'মাইন্ড রিডিং' প্রযুক্তি: বৈজ্ঞানিক বাস্তবতা, নৈতিক সংকট এবং নীতি-নির্ধারণের চ্যালেঞ্জ
মনের গোপনীয়তা ভঙ্গের ভবিষ্যৎ
মানব মস্তিষ্ক—প্রায় ৮৬ বিলিয়ন নিউরনের জটিল নেটওয়ার্ক যে প্রতি সেকেন্ডে বিলিয়ন বিলিয়ন তথ্য প্রক্রিয়া করে—অবশেষে তার গোপনীয়তার প্রাচীর ভেঙে ফেলার মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ন্যানোপ্রযুক্তি এবং আধুনিক নিউরোইমেজিং-এর সমন্বয়ে 'মাইন্ড রিডিং' প্রযুক্তি আর বিজ্ঞান কল্পকাহিনী নয়; এটি একটি বৈজ্ঞানিক বাস্তবতা যা ২০২৫ সালে মানব সভ্যতার জন্য গুরুতর নৈতিক, আইনি এবং নিরাপত্তা-নীতিগত প্রশ্ন উত্থাপন করছে।
এই নিবন্ধটি মন পড়ার প্রযুক্তির ঐতিহাসিক বিকাশ, বৈজ্ঞানিক ভিত্তি, চিপ-ভিত্তিক ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেস (BCI), ভাইরাল ভেক্টরের প্রয়োগ, সামরিক গবেষণা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সংযোগ এবং নীতি-নির্ধারণের প্রয়োজনীয়তা গভীরভাবে বিশ্লেষণ করবে। আমরা শুধুমাত্র বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত তথ্য উপস্থাপন করব এবং স্পেকুলেটিভ ধারণা থেকে স্পষ্টভাবে পার্থক্য করব।
ঐতিহাসিক বিবর্তন: ১২০ বছরের পথচলা
মন পড়ার প্রযুক্তির ইতিহাস ১৮৯৫ সালে জুলিয়াস এমনারের আবিষ্কারে শুরু হয়, যিনি দাবি করেছিলেন যে তার মেশিন চিন্তাকে "মানসিক ফোটোগ্রাফ" হিসেবে রেকর্ড করতে পারে। এমনার ফোনঅটোগ্রাফ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বিশ্বাস করতেন যে শব্দের তরঙ্গের মতো চিন্তাও রেকর্ড করা সম্ভব। যদিও তার আবিষ্কার বৈজ্ঞানিকভাবে ব্যর্থ হয়, এটি মানসিক প্রক্রিয়াকে পরিমাপের চেষ্টার প্রাথমিক দিক নির্দেশনা দেয়।
আধুনিক যুগের সত্যিকারের ব্রেইন-রিডিং প্রযুক্তি শুরু হয় ২০০৬ সালে হেইনস এবং রিস-এর গবেষণার মাধ্যমে, যেখানে তারা মানব মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপ থেকে মানসিক অবস্থা ডিকোড করতে সক্ষম হন। ২০১১ সালে নিশিমোটো এবং সহকর্মীরা প্রাকৃতিক চলচ্ছবি থেকে উদ্দীপিত মস্তিষ্ক ক্রিয়াকলাপ থেকে দৃশ্য অভিজ্ঞতা পুনর্নির্মাণে বিষ্ময়কর সাফল্য অর্জন করেন। এই গবেষণায় দেখানো হয় যে fMRI ডেটা ব্যবহার করে জেনারেটিভ মডেল দিয়ে মানুষ দেখছে এমন দৃশ্যের অনুমানযোগ্য পুনর্নির্মাণ সম্ভব।
বৈজ্ঞানিক ভিত্তি: মস্তিষ্ক থেকে সিগ্নাল ডিকোডিং
মন পড়ার প্রযুক্তির মূল নীতি হলো নিউরাল সিগ্নালের পরিমাপ এবং ডিকোডিং। মানব মস্তিষ্ক প্রতিটি চিন্তা, ইচ্ছা এবং সচেতন অভিজ্ঞতার জন্য বৈদ্যুতিক এবং রাসায়নিক সংকেত উৎপন্ন করে। এই সিগ্নালগুলো ধরতে বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়:
১. ইলেকট্রোএনসেফালোগ্রাফি (EEG): মাথার তালুতে ইলেকট্রোড স্থাপন করে ব্রেইনওভের তরঙ্গ রেকর্ড করা হয়। EEG-র সময় রেজোলিউশন উচ্চ হলেও স্থানিক রেজোলিউশন নিম্ন হয় কারণ খুলি সিগ্নালকে দুর্বল করে দেয়। ২০২৪ সালে Li এবং সহকর্মীরা গাইডেড ডিফিউশন মডেল ব্যবহার করে EEG এম্বেডিং থেকে দৃশ্য ডিকোডিং-এ গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি দেখিয়েছেন।
২. কার্যকরী চৌম্বকীয় অনুরণন ইমেজিং (fMRI): মস্তিষ্কের রক্ত প্রবাহের পরিবর্তন মাপে যা সক্রিয় নিউরনের কার্যকলাপ নির্দেশ করে। Gallant ল্যাবের গবেষণা দেখায় যে fMRI থেকে প্রাকৃতিক চিত্র সনাক্ত করা সম্ভব।
৩. ইলেকট্রোকর্টিকোগ্রাফি (ECoG): মস্তিষ্কের পৃষ্ঠায় সরাসরি ইলেকট্রোড স্থাপন করে উচ্চ রেজোলিউশন সিগ্নাল পাওয়া যায়। এটি আক্রমণাত্মক পদ্ধতি হলেও BCI-তে সবচেয়ে কার্যকর।
৪. Near-Infrared Spectroscopy (NIRS): Kernel-এর Flow সিস্টেমে ব্যবহৃত হয়, যা অধিকতর সুবিধাজনক কিন্তু কম রেজোলিউশন প্রদান করে।
চিপ-ভিত্তিক ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেস: নিউরাল সুত্র এবং N1 চিপ
আধুনিক মাইন্ড রিডিং প্রযুক্তির সবচেয়ে উন্নত রূপ হলো ইমপ্লান্টেবল চিপ-ভিত্তিক BCI। Neuralink-এর N1 চিপ ১,০০০+ অত্যন্ত সূক্ষ্ম থ্রেডে ৩,০০০+ ইলেকট্রোড বহন করে যা সরাসরি মস্তিষ্কের টিস্যুতে স্থাপন করা হয়।
Neuralink চিপ সিগ্নাল বেতার প্রযুক্তিতে বাইরের প্রসেসরে পাঠায়, যেখানে AI ডিকোডিং করে। ২০২৪ সালে প্রথম মানব প্রতিস্থাপনের পর, ২০২৫ সালে তিনজন ব্যবহারকারী দৈনিক ভিডিও গেইম এবং ব্রাউজিং করছেন।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং জেনারেটিভ মডেল: নিউরাল ডিকোডিংয়ের বিপ্লব
- ডিপ নিউরাল নেটওয়ার্ক এনকোডার ব্যবহার করে সিগ্নালকে লেটেন্ট স্পেসে ম্যাপ করা হয়
- ডিফিউশন মডেল চিত্র জেনারেট করে যা ব্রেইন অ্যাক্টিভিটি প্রতিফলিত করে
২০২৪ সালে Koide-Majima এবং সহকর্মীরা মানসিক চিত্র পুনর্নির্মাণে ডিপ নিউরাল নেটওয়ার্ক-ভিত্তিক বায়েসিয়ান এস্টিমেশন ব্যবহার করেন, যা ৮৫%+ নির্ভুলতা অর্জন করে। Gilbert এবং Russo (২০২৪) সতর্ক করে বলেছেন যে AI-নিউরোটেক সমন্বয়ে "হাইপ এবং নৈতিক প্রভাব" মানব অধিকারের জন্য চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে।
বহুশাস্ত্রীয় প্রকৃতি: নিউরোসায়েন্স থেকে নীতি-নির্ধারণ
মাইন্ড রিডিং প্রযুক্তি নিঃসন্দেহে বহুশাস্ত্রীয়:
- নিউরোবায়োলজি: নিউরনের ক্রিয়া বোঝা
- পদার্থবিজ্ঞান: ইলেকট্রোম্যাগনেটিক সিগ্নাল প্রসেসিং
- কম্পিউটার সায়েন্স: ML/DL অ্যালগরিদম
- জৈবপ্রযুক্তি: ইমপ্লান্টেবল ডিভাইস
- নৈতিকতা: নিউরোরাইটস এবং গোপনীয়তা
- আইন: বুদ্ধিমত্তার অধিকার রক্ষা
এই সমন্বয়ে স্পষ্ট নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন, যা একক শাস্ত্র দিয়ে সম্ভব নয়।
কোম্পানি এবং বাণিজ্যিক বিকাশ: নির্ভরযোগ্য প্লেয়ার
২০২৫ সালে BCI বাজারে প্রধান কোম্পানিগুলো হলো:
১. Neuralink (মূলধন $১ বিলিয়ন+): N1 চিপ, থ্রেড-ভিত্তিক ইমপ্লান্ট, মানব পরীক্ষা ২০২৪ থেকে।
২. Synchron (মূলধন $১৪৫ মিলিয়ন): Stentrode™ এন্ডোভাসকুলার BCI, রক্তনালীর মাধ্যমে ইমপ্লান্ট, FDA প্রাথমিক অনুমোদন।
৩. Blackrock Neurotech (মূলধন $২০০ মিলিয়ন+): ৩০+ মানব ইমপ্লান্ট, Utah Array, ৯০ অক্ষর/মিনিট টাইপিং গতি।
৪. Paradromics (মূলধন $১০৫ মিলিয়ন): Connexus®, ১,৬০০ চ্যানেল, প্রথম মানব রেকর্ডিং ২০২৫।
৫. Precision Neuroscience (মূলধন $১০২ মিলিয়ন): Layer 7 Cortical Interface, ৪,০৯৬ ইলেকট্রোড।
৬. Kernel (মূলধন $১০০ মিলিয়ন+): ফাংশনাল নিয়ার-ইনফ্রারেড স্পেকট্রোস্কপি, নন-ইনভেসিভ।
৭. Neurable: EEG-ভিত্তিক কনজিউমার ডিভাইস, MW75 Neuro হেডফোন।
৮. Beijing Xinzhida: চীনের নেতৃস্থানীয় BCI কোম্পানি, জাতীয় প্রকল্পে অংশ।
সামরিক প্রযুক্তি: DARPA-এর সিনথেটিক টেলিপ্যাথি
সামরিক অ্যাপ্লিকেশন সবচেয়ে উদ্বেগজনক। DARPA-এর Silent Talk প্রকল্প (২০০০-এর দশকের শুরু) সাবভোকাল স্পিচ ডিটেকশনের মাধ্যমে চিন্তা প্রেরণের চেষ্টা করে EEG-তে মুখ না খুলে কথা ভাবলে যে সিগ্নাল তৈরি হয়, তা মেশিন লার্নিং দিয়ে ডিকোড করার পরিকল্পনা ছিল। শুরুর দিকে ৬০-৭০% নির্ভুলতা পাওয়া গেলেও খুলির হস্তক্ষেপে সিগ্নাল দুর্বল হয়ে পড়ত।
N3 (Next-Generation Nonsurgical Neurotechnology) প্রোগ্রাম বর্তমানে নন-ইনভেসিভ BCI-তে $১০৪ মিলিয়ন বিনিয়োগ করেছে, যা দূর থেকে মস্তিষ্ক পড়তে পারে এমন প্রযুক্তি গবেষণা করে। এটি সিনথেটিক টেলিপ্যাথি কথাটিকে বাস্তব করে তুলছে—সরাসরি মস্তিষ্ক থেকে মস্তিষ্কে বা ডিভাইসে চিন্তা প্রেরণ।
নৈতিক সংকট এবং মানব সভ্য: ৫টি প্রধান ঝুঁকি
১. মানসিক গোপনীয়তা ভঙ্গ: Wolpe, Foster এবং Langleben (২০০৫) সতর্ক করেছেন যে নিউরোটেকনোলজি "মন পড়ার মেশিন" তৈরি করতে পারে, যা স্ব-অপরাধ প্রমাণের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। ব্রেইন ডেটা হ্যাক করা গেলে চিন্তা, স্মৃতি, ইচ্ছা চুরি যেতে পারে।
২. নিউরোডিসক্রিমিনেশন: নিয়োগ, বীমা বা আদালতে BCI ডেটা ব্যবহার করে বৈষম্য হতে পারে। Gilbert এবং Russo (২০২৪) বলেছেন এটি "নিউরোরাইটস" এর অধীনে পড়ে।
৩. এজেন্সি এবং স্বাধীনতা হারানো: যদি বাহ্যিক সত্তা মস্তিষ্ককে নিয়ন্ত্রণ বা প্রভাবিত করতে পারে, তবে মানুষের স্বাধীন ইচ্ছা হুমকির মুখে পড়বে।
৪. সামরিক অপব্যবহার: DARPA প্রকল্পগুলো যদি অস্ত্রে রূপান্তরিত হয়, তবে দূরবর্তী মানসিক যুদ্ধ শুরু হতে পারে।
৫. জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকি: বিদেশ থেকে মস্তিষ্ক হ্যাকিং হলে গুপ্তচরবৃত্তি এবং প্রভাব বিস্তার নতুন মাত্রা পাবে। তবে প্রযুক্তিগতভাবে এটি এখনও অসম্ভব কারণ প্রয়োজনীয় ইমপ্লান্ট ছাড়া দূরবর্তী হাই-রেজোলিউশন সিগ্নাল পাওয়া যায় না।
নীতিমালা এবং প্রতিরোধ ব্যবস্থা: ৮টি প্রস্তাব
১. আন্তর্জাতিক নিউরোটেকনোলজি ট্রিটি: জৈব অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তির আদর্শে মস্তিষ্ক-হ্যাকিং অস্ত্র নিষিদ্ধ করা।
২. নিউরোরাইটস আইন: চিলি এবং স্পেনের মতো দেশ যেমন 'মানসিক গোপনীয়তা অধিকার' আইন করেছে, তেমনি জাতীয় আইন করা যেখানে ব্রেইন ডেটা সংগ্রহ, স্টোরেজ এবং ব্যবহারে স্পষ্ট সম্মতি প্রয়োজন।
৩. FDA এবং EMA গাইডলাইন: ইমপ্লান্টেবল BCI-র জন্য কঠোর নিরাপত্তা ও নৈতিক পর্যালোচনা বাধ্যতামূলক করা। Paradromics-এর মতো কোম্পানিকে প্রথম-in-human ট্রায়ালে নিরাপত্তা প্রমাণ করতে হয়েছে।
৪. টেলিকম নিয়ন্ত্রণ: রিমোট EEG মনিটরিং-এর জন্য এনক্রিপশন এবং ডেটা সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করা। IntraNerve-এর মতো কোম্পানিকে HIPAA-সম্মত হতে হয়।
৫. সামরিক গবেষণা স্বচ্ছতা: DARPA প্রকল্পগুলোর নাগরিক নিরীক্ষণ বাড়ানো এবং অস্ত্রায়ণ রোধ করা।
৬. পাবলিক এডুকেশন: সাধারণ মানুষকে BCI-র সুফল ও ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন করা।
৭. আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা: ভূ-উপগ্রহ বা দূরবর্তী যন্ত্র ব্যবহার করে মস্তিষ্ক নজরদারি নিষিদ্ধ করা, যদিও এটি বৈজ্ঞানিকভাবে সম্ভব - বিষয়টি গবেষনাপত্রে প্রকাশিত হয়নি।
৮. অ্যাক্সেস ইকুইটি: BCI-র চিকিৎসা সুবিধা সবার জন্য সুলভ করা, যাতে প্রযুক্তিগত বৈষম্য না বাড়ে।
উপসংহার: বিজ্ঞানের দায়িত্ববোধ এবং মানবতার ভবিষ্যৎ
মাইন্ড রিডিং প্রযুক্তি ১২০ বছর পরে অবশেষে বৈজ্ঞানিক বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে। Neuralink, Synchron এবং অন্যান্য কোম্পানি পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীদের জীবন বদলে দিচ্ছে। কিন্তু DARPA-এর সামরিক গবেষণা এবং AI-নিউরোটেক সমন্বয়ে উদ্বেগজনক নৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে।
চিলির ২০২১-এর সংবিধান সংশোধন যেমন "মানসিক অখণ্ডতা অধিকার" যুক্ত করেছে, তেমনি বিশ্বব্যাপী সমন্বিত প্রয়াস প্রয়োজন। আমরা দাঁড়িয়ে আছি মুক্তির এবং ডাইস্টোপিয়ার সন্ধিক্ষণে। নীতি-নির্ধারকদের সিদ্ধান্ত নির্ধারণ করবে এই প্রযুক্তি মানবতার "সবচেয়ে বড় মুক্তি" নাকি "সবচেয়ে খারাপ দুঃস্বপ্ন" হবে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সুপারিশ: দেশে BCI গবেষণা শুরুর আগে নিউরোরাইটস আইন প্রণয়ন, চিকিৎসা প্রয়োগের জন্য FDA-সমমান নিয়ন্ত্রণ, এবং সামরিক ব্যবহার নিষিদ্ধকরণ জরুরি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মানসিক গোপনীয়তা যুক্ত করা প্রয়োজন।
তথ্যসূত্র:
Haynes, J.-D., & Rees, G. (2006). Decoding mental states from brain activity in humans. Nature Reviews Neuroscience, 7(7), 523–534. https://doi.org/10.1038/nrn1931
Nishimoto, S., Vu, A. T., Naselaris, T., Benjamini, Y., Yu, B., & Gallant, J. L. (2011). Reconstructing visual experiences from brain activity evoked by natural movies. Current Biology, 21(19), 1641–1646. https://doi.org/10.1016/j.cub.2011.08.031
Koide-Majima, N., Nishimoto, S., & Majima, K. (2024). Mental image reconstruction from human brain activity: Neural decoding of mental imagery via deep neural network-based Bayesian estimation. Neural Networks, 170, 349–363. https://doi.org/10.1016/j.neunet.2023.11.024
Gilbert, F., & Russo, I. (2024). Mind-reading in AI and neurotechnology: Evaluating claims, hype, and ethical implications for neurorights. AI and Ethics, 4(3), 855–872. https://doi.org/10.1007/s43681-024-00514-6
Wolpe, P. R., Foster, K. R., & Langleben, D. D. (2005). Emerging neurotechnologies for lie-detection: promises and perils. The American Journal of Bioethics, 5(2), 39–49. https://doi.org/10.1080/15265160590923367
The Gaijin Wolfenstein. (2025). Synthetic telepathy: From military dreams to cyberpunk reality. Medium. https://medium.com/@thegaijin.wolfenstein/synthetic-telepathy-from-military-dreams-to-cyberpunk-reality-b851821775b2
Dana Foundation. (2024). fMRI: Still not a mind reader. https://dana.org/article/fmri-still-not-a-mind-reader/
Matsushima, S. K., et al. (2025). Adeno-associated virus expressing a blood-brain barrier. Journal of Clinical Investigation, 135(12), e180724. https://doi.org/10.1172/JCI180724
Naselaris, T., Prenger, R. J., Kay, K. N., Oliver, M., & Gallant, J. L. (2009). Bayesian reconstruction of natural images from human brain activity. Neuron, 63(6), 902–915. https://doi.org/10.1016/j.neuron.2009.09.006
Ross Dawson. (2025). 9 leading brain-computer interface companies and their current and prospective products. https://rossdawson.com/futurist/companies-creating-future/leading-brain-computer-interface-companies-bci/
Spherical Insights. (2025). Top 10 companies leading the brain-computer interface market in 2025. https://www.sphericalinsights.com/blogs/top-10-companies-leading-the-brain-computer-interface-market-in-2025-key-players-statistics-future-trends-2024-2035
SpecialtyCare. (2025). EEG scan technology: Advanced brain imaging for assessment. https://specialtycareus.com/eeg-scan-technology-brain-imaging-assessment/
IntraNerve Neuroscience. (2025). Remote EEG monitoring & cEEG monitoring services. https://www.intranerve.com/services/neurotelemetry-ceeg/







