বিজয় দিবসে গ্রে না হোয়াইট; এনইআইআর না আনঅফিসিয়াল?

৩১ অক্টোবর, ২০২৫ ০০:১১  
বিজয় দিবসে গ্রে না হোয়াইট; এনইআইআর না আনঅফিসিয়াল?

এবারের বিজয় দিবস, ১৬ ডিসেম্বর থেকে চালু হচ্ছে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর)। প্রায় দশক সময় ধরে অবৈধ হ্যান্ডসেটমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে নেয়া এই উদ্যোগ চালু হওয়ার আগের সব গ্রে চ্যানেল কিংবা ক্লোন ফোনই স্বংয়ক্রিয় ভাবে বৈধতা পাবে নতুন এই পদ্ধতিতে। এরপর থেকে কোনো হ্যান্ডসেটই আর অনিবন্ধিত অবস্থায় বাংলাদেশের নেটওয়ার্কে চলবে না। 

এমন পরিস্থিতিতে কেবল ‘আনঅফিসিয়াল হ্যান্ডসেট’ আমদানীকারীরাই নয়; সাধারণ ক্রেতা বা গ্রাহকরাও রয়েছেন দুশ্চিন্তায়। গ্রাহকদের ভাষ্য, বর্তমানে একই মডেলের একটি ‘অফিসিয়াল হ্যান্ডসেট’ অর্থাৎ ট্যাক্স-ভ্যাট দিয়ে বৈধ পথে আনা হ্যান্ডসেটের দাম ক্ষেত্র বিশেষে ‘আন অফিসিয়াল’ হ্যান্ডসেটের চেয়ে দেড় থেকে দ্বিগুণ বেশি হয়ে যায়। সে কারণে গ্রাহকরা দিনে দিনে ঝুঁকেছেন এই ‘আন অফিসিয়াল’ হ্যান্ডসেটের দিকে, বড় হয়েছে এর বাজার। 

বিটিআরসির হিসাবে দেশে থাকা ট্যাক্স-ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে আনা আনঅফিসিয়াল মোট হ্যান্ডসেটের হার ৬০ শতাংশ। তবে ব্যবসায়ীদের দাবি, এই হার ৯০ শতাংশের বেশি। বর্তমানে বাজারে বা দোকানে যেসব হ্যান্ডসেট রয়েছে, তার বেশিরভাগই অবৈধ বা ‘আন অফিসিয়াল’। তাই তারা চাইছেন, তাদেরকেও যেন এই প্রক্রিয়া অন্তর্ভূক্ত করা হয়। 

সূত্রমতে, বিটিআরসি থেকে এনইআইএর বাস্তবায়নে জিরো টলারেন্স এবং সময় বেধে দেয়ার পর থেকেই রাজধানীর হাতিরপুলের মোতালেব প্লাজাসহ বসুন্ধারা শপিং মল ও যমুনা ফিচার পার্কের মতো অভিজাত বিপনী বিতানে গড়ে ওঠা আনঅফিসিয়াল মোবাইল ব্যবসায়ীরা এখন প্রভাবশালীদের দুয়ারে দুয়ারে ধর্না দিতে শুরু করেছেন। ৩০ অক্টোবর বিকেলের দিকে আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি কার্যালয়ে গিয়েও সংশ্লিষ্ট শীর্ষ কর্মকর্তাদের দ্বারস্থ হয়েছেন দেশের ‘আন অফিসিয়াল’ মোবাইল বিক্রেতাদের সংগঠন মোবাইল বিজনেস কমিউনিটির কার্য নির্বাহী কমিটির সদস্যরা।

সংগঠনটির সভাপতি মো. আসলাম বলেছেন, হ্যান্ডসেটের মার্কেটে আমাদের মার্কেট শেয়ার হচ্ছে ৯০ শতাংশ। পুরো দেশেই তো আমাদের প্রোডাক্ট যায়। ১০ থেকে ১৫ লাখ পরিবার এখানে জড়িত। আর আমরা যেই প্রডাক্টটা বিক্রি করে আসছি সেটাকে এখন ওনারা বলছেন অবৈধ। আমার এই ব্যবসাটা বন্ধ হয়ে গেলে তো এদের না খেয়ে মরতে হবে। আমরা আজ (বৃহস্পতিবার) বিটিআরসিতে গেছিলাম। আমরা বলেছি আমাদের পণ্যগুলো আমদানি ট্যাক্স কমিয়ে একটা সুযোগ দেন, আমরাও ট্যাক্স-ভ্যাট দিয়েই মাল আনতে চাই।

এ বিষয়ে বিটিআরসি চেয়ারম্যান এমদাদ উল বারী বলেছেন, “এনইআইআর চালু করে আমরা প্রতিটি সেট নিবন্ধনের আওতায় আনছি। আমরা তো ইমপোর্ট বন্ধ করছি না। আমরা তো ইমপোর্টের ওপর কোনো বিধিনিষেধ দিচ্ছি না। এনইআইআর করা হচ্ছে যারা অবৈধভাবে সেট আনেন তাদেরকে আটকানোর জন্য।”

২০২১ ও ২০২৪ সালে দুই বার ব্যর্থ হওয়ার পর এবারও শেষতক বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে কি না কিংবা কোনো চ্যালেঞ্জ ফেস করছেন কি না প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ফিজিক্যাল ওয়ার্ল্ডের নিরাপত্তা আর টেলিকম বা সাইবার ওয়ার্ল্ডের নিরাপত্তার মধ্যে পার্থক্য আছে। ফিজিক্যাল ওয়ার্ল্ডে একটা লোক কামান-বন্দুক নিয়ে এলে নিরাপত্তার ঝুঁকিটা দেখা যায়। অথবা এখানে একটা আর্চওয়ে বসালেও সঙ্গে অস্ত্র আছে কী না সেটা শনাক্ত করা যায়। কিন্তু সাইবার স্পেসে এই নিরাপত্তাটা নিশ্চিত করা খুব দুরূহ। কেননা, সাইবার স্পেসে সামান্য কার্যকর নিরাপত্তা করতে গেলেও সাধারণ মানুষের জীবনে অনেক চাপ পড়ে, দুর্ভোগ নেমে আসে। এটা বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা ১৬ ডিসেম্বর থেকে অনেক কিছুই বন্ধ করে দিতে পারি। কিন্তু এর ফলে মানুষের জীবনযাত্রায় যে ভয়ানক ভোগান্তিটা আসবে এটা হ্যান্ডেল করা আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সে কারণে আমরা শুরু করছি খুবই ল্যুজ বা খুবই মাইল্ডভাবে। আস্তে আস্তে যেভাবে রশিটাকে টাইট করা হয় আমরা সেভাবে করব। আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মানুষের দুর্ভোগ কমানো।

এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেছেন, অবৈধভাবে ফোন আমদানির ফলে প্রতি বছর প্রায় পাঁচশ কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়। এনইআইআর কার্যকর হলে এই ক্ষতি কমে আসবে। এই অবৈধ ফোনগুলো আসে কর ফাঁকি দিয়ে। এগুলো আনবক্সড করে কার্টনে আনা হয়, যাতে স্বল্পতম জায়গায় আনা যায়। আমরা এই ব্যবসায়ীদেরও ক্ষতি না করে একটা রূপান্তর ঘটাতে চাই। এবং সেজন্য আমরা তাদেরকে সময় দিচ্ছি। যাতে এই সময়ের মধ্যে তারা আমদানির এই চক্রটাকে বন্ধ করতে পারে। কারণ আমরা এটা চালু করলে আর ‘গ্রে হ্যান্ডসেট’ অ্যালাউ করব না। তখন আমরা ব্ল্যাক অথবা হোয়াইটে চলে যাব।

তবে আগে তিন দফা উদ্যোগ নিয়ে এবং এক দফা বাস্তবায়ন করেও বন্ধ হয়ে যাওয়া এনইআইআর এবং ব্যবসায়ীদের টাকাতেই চালু হওয়া প্রকল্পটির পুর্ণাঙ্গস বাস্তবায়ন নিয়ে জনমনে শঙ্কা রয়েই গেছে। সাধারণ গ্রাহকেরা মনে করছেন, দেশে উৎপাদিত কিংবা চ্যানেল পণ্যের দাম ক্রেতার সাধ্যের মধ্যে থাকলে আন অফিসিয়াল ফোন এম্নিতেই বাজার হারাবে। আবার যে বিপুল সংখ্যক ব্যবসায়ী এই আনঅফিসিয়াল হ্যান্ডসেট কেনা-বেচায় জাড়িত তারা যেন জীবিকাহীন না হয়ে পড়েন সেটাও খেয়াল রাখতে হবে। এমন বৈপরীত্যে ‘বিজয় দিবস’ এ কে হাসবে গ্রে, না হোয়াট; অফিসিয়াল না আনঅফিসিয়াল-এটাই বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।