যাকাত আদায়ে ব্লক চেইন-এআই প্রযুক্তি ব্যবহারের পরামর্শ

৩০ মার্চ, ২০২৫  
৩০ মার্চ, ২০২৫  
যাকাত আদায়ে ব্লক চেইন-এআই প্রযুক্তি ব্যবহারের পরামর্শ

মুসলিমদের রোজার সময় ফুরিয়ে আসার আগেই ঈদের আনন্দের সাথে যুক্ত হয়েছে সাদাকাতুল ফিতরা ও যাকাতের কথা। প্রতিবছর ১২ কোটি টাকার মতো যাকাত সংগ্রহ করে নাবিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ (ইফাবা)। তবে এই আয় ১২ লাখ কোটি টাকায় উন্নীত করা সম্ভব বলে মত ইসলামিক বিশেষজ্ঞ এবং অর্থনীতিবীদদের।

তারা মনে করেন, বিদ্যমান যাকাত ব্যবস্থাপনায় বিদ্যমানকাঠামোগত দুর্বলতা এবং অস্বচ্ছতা দূর করতে ব্লক চেইন এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার পারলে শুধু যাকাতের অর্থ দিয়েই ১০ বছরের মধ্যে দেশ থেকে পুরোপুরি দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঝিমিয়ে পড়া যাকাত ফান্ডের কার্যক্রম ফের গতিশীল করতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো প্রয়োজন।

ইফাবা'র আয়োজনে যাকাতের উপর সম্প্রতি অনুষ্ঠিত একটি জাতীয় সেমিনারে যাকাত সংগ্রহ, বিতরণ ও ডাটা সংরক্ষণে ও এআই ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সেমিনারে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি বিভাগের প্রধান ও ইসলামিক ব্যাংকিং, ফিন্যান্স অ্যান্ড ইকোনমিক্স ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ড. মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, যাকাতদাতা ও গ্রহীতার কোনো তথ্য বর্তমান সিস্টেম নেই। এআই ব্লক চেইনের মাধ্যমে সবার তথ্য সংগ্রহ করে তা সংরক্ষণ করার সম্ভব। এতে একই ব্যক্তির বারবার যাকাত পাওয়াসহ আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের মিস-ইউজ এড়ানো সম্ভব। একজন ব্যক্তি কত টাকা যাকাত দিল এবং অন্যজন কত পেল, তা সবসময় সংরক্ষণ থাকবে। তিনি আন্তর্জাতিক উদাহরণ টেনে বলেন, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া এআই ব্যবহার করে যাকাত ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও দক্ষতা নিশ্চিত করেছে।

প্রযুক্তি ব্যবহারের ব্যাখ্যায় ড. মোহাম্মদ ওমর ফারুক আরো বলেন, ব্লক চেইন সিস্টেম হলো একবার কারও তথ্য এন্ট্রি হলে ম্যানুয়ালি বা টেকনিক্যালি কখনই সেটি পরিবর্তন হবে না। কারও তথ্য একবার এন্ট্রি হলে প্রতি বছর ব্যবহার করা যাবে এবং কোনোভাবে টেম্পার করা সম্ভব হবে না। মডার্ন সাপ্লাই চেন সিস্টেমের এ প্রযুক্তি এখন প্রায় সবাই ব্যবহার করছে। যাকাত আদায় ও বিতরণে আমরাও এ প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারি।‌ কেননা এ প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যক্তি যদি জানতে চান তার দেওয়া টাকা কোথায় গেল, সেটি তিনি জানতে পারবেন। তার দেওয়া যাকাতের অর্থ কাকে কত দেওয়া হয়েছে, সেটিও তিনি জানতে পারবেন। শুধু তা-ই নয়, তিনি চাইলে ট্র্যাকিংও করতে পারবেন। প্রযুক্তির মাধ্যমে যদি এমন স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা যায় তাহলে মানুষের আস্থা বাড়বে এবং সরকারি ফান্ডে যাকাত আদায়ের পরিমাণও বাড়বে। তার সাথে একমত প্রকাশ করে যাকাতের শক্তিতে ১০ বছরেই দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব মন্তব্য করেছেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন।

তিনি বলছেন, দারিদ্র্য নিরসনে সর্বশ্রেষ্ঠ পন্থা হলো যাকাত। এটি ফরজ হলেও আমাদের দেশে যাকাত আদায়ের বিষয়টি অনেকে ঐচ্ছিকভাবে নিয়েছেন। যার মন চায় তিনি যাকাত দেন, আর মন না চাইল দেন না। অথচ ‌বাংলাদেশ থেকে বছরে লাখ কোটি টাকার যাকাত আদায় সম্ভব। যথাযথভাবে এ টাকা আদায় ও বিতরণ করা গেলে ১০ বছরের মধ্যেই এ দেশকে ভিক্ষুকমুক্ত করা সম্ভব। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ অরলিয়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ইসলামী অর্থনীতিবিদ ড. কবীর হাসান এক গবেষণায় দেখিয়েছেন, বাংলাদেশে সঠিকভাবে যাকাত আদায় করতে পারলে টাকার অঙ্ক এক লাখ কোটি টাকা দাঁড়াবে। যা দিয়ে দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন আনা সম্ভব।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশি ও বিদেশি অন্তত পাঁচটি গবেষণায় উঠে এসেছে, বাংলাদেশে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক যে সম্পদ রয়েছ তাতে বছরের এক লাখ কোটি টাকার যাকাত আদায় সম্ভব। সেখানে আরও বলা হয়েছে, দেশের মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করেন। তারা যাকাত পাওয়ার যোগ্য। যাকাতের এক লাখ কোটি টাকা আদায় করতে পারলে সর্বোচ্চ সাত থেকে ১০ বছরের মধ্যে দেশ থেকে পুরোপুরি দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব। সেই লক্ষ্য নেই এবার মাঠে নামছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। প্রতিষ্ঠানটির যাকাত ফান্ডের পরিচালক আব্দুল হামিদ খান জানিয়েছেন আগামী বছর থেকেই এ নিয়ে অনলাইনে ব্যাপক প্রচারণার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে। ধর্ম উপদেষ্টা ও সচিব এক্ষেত্রে প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়ে ইতিবাচক।