কোডে লেখা একাত্তরঃ গেইমে মুক্তিযুদ্ধ ও বিজয়
একাত্তরের মহান মুক্তি যুদ্ধ ছিল অস্ত্রের। কিন্তু তার চেয়েও বড় ছিল চেতনার। আজ সেই চেতনার নতুন যুদ্ধক্ষেত্র ডিজিটাল বিশ্ব। ১৯৭১ তাই হাজারো মানুষের ছোট ছোট গল্পের জটিল মোজাইক। আজ সেই গল্পগুলো কেমন করে গেমে বদলে যাচ্ছে? পর্দার অন্দরেই কি আমরা ইতিহাসকে কেবল পপকর্ন-স্তরে ভোগ করছি, নাকি সত্যিকারভাবে তার গূঢ়তা ধারণ করাতে পারছি? এই লেখায় সেই তথ্য, সরকারি খরচ, কিছু আলোচিত গেইমের নাম ও নির্মাণ কাহিনি ও বিতর্ক-সব একসঙ্গে সেলাই করে বলার চেষ্টা করছি।
১৯৭১। বুটের আওয়াজ, রাইফেলের গর্জন, ভাঙা ট্রান্সমিটারের ভেতর দিয়ে ভেসে আসা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠ—এসব আজ ইতিহাসের পাতায় বন্দী। কিন্তু বিশ্ব যখন ইতিহাসকে নতুন করে বাঁচিয়ে রাখছে কম্পিউটার ও মোবাইল গেইমের মাধ্যমে, তখন প্রশ্ন জাগে—বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ কি সেই ডিজিটাল যুদ্ধক্ষেত্রে নিজের জায়গা করে নিতে পেরেছে?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে আমাদের ফিরতে হয় কয়েক দশক পেছনে, যখন দেশের গেইম ডেভেলপমেন্ট বলতে ছিল বিচ্ছিন্ন কিছু উদ্যোগ, সীমিত প্রযুক্তি আর সীমাবদ্ধ বাজার। সেই বাজারের দিকে তাকিয়ে নয়; শুরুটা হয়েছিলো হৃদয়ের গহীন থেকে। শুরুটা ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’ থেকে।
বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গেইমের ইতিহাস ঘাঁটলে প্রথমেই উঠে আসে ফার্স পার্সন শ্যুটার গেইম ‘অরুণোদয়ের অগ্নিশিখা’। এটি কোনো বড় বাণিজ্যিক সাফল্য ছিল না, কিন্তু ঐতিহাসিক গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। দেশীয় প্রতিষ্ঠান সোম কম্পিউটারস লিমিটেড নিজস্ব থ্রিডি ইঞ্জিন ব্যবহার করে এই গেইমটি তৈরি করে।তিনটি ধাপে সাজানো এই গেইমে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়। প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা, পাইরেসি আর বাজারের অনীহার কারণে এটি থেমে গেলেও একটি বার্তা রেখে যায়- মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গেইম বানানো অসম্ভব নয়।
এরপর রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ‘লিবারেশন ৭১’, ‘হিরোস অব ৭১’, ‘ব্যাটল অব ৭১’ এবং ‘ম্যাসিভ ওয়ার ৭১’ এর মতো গেইমে একেকটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তিযুদ্ধকে অনুকরণ করার চেষ্টা করেছে দেশি ডেভেলপাররা। কেউ সফলতা পেয়েছে, কেউ কোণঠাসা থেকে গেছে। এই পর্যায়ের তথ্য ও ইতিহাস-ভিত্তিক গেইমগুলোর অর্জন-বর্জন-অসফলতা, সবই প্রথমবারের মতো তরুণ প্রজন্মকে একাডেমিক পাঠের বাইরে ‘অভিজ্ঞতা’ দিতে চেয়েছে।
শুরু: আবেগ, স্বাধীনতা আর পিক্সেল
দেশীয় প্রথম মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক গেইমের মধ্যে ‘অরুণোদয়ের অগ্নিশিখা’ ছিল এক আবেগের প্রয়াস। ছোট বাজেটে নির্মিত এই গেইমটি পাইরেসি ও বাজার সংকটের ভেতর হারিয়ে গেলেও সেটি প্রথম বার অসংখ্য ডেভেলপারকে অনুপ্রাণিত করেছিল। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়-ছাত্রদের স্বেচ্ছাশ্রমে গড়ে ওঠা টিম- ৭১ এর ‘লিবারেশন ৭১’- যা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মিশন নিয়ে ডেমো প্রকাশ করে গেইমিং এরিনায় নজর কাড়ে। এই গেইমে ১৯৭১ সালের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার ওপর ভিত্তি করে মিশন তৈরি করা হয়। পরবর্তীতে তারা বীরশ্রেষ্ঠ আবদুর রউফ, বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান–এর মতো শহীদদের নিয়ে আলাদা এপিসোড তৈরির পরিকল্পনা নেয়। আনরিয়েল ইঞ্জিন ব্যবহার করে গ্রাফিক্স উন্নত করার চেষ্টা করা হয়।
‘হিরোস অব ৭১’ ছিল দেশের প্রথম আলোচিত মোবাইল শুটার, যেখানে খেলোয়াড় মধুমতীর শহুরে গ্রামের এক অপারেশনে অংশ নেয়- এই গেইম মুক্তিযুদ্ধকে সরাসরি অ্যান্ড্রয়েড প্ল্যাটফর্মে এনেছে এবং কিছু কিশোর-তরুণকে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গে যুক্ত করেছে। তবে গ্রাফিক্স, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ও গেইমপ্লে নিয়ে সমালোচনাও হয়।
সেই একই সময়ে ‘ব্যাটল অব ৭১’ গেইমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান–এর থ্রিডি চরিত্রসহ রাজারবাগ, সিলেট চা-বাগানসহ বিভিন্ন ঐতিহাসিক যুদ্ধের দৃশ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়। স্ট্যান্ডঅ্যালোন লেভেল, তুলনামূলক ভালো ভিজ্যুয়াল এবং ঐতিহাসিক রেফারেন্স—সব মিলিয়ে এটি মুক্তিযুদ্ধের গেইম তালিকায় আলাদা গুরুত্ব পায়। জাতীয় নেতাদের থ্রিডি অবয়ব ব্যবহার করে বৃহৎ পটভূমি ও লেভেল যুক্ত করে আন্তর্জাতিক স্তরে প্রতিযোগী মানের ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনার চেষ্টা করে।
‘যুদ্ধ ৭১: প্রথম প্রতিরোধ’ ছিলো প্রযুক্তির দিক থেকে সবচেয়ে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। এই গেইমে ২৫ মার্চের কালরাতের প্রথম প্রতিরোধকে তুলে ধরা হয় এবং এটি ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (VR) সমর্থিত। ইউনিটি ইঞ্জিনে তৈরি এই গেইমটি দেখায়- বাংলাদেশে শুধু সাধারণ মোবাইল গেইম নয়, উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর গেইম তৈরির চেষ্টাও হচ্ছে।
প্রাপ্ত তথ্য বলছে, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ৫০টির বেশি গেইম ও অ্যাপ তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- মুক্তিযুদ্ধ, যুদ্ধ ৭১, বাংলাদেশ লিবারেশন ওয়ার কুইজ গেইম, মুক্তিযুদ্ধ রানার, ডকু-গেইমধর্মী অ্যাপ জেনোসাইড ১৯৭১, স্বাধীনতা ৭১, ওরা ১১ জন, অদম্য ৭১, গেরিলা ৭১, গেরিলা ব্রাদার্স ইত্যাদি। অনেকগুলোই শিক্ষামূলক, কিছু গেইমপ্লেভিত্তিক, কিছু আবার কুইজ বা ইন্টারঅ্যাকটিভ ইতিহাস। কিন্তু গেইম ও অ্যাপ্লিকেশনগুলোতে নামের মতো কন্টেন্টে বৈচিত্রহীনভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করে আইসিটি বিভাগ। আবার সেই পৃষ্ঠকতার ধারবাহিকতায় যেমন ঘাটতি ছিলো, তেমনি এগুলো গ্রহণেও সাধারণ গেইমারদের মধ্যে ছিলো অনাগ্রহ। সব মিলিয়ে একাত্তরের রণাঙ্গনের কাদা, ধুলো আর বারুদের গন্ধ মনিটরের পর্দা, মোবাইল স্ক্রিন আর ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ভেতর দিয়ে নতুন প্রজন্মকে ছুঁতে পারেনি।
ফলে বিশ্বজুড়ে যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, ভিয়েতনাম কিংবা আধুনিক মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ নিয়ে শত শত গেইম তৈরি হচ্ছে, তখন প্রশ্নটা আরও তীক্ষ্ণ- বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ কি ডিজিটাল গেইমে তার ন্যায্য জায়গা পেয়েছে? এক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা কি যথেষ্ঠ ছিলো?
অনুদান, প্রকল্প এবং বড় আকারের ব্যয়
ডিজিটাল মাধ্যমকে ব্যবহার করে ইতিহাস সংরক্ষণের নৈতিকতা ও প্রয়োজনে আইসিটি বিভাগের নেতৃত্ব প্রশংসনীয় মনে হলেও বাস্তব চিত্র আলাদা। ‘মোবাইল গেইম ও অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট’ প্রকল্পের আওতায় এবং বিভিন্ন অনুদান, প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে—কিন্তু ওই ব্যয়ের তুলনায় বাস্তবে কার্যকর ও জনপ্রিয় গেইমের সংখ্যা প্রায় নিষ্প্রভ।
প্রাপ্ত তথ্য বলছে, সরকারের উদ্যোগে বিভিন্ন গেইম, অ্যাপ, অ্যানিমেশন ও ভিআর প্রজেক্টে লক্ষাধিক কোটি টাকা বরাদ্দ ও খরচ হয়েছে; তবে অনেক ক্ষেত্রে ঠিকাদারি প্যাটার্নে কাজ হবার কারণে প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন ও ফলপ্রসূতা হয়েছে প্রশ্নবিদ্ধ। সরকারি অর্থ কি সঠিকভাবে ইতিহাসের গভীরতা তুলে ধরার জন্য ব্যবহার হয়েছে, নাকি প্যাকেজিং-ফর্ম্যাটে ব্যয় হয়ে গেছে- এই প্রশ্ন এখন জনপ্রশ্নে দাঁড়িয়েছে।
ব্যয়ের অসমতাঃ মুজিব-কনটেন্ট বনাম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গেইম
অনুদানে কিংবা প্রণোদনায় ডজনের মতো মুক্তিযুদ্ধ গেইম প্রকাশের কথা শোনার সঙ্গে প্রকাশিত কয়েটি আলোচনায় এলেও সেগুলো জায়গা করে নিতে পারেনি গেইম বাজারে। এক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈষম্য চোখে পড়ে- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে তৈরি ডিজিটাল কনটেন্ট; যেমন ‘মুজিব ভাই’ অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র বা ‘মুজিব ১০০’ অ্যাপের ক্ষেত্রে বড় পর্যায়ে বরাদ্দ এবং ভিজ্যুয়াল-প্রোডাকশনে টাকা খরচ হয়েছে; কিন্তু নির্মোহ ইতিহাসভিত্তিক মুক্তিযুদ্ধের বাস্তব ও কঠোর দিকগুলোতে সেই বরাদ্দের ছিটেফোঁটা দেখা যায়নি। ফলে যে খাতে গল্প কাটাছেঁড় করা সম্ভব—শরণার্থী, নারীর দুর্দশা, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব—সেসব বিষয় গেইমে জায়গা পায়নি। এই বাজেটের অসম বণ্টন অনেক ডেভেলপারকে সীমাবদ্ধ করেছে। আদতে সৃজনশীলতা হারিয়েছে।
সৃজনশীলতার ঘাটতিঃ ‘নিরাপদ’ ইতিহাস ও কনটেন্ট-ক্যাপিং
গবেষণা বলছে, ঠিকাদার ব্যবস্থাপনা আর রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সেনসিটিভিটি অনেক সময় নির্মাতাকে “নিরাপদ” গল্প বলাতেই বাধ্য করেছে। অর্থাৎ কঠোর বাস্তবতা বাদ রেখে প্যাটরিয়োটিক, সহজবোধ্য প্লট রাখাই সুবিধাজনক হয়ে ওঠে। ফলে গেইমগুলো ইতিহাসের বহুস্তরীয়তা, নৈতিক দ্বন্দ্ব কিংবা মানুষের ব্যক্তিগত কাহিনি তুলে ধরার সাহস করেনি। এখানে প্রশ্ন ওঠে—ইতিহাস-নির্ভুলতা এবং বিনোদনের প্রয়োজনকে কি সামঞ্জস্য করা সম্ভব নয়? বাস্তবে তা সম্ভব, কিন্তু দরকার স্বচ্ছ দিকনির্দেশনা এবং অনুদানের শর্তে স্বাধীনতা রাখা।
বিতর্কিত অনুদানঃ ক্ষমতা, যোগাযোগ ও নৈতিক প্রশ্ন
অনুসন্ধানে আরও আলোচিত একটি অংশ- বিতর্কিত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে সরকারি অর্থের সম্পর্ক। সংবাদে উঠে এসেছে, এমন কিছু ক্ষেত্রে অনুদান বা আর্থিক সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে; এমনকি কিছু সন্দেহভাজন ব্যক্তির রাজনৈতিক যোগসূত্রও নদীর মত ঢেউ তুলেছে। সবশেষ ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টার সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খানের নাম মুক্তিযুদ্ধের গেইম তৈরির অনুদান প্রাপ্তদের তালিকায় আসায় সরকারি প্রকল্প-ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতার গুরুতর অভাব নির্দেশ করে এবং ইতিহাস-ভিত্তিক বিষয় পরিচালনায় নৈতিক জবাবদিহির কষ্টি পাথরে আটকে গেছে।
তারপরও আছে আলো
সব অভিযোগ আর সীমাবদ্ধতার মাঝেই একটি ইতিবাচক দিক আছে: গেইমগুলো তরুণদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করেছে। স্বাধীন উদ্যোগে তৈরি ছোট-বড় প্রকল্প। স্থানীয় কিশোর নির্মাতা রূপকথা’র ২০১৯ সালে প্রকাশিত ‘দ্য ভিক্টরি’ আশা জাগায়- কম বাজেটেও ইতিহাসকে ডিজিটালভাবে তুলে ধরবার চেষ্টা হচ্ছে। এই উদ্যোগগুলো যদি সঠিক প্রশিক্ষণ, গবেষণা এবং অর্থায়ন পায়, তাহলে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গেইম শিক্ষামূলকভাবে শক্ত হতে পারে।
তাহলে করণীয় কি?
একাত্তরের যুদ্ধ ছিল প্রশ্ন করার যুদ্ধ। কিন্তু আজ সেই যুদ্ধকে গেইমে রূপ দিতে গিয়ে প্রশ্ন করাই যেন নিষিদ্ধ। যদি রাষ্ট্র সত্যিই চায় মুক্তিযুদ্ধ ডিজিটাল প্রজন্মের কাছে জীবন্ত হোক, তবে গেইমকে শুধু অনুদান-নির্ভর প্রকল্প নয়—সত্য বলার মাধ্যম হিসেবে দেখতে হবে। নইলে কোটি টাকা ব্যয় করেও গেইমগুলো থেকে যাবে- ডাউনলোড লিস্টে, ইতিহাস থেকে অনেক দূরে। সেই দূরত্ব ঘুচতে চাই- শুটিংয়ের বাইরে গিয়ে স্টোরি-ড্রিভেন, আরপিজি, স্ট্র্যাটেজি গেইম বানাতে হবে। গল্প নির্মাণ করতে হবে গবেষণা ও প্রামাণ্যসূত্র যুক্ত করে। রাষ্ট্র যদি চায় মুক্তিযুদ্ধ সত্যিকারের ভাবে গেইমে বেঁচে উঠুক তাহলে শুধু একজন মুক্তিযোদ্ধা নয়- একজন মা, শরণার্থী, সাংবাদিকের চোখ দিয়ে যুদ্ধ দেখাতে হবে। ইতিহাসবিদ ও গবেষকদের যুক্ত করতে হবে। সরকারি সহায়তাকে দীর্ঘমেয়াদি করতে হবে। কয়েক বছর ধরে গবেষণা, প্রোটোটাইপ, টেস্টিং ও ম্যাচ-ফাইনিং করার জন্য অর্থায়ন এবং বহুভাষিক ও বহুমাধ্যম রিলিজ করতে হবে। আর অবশ্যই ইতিহাস ও মানুষের যন্ত্রণা নিয়ে গেইম করলে মানবিক কনসেন্ট, পরিবার-বহির্ভূত ও সামাজিক প্রভাব বিবেচ্য হবে; এজন্য একটি স্বাধীন পর্যালোচনা বোর্ড দরকার।
স্বাধীনতা ফিরুক বিজয়ে; সত্যি বেঁচে থাকুক গেইমেও
একটি দেশে যখন স্বাধীনতার গল্পটিকে একটি বিনোদনের ফর্মে তুলে ধরা হয়, তখন তার দায়িত্ব দ্বিগুণ হয়—সত্য বলার উদারতা রাখতে হবে, আর একই সঙ্গে নতুন প্রজন্মকে আকৃষ্টও করতে হবে। কেননা, মুজিব-কনটেন্টে যে মেলামেশা হয়েছে, গ্র্যান্ড প্রোডাকশনে যে বিশাল খরচ হয়েছে—এগুলো যদি মুক্তিযুদ্ধের নির্মোহ বাস্তবতাকে তুলে ধরার কাজে লাগানো যেত, তাহলে গেইমগুলো আজ অনেক বেশি শক্তিশালী হতো। অর্থাৎ স্বচ্ছতা আনলেই, ইতিহাসবিদ ও গেইমিং পেশাজীবীর সংমিশ্রণে, আমাদের গল্পগুলো পিক্সেলেও প্রাণ পাবে। আর তখনই সত্যিই বলা যাবে—মুক্তিযুদ্ধ কেবল বইয়ে নয়, গেইমে, মানুষের হৃদয়ে ও ডিজিটাল স্মৃতিতে জীবিত।







