কারিগরি, প্রযুক্তিগত ও পেশাভিত্তিক শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ

১৬ আগষ্ট, ২০২৫ ২৩:৪৫  
১৭ আগষ্ট, ২০২৫ ০৯:৫২  
কারিগরি, প্রযুক্তিগত ও পেশাভিত্তিক শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ

দেশে ডিগ্রি পাস শিক্ষার্থীর সংখ্যা মোট শিক্ষার্থীর ১১ শতাংশ। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক, অর্থাৎ ৪ দশমিক ৫ শতাংশ বেকার। শিক্ষার এই বাস্তব চিত্র সামনে এনে জব মার্কেটের চাহিদা অনুযায়ী কারিকুলাম সাজানো ও গুণগত শিক্ষা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। শিক্ষাবিদদের মতে, দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে যুগোপযোগী ও চাহিদাভিত্তিক করে গড়ে তুলতে কারিগরি, প্রযুক্তিগত ও পেশাভিত্তিক শিক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া দরকার। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে গবেষণা সহযোগিতা, শিক্ষক প্রশিক্ষণ এবং শিল্প ও অ্যাকাডেমিয়া সংযোগ বাড়ানো জরুরি। 

রাজধানীর খামারবাড়ি বিএআরসি অডিটরিয়ামে ১৬ আগস্ট, শনিবার  ‘বাংলাদেশে চাহিদাভিত্তিক শিক্ষা: সমস্যা ও সম্ভাবনা’ বিষয়ক সেমিনারে অংশ নিয়ে এমন অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন বক্তারা। ইআরআই চেয়ারম্যান ও সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহছানুল হক মিলনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান।

তিনি বলেন, গুণগত শিক্ষার অভাবই শিক্ষার সবচেয়ে বড় সমস্যা। প্রতিবছর এসএসসিতে ২.৫ লাখ শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেলেও বাস্তব শিক্ষার উন্নতি হচ্ছে না। প্রায় ১০ লাখ শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়, কিন্তু যারা জিপিএ-৫ পায় না, তারা কোথায় যাচ্ছে—এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি। 

প্রবন্ধে বলা হয়, দেশে ডিগ্রি পাস শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১১ শতাংশ। এর মধ্যে ৪.৫ শতাংশ বেকার। তাই জব মার্কেটের চাহিদা অনুযায়ী নতুন প্রজন্মকে শিক্ষিত করতে হবে। 

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের প্রতি দেশের শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার এবং উন্নয়নের জন্য একটি আধুনিক শিক্ষা কমিশন গঠনের দাবি জানান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম আমানুল্লাহ। প্রসঙ্গ ক্রমে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কথা উল্লেখ করে উপাচার্য বলেন, তথ্য প্রযুক্তি, রোবোটিক্স, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়ায় বিকশিত হচ্ছে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে নতুন করে সাজাতে হবে। সিলেবাসে এমন পরিবর্তন আনতে হবে, যা শিক্ষার্থীদের আধুনিক প্রযুক্তি এবং শিল্প খাতের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কাজ করতে সাহায্য করবে। এজন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সিলেবাস সংস্কারের কাজ শুরু হয়ে গেছে। 

সনদধারী অদক্ষ শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়নে নিজেদের উদ্যোগ বিষয়ে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সাঈদ ফেরদৌস বলেছেন, আমাদে লাখ লাখ অনার্স-মাস্টার্স ডিগ্রিধারী থাকলেও সময়োপযোগী দক্ষ জনশক্তির ঘাটতি আছে। এ প্রেক্ষাপটে বাউবি ও ইউনিসেফ তরুণদের দক্ষ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে নতুন কর্মসূচি শুরু করছে। 

ইআরআই সদস্যসচিব সৈয়দ রেজওয়ানুল কবীরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কলার, শিক্ষাবিদ, নীতিনির্ধারক ও গবেষকরা অংশগ্রহণ করেন। 

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে  বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এস এম এ ফায়েজ  বলেছেন,  চাহিদা ভিত্তিক শিক্ষা প্রকৃতই বর্তমান সময়ের চাহিদা। কর্মমুখী বিশেষায়িত শিক্ষাই দেশের বিপুল তরুণ প্রজন্মকে জনসম্পদে রুপান্তর করতে পারে। তাই কর্মমুখী কারিগরি শিক্ষার প্রতি সমাজের কোনো প্রকার অবজ্ঞা সমীচীন নয়। চাকরি, গবেষণা, প্রকৌশল, চিকিৎসা, শিক্ষা ইত্যাদি সকল বিষয়েই বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা রয়েছে। শিক্ষার্থীদের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে হবে। 

চাকরি, গবেষণা, প্রকৌশল, চিকিৎসা, শিক্ষা ইত্যাদি সকল বিষয়েই বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মধ্যকার দূরত্ব ঘুচাতে হবে। 

অধ্যাপক ফায়েজ বলেন, ‘কোটা না মেধা’ এই জিনিস কত বড় হয়ে দাঁড়ালো আমরা দেখেছি। আমি যখন পিএসসির চেয়ারম্যান ছিলাম তখন এটি সামনে আসতো। অনেকে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও আসতো। মুক্তিযোদ্ধাদেরই চিহ্নিত করতে পারছি না। যারা এই কোটায় সুবিধা পাচ্ছেন তাদের সন্তানরাও সুবিধা পাবেন আবার যারা বঞ্চিত তাদের সন্তানরাও বঞ্চিত হচ্ছে। তিনি বলেন, আশাকরি ভালো দিন শিগগিরই চলে আসবে। গ্যাপগুলো পূরণ হয়ে যাবে।

সভাপতির বক্তব্যে এহছানুল হক মিলন বলেন, তাদের দক্ষতা উন্নয়ন না হওয়ায় বেকার হয়ে ঘুরছে, জাতির মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দক্ষতা উন্নয়ন ব্যতিরেকে যেসব শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে, তাদের বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেই।

তিনি বলেন, শিল্পের সাথে শিক্ষার সংযোগ ঘটাতে হবে। উন্নত দেশগুলো শিক্ষার্থীদের চাহিদাভিত্তিক শিক্ষা প্রদান করেই উন্নত হয়েছে। যেসব শিক্ষা বর্তমান বিশ্বে সময়োপযোগী ও চাহিদাসম্পন্ন তা চিহ্নিত করে শিক্ষা কারিকুলাম বিন্যাস করতে হবে।

এসময় উন্নত দেশসহ সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ার শিক্ষা কৌশল আলোকপাত করে, কীভাবে তারা মেধা পাচার প্রতিরোধ করেছেন, তার কৌশল শিক্ষানীতিতে যুক্ত করার সুপারিশ করেন তিনি।