৬ দাবিতে তেজগাঁও সাত রাস্তায় পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ

১৬ এপ্রিল, ২০২৫  
১৬ এপ্রিল, ২০২৫  
৬ দাবিতে তেজগাঁও সাত রাস্তায় পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ

ছয় দফা দাবিতে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা মোড়ে সড়ক অবরোধ করেছে সরকারি, বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ-টিএসসিসহ বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের আওতাভুক্ত শিক্ষার্থীরা। আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বেন না বলে জানিয়েছেন ‘কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ’র ব্যানারে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। স্লোগানে স্লোগানে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা অবিলম্বে তাদের ছয় দফা দাবি মেনে নেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন। দ্রুত দাবি না মানা হলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তারা।

এদিকে, শিক্ষার্থীদের অবস্থানের কারণে ওই এলাকা দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। গুলশান বিভাগ ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে বিষয়টি জানিয়ে তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে পোস্ট দেওয়া হয়েছে।

পোস্টে উল্লেখ করা হয়, তেজগাঁও সাতরাস্তা পয়েন্টে পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা তাদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে সড়কে অবস্থান করে ইনকামিং, আউট গোয়িং এ যানচলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন। যার ফলে উত্তরা- বনানী -মহাখালী রুটে ইনকামিং এর যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। তবে মহাখালী থেকে বনানী-উত্তরা রুটে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। এছাড়া উত্তরা- বনানী-মহাখালী-তেঁজগাও রুটে যারা যাবেন তাদের আমতলী বামে টার্ন করে গুলশান-১, পুলিশ প্লাজা, শান্তা ডাইভারশন ব্যবহার করার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে। এছাড়া যারা গুলশান-১ থেকে আমতলীর দিকে যাবেন তাদেরও একই ডাইভারশন ব্যবহার করার জন্য অনুরোধ জানানো হচ্ছে। 

বুধবার (১৬ এপ্রিল) সকাল ১০টার দিকে সাতরাস্তা মোড়ে অবস্থান নিয়ে এ বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীর। এ সময় আশপাশের সড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।  দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তেজগাঁওয়ের সাত রাস্তা মোড়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপে এ ঘোষণা দেন আন্দোলনের ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট প্রতিনিধি মাশফিক ইসলাম। তিনি বলন, বলেন, আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বো না। আজকে আমাদের ছয় দফা দাবি আদায় করে রাজপথ ছাড়বো। মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের এখানে এসে দাবি পূরণ করতে হবে।

ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মিঝদাহুল ইসলাম রিফাত বলেন, আমরা আগের ছয় দফা দাবির সঙ্গে আরও একটি নতুন দাবি যুক্ত করে আন্দোলনে নেমেছি। আমাদের সর্বশেষ দাবি হলো—ল্যাব এসিস্টেন্টদের ১৬তম গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেডে পদোন্নতির সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে। আমরা চাই না, কেউ পিয়ন হিসেবে যোগ দিয়ে পরে আমাদের শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।

তিনি আরও বলেন, আমাদের এ ন্যায্য আন্দোলনের সঙ্গে আমাদের অনেক শিক্ষকও একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।

শিক্ষার্থীদের ৬ দাবি

১। জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় হাইকোর্ট কতৃর্ক বাতিল করতে হবে। পাশাপাশি, ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর পদবি পরিবর্তন ও মামলার সাথে সংশ্লিষ্টদের স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করতে হবে। ২০২১ সালে রাতের আঁধারে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে বাতিল এবং সেই বিতর্কিত নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে।

২। ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যেকোনো বয়সে ভর্তির সুযোগ বাতিলসহ উন্নত বিশ্বের আদলে চার বছর মেয়াদি মানসম্পন্ন কারিকুলাম নিশ্চিত করে একাডেমিক কার্যক্রম পরবর্তী প্রবিধান থেকে পর্যায়ক্রমিকভাবে সম্পূর্ণ ইংরেজি মাধ্যমে চালু করতে হবে।

৩। উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও সমমান (১০ম গ্রেড) এর পদ চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং ও মনোটেকনোলজি (সার্ভেয়িং) হতে পাসকৃত শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও যেসব সরকারি, রাষ্ট্রায়ত্ত, স্বায়ত্তশাসিত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নিম্নস্থ পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৪। কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, সহকারী পরিচালক, বোর্ড চেয়ারম্যান, উপসচিব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সকল পদে কারিগরি শিক্ষা বহির্ভূত জনবল নিয়োগ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং তা আইনানুগভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এই পদগুলোতে অনতিবিলম্বে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ এবং সকল শূন্য পদে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে।

৫। কারিগরি শিক্ষায় বৈষম্য ও দুরবস্থা দূর করার পাশাপাশি দক্ষ জনসম্পদ তৈরিতে ‘কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়’ নামে স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে।

৬। পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক ইন্সটিটিউট হতে পাসকৃত শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগের লক্ষ্যে একটি উন্নতমানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পাশাপাশি, নির্মাণাধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (নড়াইল, নাটোর, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁও) পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক হতে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্পাস ও ডুয়েটের আওতাভুক্ত একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে আগামী সেশন থেকে শতভাগ সিটে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।