হোয়াটসঅ্যাপে নজরদারি বন্ধে ইসরায়েলি স্পাইওয়্যার কোম্পানিকে আদালতের নির্দেশ

১৯ অক্টোবর, ২০২৫ ১০:১৫  
হোয়াটসঅ্যাপে নজরদারি বন্ধে ইসরায়েলি স্পাইওয়্যার কোম্পানিকে আদালতের নির্দেশ

ইসরায়েলভিত্তিক স্পাইওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এনএসও গ্রুপকে (NSO Group) এনক্রিপ্টেড ম্যাসেজিং প্লাটফর্ম হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের ওপর গুপ্তচরবৃত্তি ও অননুমোদিত নজরদারি কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের এক ফেডারেল আদালত। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করে স্থানীয় সময় ১৮ অক্টোবর, শনিবার হোয়াটসঅ্যাপের দায়ের করা মামলায় ক্ষতিপূরণের পরিমাণ ১৬৭ মিলিয়ন ডলার থেকে কমিয়ে ৪ মিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করেন ক্যালিফোর্নিয়ার ফেডারেল বিচারক ফিলিস হ্যামিলটন।

বিচারকের ভাষায়, এনএসও গ্রুপ-এর কর্মকাণ্ড হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের জন্য “অনির্বচনীয় ক্ষতি” সৃষ্টি করেছে এবং তাদের ডিজিটাল গোপনীয়তা ও সাইবার নিরাপত্তা হুমকির মুখে ফেলেছে।

এনএসও গ্রুপ দাবি করে আসছে, তাদের তৈরি পেগাসাস স্পাইওয়্যার শুধুমাত্র সরকার ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কাছে বিক্রি করা হয় অপরাধ ও সন্ত্রাসবাদ দমনের জন্য।কিন্তু হোয়াটসঅ্যাপের অভিযোগ অনুযায়ী, এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও সাধারণ নাগরিকদের মোবাইল ফোনে অনুপ্রবেশের জন্য।

এই রায়কে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা ডেটা সুরক্ষা ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে যেখানে অনলাইন যোগাযোগ ও মোবাইল অ্যাপ ব্যবহারের হার দ্রুত বাড়ছে, সেখানে এই রায়টি ডিজিটাল নিরাপত্তা সচেতনতা বাড়ানোর এক বড় বার্তা হিসেবে দেখছেন প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা। 

রায়ের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারের উত্তরসূরি এক্স-এ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ প্রধান উইল ক্যাথকার্ট বলেছেন, “আজকের রায়ে স্পাইওয়্যার নির্মাতা NSO Group-কে চিরতরে নিষিদ্ধ করা হলো— তারা আর কখনও হোয়াটসঅ্যাপ বা আমাদের বৈশ্বিক ব্যবহারকারীদের লক্ষ্যবস্তু করতে পারবে না। আমরা এই রায়কে স্বাগত জানাই, যা ছয় বছরের দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর ন্যায়বিচারের পথ খুলে দিয়েছে এবং সুশীল সমাজের সদস্যদের ওপর নজরদারির দায়ে NSO-কে জবাবদিহির আওতায় এনেছে।”

রায়ের পর মেটা নির্বাহীরাও এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে একে “ডিজিটাল নিরাপত্তা ও ব্যবহারকারীর গোপনীয়তা রক্ষার বড় জয়” হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। 

রায়ের পর প্রতিক্রিয়ায় এনএসও গ্রুপ জানায়, তারা আদালতের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায়— বিশেষত ক্ষতিপূরণের পরিমাণে ৯৭ শতাংশ হ্রাস করাকে “ন্যায্য ও ইতিবাচক অগ্রগতি” হিসেবে দেখছে। প্রতিষ্ঠানটি এক বিবৃতিতে বলেছে, “আমাদের প্রযুক্তি সবসময় গুরুতর অপরাধ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্যই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আদালতের নিষেধাজ্ঞা আমাদের গ্রাহকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। তারা জননিরাপত্তা রক্ষায় আমাদের প্রযুক্তি ব্যবহার অব্যাহত রাখবেন।”

প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, তারা রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি পর্যালোচনা করে “পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবে।”

বিশ্লেষকদের মতে, যদিও কোম্পানিটি প্রকাশ্যে জননিরাপত্তা ও আইন প্রয়োগের স্বার্থে প্রযুক্তি ব্যবহারের কথা বলছে, বাস্তবে এই ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার নিয়ে বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল গোপনীয়তা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের উদ্বেগ ক্রমেই বাড়ছে।

এই মামলাটি শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালে, যখন মেটার মালিকানাধীন হোয়াটসঅ্যাপ অভিযোগ করে যে NSO Group-এর ‘Pegasus’ স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে সাইবার আক্রমণের মাধ্যমে সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও সরকারি কর্মকর্তাদের ফোনে প্রবেশ করা হয়েছিল।