কৃষিতে প্রযুক্তি ব্যবহারে ডেল্টাপ্ল্যানে ছয়টি হটস্পট
খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষকের ন্যায্যতা নিশ্চিতে গবেষণা ও প্রযুক্তিতে গুরুত্বারোপ

কৃষির আধুনিকায়নে গবেষণা ও প্রযুক্তির টেকসইয়ের ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। সোমবার (৫ মে) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁয় হোটেলে কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা ও প্রাণ-প্রকৃতি সম্মেলনের বক্তারা এই আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের কারণে মাছ ও ফসল দূষিত হচ্ছে। তাই কীটনাশক ব্যবহারে নীতি গ্রহণ করতে হবে। উৎপাদন বৃদ্ধি করতে গিয়ে আধুনিক কৃষির নামে মাটি ও পানির উর্বরতা ধ্বংস করা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, এক সময় কৃষির অধীনেই মৎস ও প্রাণী সম্পদ ছিল। এখন এগুলো আলাদা হয়েছে। পণ্য ভিত্তিক কৃষকও আলাদা হয়েছে। মৎসের ক্ষেত্রে আমরা যদি দেখি, উন্মুক্ত জলাশয় থেকে মাছ আরোহণে বাংলাদেশ ভারতের পরই ২য় স্থানে আছে। অথচ হাওর, নদী-নালা ধ্বংস করছি আমরা। জলাশয়গুলোকে রক্ষা করতে চাচ্ছি যখন তখন আবার দেখা যাচ্ছে কৃষিতে ব্যবহৃত কীটনাশকে মাছ মারা যাচ্ছে।
বক্তব্যে কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়নবলেছেন, কৃষি আধুনিকায়নে ২৫ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা করতে যাচ্ছে সরকার। আমাদের ডেল্টাপ্ল্যানে ছয়টি হটস্পট রয়েছে। সে অনুযায়ী কীভাবে এ সেক্টরকে ঢেলে সাজানো যায়, সে কাজ চলছে। এতে ৯টি থিমেটিক এলাকায় ভাগ করে নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই এর অগ্রগতি নিয়ে বিস্তারিত জানাতে পারবো।
মাটির ঊর্বরতা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে উল্লেখ করে কৃষি সচিব আরো বলেন, আমাদের কৃষি কমিশন না থাকা নিয়ে বিভিন্ন কথা হয়। এ সেক্টরে কোনও নতুনত্ব আসেনি বা দীর্ঘমেয়াদি কোনও পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি। তবে আমরা সবকিছু যাচাই করে বাস্তব পদক্ষেপ নিতে চাই। কৃষির স্বাস্থ্যের কথা বললে মাটির ঊর্বরতার কথা বলতে হয়। আমরা সেটি নিয়ে কাজ করছি। কেননা,মাটির ঊর্বরতা অনুযায়ী কোন অঞ্চলে বা কোন মাটিতে কী ধরনের ফসল উৎপাদন ভালো হয়, তা যাচাই করে ফসল উৎপাদনের দিকে এগোতে হবে।
বাংলাদেশ প্রাণী সম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক মহাপরিচালক ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, স্বাধীনতার পর গত ৫৪ বছরে দেশের কৃষি খাতে সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়েছে। স্বাধীনতার পর আমাদের খাদ্য শস্য উৎপাদন ছিল ১ কোটি টন, যা এখন ৫ কোটি টন ছাড়িয়েছে। এ সময়ে দেশের কৃষি খাতের মোট উৎপাদন ৩ হারে বেড়েছে, যেখানে সারা বিশ্বে ২ দশমিক ৪ শতাংশ হারে বেড়েছে। উৎপাদনের দিক থেকে আমরা যথেষ্ট এগিয়েছি। কিন্তু তারপরও আমাদের খাদ্য সংকট আছে, সমস্যা আছে। প্রতি বছর আমাদেরকে ১ কোটি টনের বেশি বিভিন্ন ধরনের খাদ্যপণ্য আমদানি করতে হয়। আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে গেছি বলা হয়ে থাকে। এটা কথার কথা, অনেকটা রাজনৈতিক—এর কোনো ভিত্তি নেই।
বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষকের আয় ন্যায্যতা নিশ্চিতে গবেষণায় ও প্রযুক্তিতে গুরুত্ব আরোপ করে এসিআই এগ্রিবিজনেসের প্রেসিডেন্ট ড. এফ এইচ আনসারী বলেন, ক্রমাগত ফার্ম লেবার কমছে। ১৯৬০ সালে ৬০ শতাংশ মানুষ কৃষি কাজে যুক্ত ছিল। তা অর্ধেক হ্রাস পেয়ে এখন নেমেছে ৩০ শতাংশে। ২০৩০ সাল নাগাদ সেটি ২৫ শতাংশে নামবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিদ্যমান এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন তরুণদের অন্তর্ভুক্ত করা। আর উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার করার ফলে কৃষি খাতে তরুণদের আগ্রহ বাড়বে। ধানকেন্দ্রিক গবেষণাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়। এর পাশাপাশি গম-ভূট্টায় শক্তিশালী গবেষণা প্রয়োজন। কৃষি গবেষণায় উন্নত ল্যাবরেটরি, পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের অংশীদারত্বকে উৎপাদন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া ও উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার করার মাধ্যমে কৃষিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনয়ন করতে হবে।
এছাড়াও কৃষিখাতে ঋণ দেয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা থাকলেও ব্যাংকগুলো তা যথাযথভাবে পালন করছে না বলে অভিযোগ করেছেন ইস্ট কোস্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজম জে চৌধুরী। তিনি বলেন, কৃষিখাতে আমাদের উৎপাদন বাড়াতে ব্যাংকের ঋণব্যবস্থাকে উন্নতি করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রায় ৩৮ হাজার কোটি টাকা এ খাতে ঋণের জন্য নির্ধারণ করে রাখলেও অধিকাংশ বেসরকারি ব্যাংক তা মানছে না। ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে কিভাবে সাধারণ কৃষক আরো বেশি সুবিধা নিতে পারে, সে বিষয়ে ভূমিকা রাখা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে বিশেষায়িত ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য বিশেষায়িত নিয়ম থাকতে হবে।