জন আস্থার চ্যালেঞ্জ ভুয়া তথ্য; সচেতনতায় গুরুত্বারোপ
দক্ষিণের দুনিয়ায় ডিজিটাল শাসন ব্যবস্থা তৈরির প্রত্যয়ে ওয়ার্কশপ ও নীতি আলোচনার মধ্য দিয়ে ঢাকার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে শেষ হলো তিন দিন ব্যাপী বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরাম।
ফোরামের শেষ দিনে ১ নভেম্বর, শনিবার ‘মিডিয়া ও ডিজিটাল বিশ্বাসঃ ভুয়া তথ্যের যুগে জনআস্থা টিকিয়ে রাখার চ্যালেঞ্জ' শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দৈনিক যুগান্তরের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের ইন চার্জ সাইফ আহমাদ।
কিভাবে সংবাদমাধ্যম ডিজিটাল যুগে জনগণের আস্থা রক্ষা, ভুয়া তথ্য প্রতিরোধ, এবং অনলাইন বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরিতে ভূমিকা রাখতে পারে তা উপস্থাপন করেন তিনি।
সাইফ আহমদ বলেন, আমরা এমন এক সময়ের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি, যেখানে তথ্যের অভাব নেই, কিন্তু বিশ্বাসের অভাব ভয়াবহ। সত্য–মিথ্যার সীমারেখা ধোঁয়াশা হয়ে গেছে। তবুও গনমাধ্যম কর্মীরা এখনো সত্যের পক্ষে লড়ছে—এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি।
তিনি আরও বলেন, ডিজিটাল বিশ্বাস পুনর্গঠন করতে হবে সবাই মিলে। সাংবাদিকরা সত্য বলবে, প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান স্বচ্ছতা রাখবে,সরকার নিয়ন্ত্রণ নয় বরং স্বাধীন ফ্যাক্টচেকিং উদ্যোগকে উৎসাহ দেবে। আর জনগণ সচেতন হবে। সচেতন নাগরিকরাই ভুয়া খবরের সবচেয়ে বড় প্রতিরোধক।
'ভুয়া তথ্য আমাদের বিভক্ত করে, কিন্তু সাহসী সত্য আমাদের এক করে। চলুন আমরা সবাই মিলে সেই বিশ্বাস ফিরিয়ে আনি' - যোগ করেন তিনি।
দৈনিক সমকালের সহকারী সম্পাদক ও সেন্টার ফর টেকনোলজি জার্নালিজম সভাপতি হাসান জাকিরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন যনুনা টেলিভিশনের গবেষক জাহিদ হোসেন খান ও এএফপির ফ্যাক্ট চেক সম্পাদক (বাংলা) মোহাম্মদ ইয়ামিন।
সেশনের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য প্রযুক্তি বিভাগের উপসচিব মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ডিজিটাল যুগে তথ্যপ্রবাহ দ্রুত হলেও, বিভ্রান্তিকর তথ্যের ঝুঁকিও বেড়েছে। জনগণের আস্থা ধরে রাখতে সাংবাদিকদের ভূমিকা এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সংবাদমাধ্যম শুধু তথ্য দেয় না, বরং সত্য, নৈতিকতা ও দায়িত্বশীলতার প্রতীক।
তিনি আরও বলেন, অনলাইন প্ল্যাটফর্মে যাচাই–বাছাই ছাড়া কোনো তথ্য প্রচার করা উচিত নয়। দায়িত্বশীল সাংবাদিকতাই পারে ডিজিটাল ট্রাস্ট ও সামাজিক স্থিতি বজায় রাখতে। মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার আশা প্রকাশ করেন, বিআইজিএফ ২০২৫–এর মতো আয়োজনগুলো সত্যনিষ্ঠ, আস্থাভিত্তিক ও দায়িত্বশীল ডিজিটাল সমাজ গঠনে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে গবেষক জাহিদ হোসেন খান বলেন, যারা সাধারণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী তাদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন। ভালো কনটেন্ট এবং গুণগত তথ্য প্রকাশ ও প্রচারের জন্য সাংবাদিকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণের আওতায় আনা প্রয়োজন। গণমাধ্যম এবং সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের নিয়মিত গবেষণা এবং দক্ষতাগত উন্নয়ন গণমাধ্যমের প্রতি মানুষের বিশ্বাসকে আরও বাড়াতে পারে।
ভুল তথ্য ডিবাং করার কৌশল তুলে ধরে এএফপির ফ্যাক্ট চেক সম্পাদক (বাংলা) মোহাম্মদ ইয়ামিন বলেন, চটকদার, চিত্তাকর্ষক ও আবেগী কোনো পোস্ট দেখলে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের অবশ্য তা ক্রিটিক্যাল দৃষ্টিতে দেখা উচিত। নির্ভরযোগ্য সোর্স থেকে নিশ্চিত হয়ে তবেই সেগুলো শেয়ার করা যেতে পারে।
বিআইজিএফ মহাসচিব মোহাম্মদ আব্দুল হক অনু জানান, ফোরামটি বাংলাদেশে ইন্টারনেট গভর্নেন্স বিষয়ে বহু–স্টেকহোল্ডার সংলাপ ও নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এবারের ২০ তম সভায় শিশু-কিশোরদের নিয়ে একটি কর্মশালা ছাড়াও তিন দিনে মোট নয়টি বিষয়ে প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
তিন দিনের এই ফোরামে অংশ নেয় সরকার, বেসরকারি খাত, টেকনিক্যাল কমিউনিটি, শিক্ষাবিদ, সুশীল সমাজ, তরুণ ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা।







