দেয়া শেষ হয়েছে। বিকেলে এক ব্রিফিংয়ে নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন জানান, ডাকসুর কেন্দ্রীয় সংসদের ২৮ পদে মোট ৫০৯টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। যদিও বিভিন্ন পদের জন্য শিক্ষার্থীরা ৬৫৮টি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। সেই হিসাবে ১৪৯টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েনি। 

সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ১৮টি হল সংসদে ২৩৪টি পদের জন্য ১ হাজার ৪২৭টি মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়েছিল। এর মধ্যে ১ হাজার ১০৯টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। বাকি ৩১৮টি জমা পড়েনি। 

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এবার ডাকসুতে ভিপি, জিএসসহ পদ ২৮টি। গত নির্বাচনে (২০১৯ সালে) পদ ছিল ২৫টি। এবার তিনটি পদ বাড়ানো হয়েছে। আর প্রতিটি হল সংসদে নির্বাচন হবে ১৩টি পদে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন হল আছে ১৮টি। হলের বাইরে আট কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ হবে। ইতিমধ্যে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। চূড়ান্ত তালিকায় মোট ভোটার ৩৯ হাজার ৭৭৫ জন। এর মধ্যে ছাত্র ভোটার ২০ হাজার ৮৭৩ জন ও ছাত্রী ভোটার ১৮ হাজার ৯০২ জন।