দেশের শতভাগ আইফোন অবৈধ # রাজস্ব বাড়বে হাজার কোটি টাকা
বিজয় দিবসে এনইআইআর এলেও স্থায়িত্বে 'ধূসর' হুমকি!
মোবাইল হান্ডসেট তৈরিতে বিগত আট বছরে দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকা বিনিময়োগ করেছে ১৭টি মোবাইল ফোন নির্মাতা কোম্পানি। লক্ষাধিক শ্রমজীবির এই কর্মসংস্থানে ধূসর হুমকী। সেই হুমকি মোকাবেলায বিজয় দিবসের দিনে চালু হতে যাচ্ছে জাতীয় ইক্যুইপমেন্ট রেজিস্ট্রার (এনইআইআর) চালু করছে বিটিআরসি।
এই উদ্যোগ ফের বাস্তবায়নে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে স্বাগত জানিয়ে আর যেন বন্ধ না হয়; তার আহ্বান জানিয়েছে মোবাইল ফোন নির্মাতা সংগঠন মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এমআইওবি)।
৫ নভেম্বরে, বুধবার রাজধানীর মাহখালীর রাওয়া ক্লাবের একটি রেস্টুরেন্টে সাংবাদিক সম্মেলনে এই শঙ্কা প্রকাশ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে এমআইওবি সভাপতি জাকারিয়া জাকারিয়া শাহিদ জানান, বাজারে থাকা মোবাইল ফোনের মধ্যে ৬০ শতাংশই অবৈধ। এতে সরকারের রজস্ব ক্ষতি
২০০০ কোটি টাকা। অথচ বাজারে ফোন তৈরি সরঞ্জামের দাম ৬০ শতাংশ বাড়লেও তা তারা বড়াননি দাবি করে তিনি অমদানী ও উৎপাদন পর্যায়ের কর ব্যবধান কমাতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
তিনি বলেন, সরকারের যুগান্তকারী এই উদ্যোগের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে একটি মহল বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। সাধারণ গ্রাহকদের মধ্যে এনইআইআর নিয়ে আতংক সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে। এটা করছে লাগেজ পার্টিরা। এদের মাধ্যমে দেশে চোরাই, নকল, কপি ও রিফার্বিশ হ্যান্ডসেটের ব্যবসা গড়ে উঠেছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এনইআইআর বাস্তবায়ন হলে মুঠোফোনের দাম এক টাকাও বাড়ানো হবে না। সরকারের রাজস্ব আয় হাজার কোটি টাকায় পৌঁছবে।
প্রবাসী বা বিদেশী নাগরিকরা যখন দেশে নামলে তার ব্যবহার করা হ্যান্ডসেট বন্ধ হয়ে যাবে NEIR কার্যক্রম চালু হলে, তখন কী হবে প্রশ্নের জাবাবে তিনি বলেন, তাকে ৩০ দিন সময় দেওয়া হবে। এর মধ্যে অনলাইনে সে নিবন্ধন করে নিতে হবে।
এমআইওবি সহ সভাপতি রেদওয়ানুল হক বলেন, একটি ব্র্যন্ড বাদে বৈশ্বিক সবগুলো ব্রান্ড দেশে মোবাইলফোন উৎপাদন করছে। দেশের ৯০ শতাংশ চাহিদা মেটাচ্ছে। শতভাগ সক্ষমতা মাত্র ৪০ শতাংশ ব্যবহার করা হচ্ছে। এখানে এমন উৎপাদকও রয়েছেন যারা নিজেরাই পিসিবিও বানান। নিজেরাই মাদারবোর্ড তৈরি করে বৈশ্বিক মানের হ্যান্ডসেট তৈরি করছেন ৯০ শতাংশ দেশীয় উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলো। মোবাইল ফোনের শতভাগ চাহিদা দেশের উৎপাদকরাই মেটাতে পারে। এতো দিনে আমরা আরো ভালো করতে পারতাম যদিনা এনইআইআর চালু থাকতো। দেরিতে হলেও চালু হওয়াটা সুখের বিষয়। প্রথমে সফটওয়্যারগত কিছু সমস্যা দেখা দিলেও তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। তাই যেকোনো পরিস্থিতিতেই যেন এনইআইআর আর কখনওই বন্ধ না হয়।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জাবাবে রেদওয়ান বলেন, এই মুহুর্তে মোবাইল ফোনের বাজার ২০ হাজার কোটি টাকা। এনইআইআর কার্যক্রম সফলভাবে চালু হলে এই বাজারো আরো ১৫ হাজার কোটি টাকা যুক্ত হবে।
স্মার্ট টেকনোলজিস লিমিটেডে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও অনার ব্রান্ডের বাংলাদেশি উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের প্রধান জহিরুল ইসলাম বলেন, আইন মেনে দেশে মোবাইফোন ব্যবসা খুবই সহজ। এই কাজে সহযোগিতা করতে অনেকেই রেডি আছেন। মোবাইল উৎপাদন খাতে নতুন সদস্য হিসেবে নিজের অভিজ্ঞতাও তুলে ধরেন বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির এই সভাপতি। গ্রে-েমার্কেট শুধু ব্যবসায়ী বা ক্রেতাই নয় দেশের জন্যও হুমকি উল্লেখ করে তিনি বলেন, মোবাইল এখন আমাদের ব্রেড অ্যন্ড বাটার। দেশেই এটি উৎপাদন শুরু হওয়ায় বহু কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। অথচ আমাদের বাজারের আইফোনের পুরোটাই আসে অবৈধ পথে। এখান থেকে সরকার কোনো রাজস্ব পায় না। এমন পরিস্থিতিতে এনই আই চালু করা একটা মহৎ উদ্যাগ। এটি সবার জন্যই কল্যাণকর। শুধুমাত্র যারা দেশ ও দশের ভালো চায় না তারাই এ উদ্যোগকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়।
স্যামসাং বাংলাদেশের অনুমোদিত পরিবেশক এক্সেল টেলিকমের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর সাইফুদ্দিন টিপু জানান, গ্রে মার্কেটের বেশির ভাগই রিফারবিশ ও চোরাই। সব মিলিয়ে বৈশ্বিক মানেই দেশে মোবাইল ফোন উৎপাদন হয়। দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিদেশেও রফতানি করার সুযোগ রয়েছে।
ভিভো বাংলাদেশের প্রতিনিধি ও এমআইওবি অর্থ সম্পাদক ইমাম উদ্দীন বলেন, রেডিও ডিভাইস হিসেবে মোবাইল আমদানিতে বিটিআরসির অনুমোদন নিতে হয়। সেখানে আবেদন করে য কেউ এই ব্যবসা করতে পারে। তাই এখানে মনপোলি হওয়ার সুযোগ নেই।
এমওআইবি প্রধান নির্বাহী মনিরুল ইসলামের সঞ্চালনায় বাংলাদেশ মোবাইলফোন ডিস্ট্রিবিউশন অ্যসোসিয়শনের সাংগঠনিক সম্পাদক দেব প্রসাদ কপুরিয়া রাহুল ও মহাসচিব আব্দুল্লাহ হারুন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বক্তব্যে রাহুল জানান, এনইআইআর চালু হলে তারাও উপকৃত হবেন।
ডিবিটেক/ আইএইচ/ওবি







