সমুদ্র উপকূলে নিরাপত্তা ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সম্প্রসারণ সহ একনেকে ১০ প্রকল্প অনুমোদন

সমুদ্র উপকূলে নিরাপত্তা প্রযুক্তি স্থাপন এবং দুইটি গ্যাস কূপ খননসহ বুধবার ১০টি প্রকল্পে অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভা। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে একনেক বৈঠকে এ অনুমোদ দেয়া হয়।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পঞ্চম জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় আজ ৪ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়।
এর আগে বাংলাদেশের সোনালি ঐতিহ্য মসলিনের সুতা তৈরির প্রযুক্তি ও মসলিন কাপড় পুনরুদ্ধার এবং আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে রাজশাহী বিভাগের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পসহ অনুমোদিত ৯টি প্রকল্প অবগতির জন্য উপস্থাপন করা হয়। বাকি প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে- রংপুর বিভাগীয় সদর দফতর কমপ্লেক্স বিভাগীয় কমিশনার ও ডিআইজির বাংলো নির্মাণ প্রকল্প; সরকারি কর্মচারী হাসপাতালকে ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে উন্নীতকরণ প্রকল্প; উত্তরাঞ্চলের সীমান্তবর্তী সুবিধাবঞ্চিত ৮৬টি এলাকা ও নদী বিধৌত চরাঞ্চলে সমন্বিত প্রাণীসম্পদ উন্নয়ন; সমতল ভূমিতে বসবাসরত অনগ্রসর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির আর্থ-সামাজিক ও জীবন মানোন্নয়নের লক্ষ্যে সমন্বিত প্রাণীসম্পদ উন্নয়ন; মুজিবনগর সেচ উন্নয়ন প্রকল্প; পদ্মা বহুমুখী সেতুর ভাটিতে মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং ও টঙ্গীবাড়ী উপজেলাধীন বিভিন্ন স্থানে পদ্মা নদীর বাম তীর সংরক্ষণ প্রকল্প এবং আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারি প্রজেক্ট।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এসব প্রকল্পের মধ্যে সরকারি অর্থায়ন হবে ৩ হাজার ৯০৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকা, প্রকল্প ঋণ ৮৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৪০৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা।
এরমধ্যে সমুদ্র উপকূলীয় নিরাপত্তায় Establishment of Global Maritime Distress and Safety System & Integrated Maritime Navigation System (EGIMNS)’ প্রকল্পটি ১১৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা থেকে বেড়ে ৯৩২ কোটি ৬০ লাখ টাকা হয়েছে। নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মাধ্যমে জানুয়ারি ২০১৪ থেকে জুন ২০২৫ পর্যন্ত মেয়াদি প্রকল্পটির অধীনে ৭টি লাইট হাউজ, কোস্টাল রেডিও স্টেশন এবং দুবলার চর ও সেন্টমার্টিনে ঢাকাস্থ কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারের সাথে নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ স্থাপনে স্যাটেলাইট ব্যাকআপ ব্যবস্থাকরণ সহ বেশ কিছু কাজ সম্পাদন করা হবে।
আর গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডের (এসজিএফএল) মাধ্যমে ‘ডুপিটিলা-১ ও কৈলাশটিলা-৯নং কূপ (অনুসন্ধান কূপ) খনন’ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৬৪৬ কোটি ৪৮ কোটি টাকা। প্রকল্পটির মেয়াদকাল অক্টোবর ২০২৪ থেকে সেপ্টেম্বর ২০২৬ পর্যন্ত।
এছাড়াও অনুমোদিত বাকি ৮টি প্রকল্পের মধ্যে মোংলা বন্দরে ‘পশুর চ্যানেলে সংরক্ষণ ড্রেজিং’ প্রকল্পও পরিকল্পনায় রয়েছে, যা জানুয়ারি ২০২৫ থেকে ডিসেম্বর ২০২৯ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হবে। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ১ হাজার ৫৩৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা, যার মধ্যে ১৩৮৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা সরকারি তহবিল থেকে এবং ১৫৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব অর্থায়নে হবে। ‘মোংলা বন্দরের জন্য সহায়ক জলযান সংগ্রহ (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্পটি ৭৬৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা থেকে বেড়ে ৯৩৬ কোটি ৫৬ কোটি টাকা হবে।
‘নারায়ণগঞ্জের খানপুরে অভ্যন্তরীণ কনটেইনার এবং বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণ (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্পটি ২২৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা থেকে বেড়ে ৬১৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা হয়েছে, যা বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) বাস্তবায়ন করছে। এই প্রকল্পের মেয়াদকাল জানুয়ারি ২০২০ থেকে জুন ২০২৭ পর্যন্ত।
‘ডাল ও তৈলবীজ উৎপাদনের মাধ্যমে টেকসই পুষ্টি নিরাপত্তা জোরদারকরণ প্রকল্প (২য় পর্যায়)’ বাস্তবায়িত হবে ২৬৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকায়, যা বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) পরিচালনা করবে। প্রকল্পটির মেয়াদকাল নভেম্বর ২০২৪ থেকে জুন ২০২৯ পর্যন্ত।
‘সিলেট বিভাগে ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবস্থাপনা ও ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি’ প্রকল্পটি ৪৯৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকায় বাস্তবায়ন করবে বিএডিসি। এর মেয়াদকাল জানুয়ারি ২০২৫ থেকে ডিসেম্বর ২০২৯ পর্যন্ত।
‘দেশের দক্ষিণাঞ্চলের আয়রন ব্রিজ পুনঃনির্মাণ/পুনর্বাসন (২য় সংশোধিত)’ প্রকল্পটির ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে ২ হাজার ৭৭৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা হয়েছে, যা বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। প্রকল্পটির মেয়াদকাল জুলাই ২০১৮ থেকে জুন ২০২৬ পর্যন্ত। আর `Construction of Bangladesh Buddhist Monastery Complex at Lumbini Conservation Area, Nepal’ প্রকল্পের ব্যয় হবে ৬৮.০৮ কোটি টাকা, যা বৌদ্ধধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পটির মেয়াদকাল জুলাই ২০২৪ থেকে জুন ২০২৭ পর্যন্ত।