টেলিগ্রামে শতাধিক পর্নোগ্রাফি চ্যানেল শনাক্ত
জুয়া ও পর্ণো বন্ধে প্লাটফর্মগুলোকে চিঠি দিচ্ছে বিটিআরসি
অনলাইন জুয়া, গ্যামব্লিং এবং পর্নোগ্রাফি বিষয়ে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম গুলোকে চিঠি দেওয়া শুরু করেছে বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। ৪ নভেম্বর, সোমবার, এ বিষয়ে বহুপক্ষীয় দ্বিতীয় পরামর্শক সভায় নেয়া সিদ্ধান্ত অনুসারে বৈঠক শেষে ই-মেইলে এই চিঠি দেয়া শুরু হয়েছে বলে জানাগেছে।
সূত্রমতে, বাংলাদেশে বার্তা আদান-প্রদানের মাধ্যম টেলিগ্রাম প্ল্যাটফর্মে সক্রিয় এমন ১০৮টি পর্নোগ্রাফি চ্যানেল শনাক্ত করেছে বিটিআরসি। এসব চ্যানেলে অনুমতি ছাড়া নগ্ন এবং অশ্লীল ও যৌন উদ্দীপক ছবি ও ভিডিও ছড়ানো হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট চ্যানেল ও ভিডিও দ্রুত বন্ধ বা অপসারণের অনুরোধ জানিয়ে টেলিগ্রাম কর্তৃপক্ষকে চিঠি পাঠিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
চিঠির মূলকথার একটি অংশের স্ক্রিনশট ৫ নভেম্বর নিজের সোশ্যাল হ্যান্ডেলে শেয়ার করেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারি ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। সেখানে চিঠিতে পাবলিক গ্যাম্বলিংক অ্যাক্ট ১৮৬৭; সংবিধানে ১৮ নম্বর আর্টিকেল ও সাইবার নিরাপত্তা অধ্যাদেশ ২০২৫ এর ২০ ধারায় অনলাইন এবং ডিজটাল গ্যাম্বলিং, বেটিং এবং পর্ণোগ্রাফির কন্টেন্ট নিষিদ্ধ হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কম্প্লায়ন্সে অনুযায়ী এগুলো বাংলাদেশ থেকে দ্রুততম সময়ে সরিয়ে ফেলতে প্লাটফর্ম পরিচালকদের অনুরোধ করা হয়েছে। এই পোস্টের ঘণ্টা তিনেক পর ওই চিঠির মূলভাব তুলে ধরে একটি ফটো পোস্ট করেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সচিব ভূইয়া।
এমন পরিস্থিতি সামাল দিতে বিটিআরসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. এমদাদ উল বারী (অব.) বলেছেন, জুয়া ও আর্থিক প্রতারণা সনাক্তে বিটিআরসি ও বাংলাদেশ বাংক যৌথভাবে সাবস্ক্রাইবার ডাটা ভেরিফিকেশন প্ল্যাটফর্ম (এসডিভিপি) সিস্টেম তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করতে যাচ্ছে।
সজীব ভূইয়ার অ্যাডমিন থেকে করা পোস্টে লেখা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (BTRC) জানিয়েছে যে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে অনলাইন জুয়া, ডিজিটাল বেটিং এবং পর্নোগ্রাফি সম্পর্কিত কনটেন্ট ও বিজ্ঞাপন ব্যাপকভাবে প্রচারিত হচ্ছে, যা দেশের আইন অনুযায়ী নিষিদ্ধ ও আইনগত ব্যবস্থার আওতায় পড়ে। এসব কনটেন্ট স্বেচ্ছাচারিতা, যুবসংস্কৃতির অবক্ষয়, মানসিক চাপ ও পারিবারিক সংঘাত বাড়ায় এবং কখনও কখনও গুরুতর মানসিক অস্থিরতা বা আশঙ্কাজনক ফল ঘটাতে পারে।’
‘BTRC প্ল্যাটফর্মগুলোকে অনুরোধ করেছে অবিলম্বে এসব অবৈধ কনটেন্ট শনাক্ত, সীমিত এবং বাংলাদেশ থেকে অপসারণ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হোক, যাতে আইনানুগতা বজায় থাকে এবং ব্যবহারকারীদের, বিশেষ করে কিশোর-কিশোরীদের, সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়।’
বিটিআরসি সূত্রে প্রকাশ, টেলিগ্রামকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, অনলাইন কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণ, ব্লক বা অপসারণের একমাত্র ক্ষমতা বিটিআরসির হাতে। বিটিআরসি একমাত্র এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষ, সংস্থাটি অনলাইন কনটেন্ট ব্লক, সীমিত বা অপসারণ করতে পারে এবং অধিকার, নিরাপত্তা ও জননিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে দায়িত্বশীল। ২০২৫ সালের সাইবার নিরাপত্তা অধ্যাদেশের ০৮ (১) ধারা অনুসারে এ ক্ষমতা প্রয়োগ করা হয়। এ ধরনের পর্নোগ্রাফি সামগ্রী সামাজিক আদর্শ ও নৈতিক মানকে মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন করে। এই চ্যানেলগুলো ২০১২ সালের পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন (পিসিএস) এর ৮(২), ৮(৩) ও ৮(৫) ধারা, এবং সাইবার নিরাপত্তা অধ্যাদেশের ২৫ ধারা লঙ্ঘন করেছে। তাই ১০৮টি লিংক ব্লক বা অপসারণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা যাচ্ছে।
এ বিষয়ে কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, অনলাইনে পর্নোগ্রাফি, জুয়া, প্রতারণা ও ঘৃণামূলক কনটেন্ট ছড়ানো রোধে বিটিআরসি নিয়মিত মনিটরিং চালাচ্ছে। অভিযোগ পেলেই সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইট, পেজ বা চ্যানেল শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এর আগে ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক ও এক্স (পূর্বতন টুইটার) কর্তৃপক্ষকেও অনুরূপ কনটেন্ট অপসারণে অনুরোধ জানিয়েছে বিটিআরসি।
পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২-এর ৮(২), ৮(৩) ও ৮(৫) ধারা অনুযায়ী, অশ্লীল ছবি বা ভিডিও প্রচার দণ্ডনীয় অপরাধ, পর্নোগ্রাফি প্রচার বা বিক্রয়ে শাস্তিমূলক অপরাধ এবং ইলেকট্রনিক মাধ্যমে প্রচার নিষিদ্ধ। এ ছাড়া, সাইবার নিরাপত্তা অধ্যাদেশ ২০২৫-এর ধারা ৮(১) অনুযায়ী, সামাজিক মূল্যবোধ বা নৈতিকতা বিনষ্টকারী কনটেন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা এবং অনলাইন কনটেন্ট ব্লক বা অপসারণের ক্ষমতা বিটিআরসির হাতে।
বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে অনলাইন জুয়া, ডিজিটাল বেটিং এবং পর্নোগ্রাফি সম্পর্কিত কনটেন্ট ও বিজ্ঞাপন ব্যাপকভাবে প্রচারিত হচ্ছে, যা দেশের আইন অনুযায়ী নিষিদ্ধ ও আইনগত ব্যবস্থার আওতায় পড়ে। এসব কনটেন্ট স্বেচ্ছাচারিতা, যুবসংস্কৃতির অবক্ষয়, মানসিক চাপ ও পারিবারিক সংঘাত বাড়ায় এবং কখনও কখনও গুরুতর মানসিক অস্থিরতা বা আশঙ্কাজনক ফল ঘটাতে পারে।
প্রসঙ্গত, টেলিগ্রামে পর্নোগ্রাফি সংক্রান্ত বিভিন্ন গ্রুপ, অ্যাডমিন ও অর্থ লেনদেনকারী প্রতারক চক্রকে শনাক্ত করে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নিতে গত ১৯ অক্টোবর নির্দেশ দেন ঢাকার একটি আদালত। এ কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশও দেওয়া হয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ‘টেলিগ্রামে হাজারো তরুণীর নগ্ন ভিডিও বিক্রি’ সংক্রান্ত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে এ আদেশ দেওয়া হয়।







