সূত্রপাত সিইসি বিভাগ থেকে
ফেসবুক পোস্টে এলোমেলো ইউআইইউ!

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) এক ছাত্রীর ভাইরাল ফেসবুক পোস্ট নিয়ে শুরু। এরপর শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবিতে আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে দেয়ায় উপচার্য সহ এবং কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগের প্রধানের পদত্যাগ দাবি। সবশেষ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে উপাচার্যসহ ১২ শিক্ষকের পদত্যাগের সিদ্ধান্তের চিঠি প্রকাশ।
এই দুই ফেসবুক পোস্টেই যেনো এলোমেলো হয়ে গেলো রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টি। শনিবার রাত ১২টার পরও অবরুদ্ধ থাকতে হয়েছে ২৫ জন শিক্ষক-কর্মকর্তাকে। এসময় অভিযুক্ত ২ শিক্ষক বাদে বাকিদের পদত্যাগপত্র প্রত্যাহারের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। রাত ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা উপাচার্য ও সিএসই বিভাগের প্রধান ছাড়া বাকিদের বেরিয়ে যাওয়ার জন্য রাস্তা করে দেন। অগত্যা রবিবার দিবাগত রাত ১টার পর আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠন প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস অ্যালায়েন্স অব বাংলাদেশ-পুসাবের ৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। এতে লন্ডভন্ড হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, শিক্ষার্থীরা রাতে দুই পাশে মানববন্ধনের মতো করে দাঁড়িয়ে শিক্ষকদের সম্মানের সঙ্গে বের হয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেন। এসময় অধিকাংশ শিক্ষক বেরিয়ে গেছেন। তবে উপাচার্য অধ্যাপক আবুল কাশেম মিয়া ও সিএসই বিভাগের প্রধান অধ্যাপক নুরুল হুদা অবরুদ্ধ নাকি বেরিয়ে গেছেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, সম্প্রতি কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এক ছাত্রীর বাবা মারা যান। পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়ার পর ওই ছাত্রী বিভাগে মিড টার্ম পরীক্ষা দেওয়ার জন্য আবেদন করলে তার কাছে ডেথ সার্টিফিকেট দাবি করে বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নুরুল হুদা।
বিষয়টি নিয়ে ওই ছাত্রী ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। তার এ স্ট্যাটাস ভাইরাল হয়ে যায়। এরপর শিক্ষার্থীরা শিক্ষক নুরুল হুদার পদত্যাগ দাবি করে আন্দোলনে নামেন।
পূর্বঘোষণা অনুযায়ী—শনিবার সকাল ৯টা থেকে তারা অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। পরে দুপুরের দিক থেকে তারা আমরণ অনশনে বসেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে রাতে একযোগে উপাচার্য, ডিন ও বিভাগীয় প্রধানরা পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
এদিকে, তার সঙ্গে ডিন, বিভাগীয় প্রধানসহ আরও ১০ জন কর্মকর্তা স্ব স্ব পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। তারা নিয়ম অনুযায়ী—উপাচার্য বরাবর পদত্যাগপত্র দিয়েছেন। পদত্যাগপত্রে তারা লেখেন, কিছু শিক্ষার্থীর অন্যায় দাবি-দাওয়ার প্রতিবাদে আমরা নিম্নস্বাক্ষরকারীরা ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রশাসনের বিভিন্ন পদ থেকে পদত্যাগ করছি।
এতে সই করেছেন মো. রেজওয়ান খান, এসওএসই অনুষদের ডিন ও কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. হাসান সারওয়ার, মোহাম্মদ ওমর ফারুক, খন্দকার আব্দুল্লাহ আল মামুন, মো. কে মাসুকুর রহমান, ড. তাহমিনা ফয়েজ, ড. সুমন আহমেদ, ড. জান্নাতুন নুর মুক্তা, ড. এস এম রফিকুল ইসলাম, ডিরেক্টর (কো-অর্ডিনেশন) অধ্যাপক এ এস এম সালাহউদ্দিন।
এসময় ফেসবুক পোস্টে প্রকাশিত ‘কিছু শিক্ষার্থী’ শব্দবন্ধের প্রতি আপত্তি জানিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন। তাদের স্পষ্ট দাবি, পদত্যাগপত্রে ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী নয়’ বরং ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীর পক্ষ থেকে’ এই বিষয়টি উল্লেখ করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে ভিন্ন মত পোষণ করেছেন। তাদের ভাষ্য, আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩০০ থেকে ৩৫০ জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৮ হাজার। এই কারণে উপাচার্য তার পদত্যাগপত্রে সঠিক তথ্যটিই উল্লেখ করেছেন। তবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা কর্তৃপক্ষের এই যুক্তি মানতে নারাজ।
এর আগে শনিবার সকাল থেকে ৩ দফা দাবিতে আন্দোলনে নামেন ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসে অবস্থান কর্মসূচির মধ্য দিয়ে তাদের আন্দোলন শুরু হয়। পরে দাবি আদায়ে আমরণ অনশনের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের ৩ দফা দাবিগুলো হলো-
১. বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ ছাড়াও ইউআইউ রিফর্ম ১.০ ও জুলাই বিপ্লবে বাধা দেয়া, এক ছাত্রীর বাবা মারা যাওয়ার পর তার কাছে কাউন্সিলর থেকে ডেড সার্টিফিকেট চাওয়া, আইসিইউ ফেরত শিক্ষার্থীর পরীক্ষায় অংশগ্রহণে অস্বীকৃতি জানানো, বিশ্ববিদ্যালয়ে একক সিন্ডিকেট তৈরির অভিযোগে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নুরুল হুদার পদত্যাগ।
২. মিড টার্ম পরীক্ষার সময় ১৫ মিনিট কমিয়ে দেয়া হয়েছে। এটি আবারও আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে।
৩. ইউআইউ রিফর্ম ১.০ এ যেসব দাবি মানা হয়েছিল, সব দাবি অনতিবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে। বিশেষভাবে ইমপ্রুভমেন্ট পরীক্ষার ফি মিড টার্মে কোর্সপ্রতি ২ হাজার টাকা ও ফাইনাল পরীক্ষায় ৩ হাজার টাকা নির্ধারণ করতে হবে।