ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে সেন্টার অব রিসার্চ এক্সেলেন্স ইন সেমিকন্ডাক্টর টেকনোলজি উদ্বোধন
উদ্ভাবনী জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশের প্রত্যয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করলো সেন্টার অব রিসার্চ এক্সেলেন্স ইন সেমিকন্ডাক্টর টেকনোলজি (CREST)। বৈশ্বিক সেমিকন্ডাক্টর ইকোসিস্টেমে বাংলাদেশের বিশ্বাসযোগ্য অংশগ্রহণের ভিত্তি স্থাপন করে ১৫ ট্রিলিয়ন ডলারের ডিপ টেক প্রযুক্তি বাজারের ১ শতাংশ নিজেদের ঘরে তুলতে দেশেই একটি মেডইন বাংলাদেশ সেমিকন্ডাক্টর শিল্প প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যে গড়ে তোলা হলো এই গবেষণা ও উন্নয়ন সেন্টারটি। বাংলাদেশের বায়োটেক, ইলেকট্রনিক্স, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ও রোবোটিক্স (BEAR)–কে একীভূত করার জাতীয় কাঠামো হিসেবেই এই উদ্যোগ বলে জানানো হয় উদ্বোধনীতে।
সিলিকন রিভার ইকোসিস্টেম–এর আওতায় ২৯ ডিসেম্বর, সোমবারর রাজধানীর বাড্ডায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে সেন্টারটির লোগো উন্মোচন করা হয়। একইসঙ্গে ৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিকন্ডাক্টর নিয়ে গবেষণারত ৯ জনকে ফেলোশিপ এবং ১৫ টি বিয়ার সামিট বিজয়ীদের হাতে চেক তুলে দেয়া হয়। প্রথম ব্যাচের CREST ফেলোরা হলেন, মো. শাজোল আল মামুন (বুয়েট), আকিফ হামিদ (ইউআইইউ ), কে. এম. মেহেদী হাসান (ইডব্লিউইউ), মো. শরীফ উদ্দিন (ইউএপি), ইশমাম হোসেন (এনএসইউ), প্রিয়াঙ্কা দাস (ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়), জুনায়েদ জলিল (বুয়েট), মো. খালিদ হোসেন (বুয়েট), আফসানা আনজুম আখি (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) এবং শেখ তারিফুল ইসলাম (বুয়েট)। এদের হাতেই অনুষ্ঠানে সব মিলিয় মোট ১১ লক্ষ ৮৭ হাজার টাকার চেক তুলে দেয়া হয়। একইসঙ্গে এই সেন্টারের মাধ্যমে উন্নত সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তি তথা AI-কেন্দ্রিক চিপ ডিজাইন, VLSI সিস্টেম, রোবোটিক্স, উপকরণ বিজ্ঞান, প্যাকেজিং ও টেস্টিং এবং ভবিষ্যৎ হার্ডওয়্যার প্ল্যাটফর্মে টেকসই গবেষণা উৎকর্ষ অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে প্রযুক্তি ভোক্তা থেকে প্রযুক্তি উদ্ভাবকে রূপান্তরিত করার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়।
এর আগে সিলিকন রিভার ভিশন এবং CREST উদ্যোগের বিস্তারিত তুলে ধলেন এর রূপকার যুক্তরাষ্ট্রের পার্ডু বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল ও কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর মুহাম্মদ মুস্তাফা হুসেইন। তিনি জানান, ইউএপি’র সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনের পর শিগগরিই আরও ১ লাখ ২৮ হাজার টাকার গবেষণা অনুদান দেয়া হবে। সরকারের নীতি সহায়তা পেলেই অনাবাসী বাংলাদেশী, বিশ্বজুড়ে এই খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৮ হাজার বাংলাদেশী এই খাতকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। এজন্য প্রদত্ত ফেলোশিপের আওতায় ৮ জন স্নাতকোত্তর ও ২ জন স্নাতক শিক্ষার্থী সারা বছরব্যাপী ৯টি উন্নত সেমিকন্ডাক্টর গবেষণা বিষয়ে নিজ নিজ শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে কাজ করার সুযোগ পাবেন।
অনুষ্ঠানে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. সৈয়দ ফেরহাত আনোয়ার, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আনোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ সেমিকন্ডাক্টর ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (BSIA)–এর সভাপতি এবং নিউরাল সেমিকন্ডাক্টর লিমিটেড–এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম. এ. জব্বার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অনুষদের ডিন প্রফেসর উপমা কবির বক্তব্য রাখেন।
সরকার, বিশ্ববিদ্যালয়, শিল্পখাত, সশস্ত্র বাহিনী এবং বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশি প্রবাসী বিশেষজ্ঞদের প্রতিনিধিত্বকারী বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ ভিডিও বার্তায় সমন্বিত জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গি, শক্তিশালী বিশ্ববিদ্যালয়–শিল্প সংযোগ এবং গবেষণা মানবসম্পদে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের গুরুত্ব তুলে ধরেন গ্লোবালফাউন্ড্রিজ-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. মাহবুব রাশেদ । একইভাবে ভিডিও বার্তা দিয়েছেন সিনপসিস-এর পরিচালক জনাব হারিশ বালান ও মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’র (এমআইএসটি) কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল নাসিম পারভেজ।
স্বাগত বক্তব্যে ড. সৈয়দ ফেরহাত আনোয়ার আধুনিক গবেষণার বিকাশ, উদ্ভাবন-ভিত্তিক মানবসম্পদ গঠন এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে জাতীয় অগ্রাধিকার বাস্তবায়নে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
গবেষণা-নির্ভর প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং উদ্ভাবনভিত্তিক অর্থনৈতিক রূপান্তরের মাধ্যমে বাংলাদশেকে জ্ঞানভিক্তিক শিল্পে রূপান্তরে সকলকে যুগপৎ এগিয়ে চলার আহ্বান জানান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব মো. আনোয়ার হোসেন।
বাংলাদেশ সেমিকন্ডাক্টর ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিএসআইএ) সভাপতি এবং নিউরাল সেমিকন্ডাক্টর লিমিটেড–এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম. এ. জব্বার দেশীয় সক্ষমতা উন্নয়ন, শিল্প–একাডেমিয়া সহযোগিতা এবং রপ্তানিমুখী সেমিকন্ডাক্টর শিল্প গঠনের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
সমাপনী বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অনুষদের ডিন প্রফেসর উপমা কবির পরবর্তী প্রজন্মের গবেষক ও উদ্ভাবক গড়ে তুলতে ধারাবাহিক সহযোগিতা, মেন্টরশিপ এবং প্রাতিষ্ঠানিক অঙ্গীকারের গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং ফেলোশিপ অংশীদার ও ন্যাশনওয়াইড ট্রেনিং সেন্টার হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্রিয় ভূমিকা পুনর্ব্যক্ত করেন।
ডিবিটেক/সিএমও/ইক







