নতুন বংলা বর্ষের প্রথম ভোর
প্রশাসনিক ভবনের সামনেই কুয়েট শিক্ষার্থীদের রাত যাপন

বন্ধ থাকা খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) শিক্ষার্থীরা রবিবার রাত ৮টার মধ্যে হল খুলে দেওয়ার দাবি জানালেও তাতে সাড়া দেয়নি কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় শতাধিক শিক্ষার্থী প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান অব্যাহত রাখেন। রাতভর সেখানে অবস্থান করার সিদ্ধান্ত নেয় তারা। এমন পরিস্থিতিতে নতুন বাংলা বর্ষরের প্রথম ভোরকে বরণ করলো শিক্ষার্থীরা। কর্তৃপক্ষের পরবর্তী ইতিবাচক সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত তারা ক্যাম্পাস ত্যাগ করবে না বলেও ঘোষণা দেন তারা।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাত-ভর ক্যাম্পাসের দুটি গেটে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
রাত পৌনে ৯ টায় প্রশাসনিক ভবনের সামনে প্রেস ব্রিফিং শিক্ষার্থীদের পক্ষে সিএসসি ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী মাসুদুর রহমান রাব্বি বলেন, ‘দুপুর ২ টা থেকে আমরা ক্যাম্পাসে অবস্থান করছি। প্রশাসনিক ভবনের সামনে প্রশাসনের কাছে আমাদের আবেদন তুলে ধরেছিলাম, যে কোনোভাবে হোক আমাদের সকল আবাসিক হল খুলে দিতে হবে। কিন্তু রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত প্রশাসনের কাছ থেকে কোনরকম পদক্ষেপ কিংবা ফিডব্যাক জানতে পারিনি যেটি আমাদের জন্য খুবই নিরাশাজনক। আমরা ভেবেছিলাম শিক্ষক, প্রশাসন শিক্ষাবান্ধব। কিন্তু শিক্ষাবান্ধব প্রশাসনের কাছ থেকে কোন ফিডব্যাক না পেয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে আমরা রাত্রিযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগামীকাল সকালে আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ জানানো হবে। তবে আমরা ক্যাম্পস ছেড়ে যাবো না।’
শিক্ষার্থীরা বলেন, হল ও একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় তাদের লেখাপড়া বিঘ্নিত হচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থী হলে থেকে বাইরে টিউশনি করেন। তারা টিউশনি করতে পারছেন না।
কুয়েটের সিন্ডিকেট সদস্য, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, সিন্ডিকেটের সভা ছাড়া হল খোলা ও একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব নয়। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে লিখিত দাবি গ্রহণ করে তিনি জানান, তিনি নিজে বিষয়টি নিয়ে সুরহার জন্য ভিসি’র কাছে যাবেন। তাদের প্রাণের দাবি তার কাছে তুলে ধরবেন।
তিনি বলেন, আমরা ছাত্রদের কাছে তাদের পরিকল্পনা জানতে চেয়েছি। কিভাবে করলে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারি সে বিষয়টি জেনেছি। এর আগেও ছাত্রদের পক্ষ থেকে পাওয়া ৫টি দাবি নিয়ে শিক্ষক সমিতি এবং সকল শিক্ষক একমত ছিলো। আমরা রোজার মধ্যে এসব নিয়ে কাজ করেছি। আজ (রবিবার) এ বিষয়ে রিপোর্ট দেয়ার কথা। সকালে এ নিয়ে বৈঠকও করেছি। তারা এ নিয়ে প্রতিবেদন দেবেন বলে আমরা মোটামুটি নিশ্চিত হয়েছি। আমরা আশা করি অতিদ্রুত এসব সমাধান হবে। আমরা দীর্ঘ সময় ক্যাম্পাস বন্ধ রাখতে চাই না। তবে যতদ্রুত সম্ভব সিন্ডিকেট সভা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে।
এর আগে, রাত ৮টার মধ্যে হল খুলে দেওয়ার দাবিতে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেয় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী। এসয় তারা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন করেন তারা।
শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানান, দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী দুপুর আড়াইটার দিকে বন্ধ থাকা কুয়েটের প্রধান গেটের সামনে জড়ো হয়। কুয়েট কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী তারা বেলা ৩টার দিকে আইডি কার্ড দেখিয়ে ক্যাম্পাসের মধ্যে প্রবেশ করে। এরপর তারা প্রশাসনিক ভবনের সামনে যায়।
সেখানে বিকাল পৌনে ৪টার দিকে শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধি দল শিক্ষার্থীদের কাছে আসেন। শিক্ষকরা তাদেরকে বুঝিয়ে বলেন যে, সিন্ডিকেটের সভা ছাড়া একাডেমিক কার্যক্রম ও হলগুলো খোলা সম্ভব নয়।
শিক্ষার্থীরা প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, হল ও একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় তাদের লেখাপড়া বিঘ্নিত হচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থী হলে থেকে বাইরে টিউশনি করেন। তারা টিউশনি করতে পারছেন না। তারা রাত ৮ টার মধ্যে হল খুলে দেয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন। কর্তৃপক্ষ যদি দাবি পূরণ না করে তাহলে তারা আলোচনা করে পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণ করবেন।
শিক্ষার্থীরা জানান, ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি নিয়ে বিরোধের জের ধরে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের নেতাকর্মী ও এলাকাবাসীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে শতাধিক আহত হন। এ ঘটনার পর ২৫ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত একাডেমিক কার্যক্রম ও আবাসিক হলগুলো বন্ধ ঘোষণা করেছিল কর্তৃপক্ষ।