প্রশাসক নয়; নগদ চালাবে মূল মালিকপক্ষ

ফের তার মূল মালিকপক্ষের নিয়ন্ত্রণে চলে গেল মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’। হাইকোর্টের পর সুপ্রিম কোর্টও রায় দিয়েছে, প্রশাসক নিয়োগ ও নতুন বোর্ড বসিয়ে নগদের ওপর সাময়িক নিয়ন্ত্রণ আরোপের চেষ্টা আইনসঙ্গত নয়। ‘নগদ’ পরিচালনায় প্রশাসক নিয়োগ নিয়ে করা রিটের বিপরীতে আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতের এই রায়ের ফলে এখন থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রণীত নীতিমালা অনুযায়ী নগদ পরিচালিত হবে।
রায়ের প্রসঙ্গ টেনে এমনটাই জানিয়েছেন নগদ মালিকপক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার মুহাম্মদ জমির উদ্দিন সরকার।
এর আগে ‘নগদ’ পরিচালনায় প্রশাসক নিয়োগ নিয়ে করা রিটটি গ্রহণযোগ্য নয় বলে হাইকোর্টের রায় আট সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত গত ৭ মে এ আদেশ দেন। এসময়ের মধ্যে আবেদনকারীকে নিয়মিত লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) দায়ের করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
এর আগে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টও এ বিষয়ে করা একটি রিট আবেদন খারিজ করে দেন এবং স্পষ্ট করে দেন যে, প্রশাসক নিয়োগের উদ্যোগ গ্রহণযোগ্য নয়। গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি করেন নগদের স্বতন্ত্র পরিচালক মো. শাফায়েত আলম। এরপর ১৭ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট ‘নগদে’ প্রশাসক নিয়োগ প্রশ্নে রুল দেন। ওই রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে নগদ বাংলাদেশ ডাক বিভাগের এজেন্ট উল্লেখ করে ঘোষিত রায়ে আদালত বলেন, আইন বাস্তবায়ন করেই বাংলাদেশ ব্যাংক প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে। এরপর ২০০৪ সালের পরিশোধ ও নিষ্পত্তাব্যবস্থা আইনের ৩১(১) ও (২) ধারা প্রতিপালন না করে ‘নগদে’ প্রশাসক নিয়োগের গত ২১ আগস্টের মেমো (আদেশ) কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়। রুল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় প্রশাসকের নীতিগত কার্যক্রম পরিচালনা নিয়ে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে রিট আবেদনকারী সম্পূরক আবেদন করেন। এর শুনানি নিয়ে গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর হাইকোর্ট প্রশাসকের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কার্যক্রম পরিচালনায় পক্ষগুলোকে অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে নির্দেশ দেন। পরে মেয়াদ বাড়ানো হয়। চূড়ান্ত শুনানি শেষে রিটটি গ্রহণযোগ্য নয় বলে রুল ডিসচার্জ (খারিজ) করে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রায় দেন।
হাইকোর্টের ওই রায় স্থগিত চেয়ে শাফায়েত আলম আপিল বিভাগে আবেদন করেন, যা আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতে গত ৭ মে শুনানির জন্য ওঠে। সেদিন শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. রেজাউল হকের চেম্বার জজ আদালত তা স্থগিত করে ওই আদেশ দেন। এ আদেশের অনুলিপি সোমবার হাতে পাওয়ার কথা জানান রিট আবেদনকারীপক্ষের অন্যতম আইনজীবী জামিলুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘এই রায় দেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি প্রমাণ করেছে যে, জোর করে প্রশাসক বসিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠানের মালিকানা দখল করা যায় না। সুপ্রিমকোর্ট একটি সাহসী ও ন্যায়সংগত সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, যা সুশাসনের প্রতিফলন।’
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এই রায় শুধুমাত্র নগদের জন্য নয় বাংলাদেশের ফিনটেক খাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে এবং বেসরকারি খাতের স্বাধীনতা ও বিনিয়োগ নিরাপত্তা আরও সুদৃঢ় করবে।
এ বিষয়ে নগদের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক গণমাধ্যমকর্মীদের বলেছেন, ‘গত আট মাস আমি জার্মানিতে একটি রেগটেক প্রজেক্ট নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম, যেটি খুব শিগগির আরেকটি ইউনিকর্ন হতে চলেছে। তাই আমি নগদে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে ফিরছি না, এটি আমি বোর্ডকেও জানিয়ে দিয়েছি। তবে নগদ আমার সন্তানের মতো, তাই নতুন বোর্ড বা সিইও যদি কখনো আমার পরামর্শ চান, আমি সবসময় প্রস্তুত থাকব।’