মেটার অফিস নেই তাই বন্ধ করা কঠিন
নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন জারির পর অনলাইনে প্রবল হচ্ছে আওয়ামী লীগ

জুলাই অভ্যুত্থানে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ সংগঠন বাংলাদেশ আওমী লীগসহ এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সদস্যদের অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে কোনো ধরনের প্রচারণা, সমাবেশ বা সম্মেলনও নিষিদ্ধ হলো। তবে এর বাস্তবায়ন বাংলাদেশের পক্ষে কঠিন ও দূরুহ বলেই মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, মিথ্যা বা প্রোপাগাণ্ডার বিরুদ্ধে সত্য ও ফ্যাক্ট তুলে ধরলেই ক্ষতি কমানো সম্ভব হবে। কেননা, এই পরিস্থিতিতে এআই ব্যবহার করে অপতথ্যের বিস্তারের শঙ্কা প্রবল হয়েছে।
সোমবার বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে এ বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে এটি অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে। আদেশটি বাস্তবায়নের বিষয়ে আগেই ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের উপদেষ্টা প্রধান উপদেষ্টা ফয়েজ আহমেদ জানিয়েছেন, “পরিপত্র জারির পরই অনলাইনে থাকা এসব পেজ নিষিদ্ধ করতে বিটিআরসি’র মাধ্যমে মেটাসহ অন্যান্য প্লাটফর্মকে চিঠি পাঠানো হবে। উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া জানিয়েছেন, দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করলে রেহাই নেই! গোপন বৈঠক, উস্কানিমূলক মিছিল বা পোস্ট করলেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।
তবে বিকেলে প্রজ্ঞাপন জারি করায় এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বিশেষ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বলে জানাগেছে। সূত্রমতে, বুধবার এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে জাতীয় সুরক্ষা এজেন্সি (এনসিএ) থেকে বিটিআরসি-কে চিঠি দেয়া হবে। এরইমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়া জায়ান্ট ফেসবুকের সঙ্গে মন্ত্রণালয় থেকে যোগাযোগও করা হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে রাষ্ট্রবিরোধী কিছু কন্টেন্ট নিয়ে তাদের ‘কমপ্লায়েন্স’ বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে। বুধবার অন্তর্বর্তী সরকারের এ প্রজ্ঞাপন অনুসরণ করে আওয়ামী লীগ ও এর সব অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটকসহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে থাকা পেজ বন্ধ করতে মেইল করবে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।
অবশ্য বাংলাদেশে ফেসবুক, ইউটিউব ও টুইটারের মতো সোশ্যাল মিডিয়া জায়ান্টদের অফিস না থাকায় সহসাই অনলাইনে নিষিদ্ধ দলটির কার্যক্রম থামানো দূরহ বলেই মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে তথ্যপ্রযুক্তিবিদ ফাহিম মাশরুর বলেছেন, ফেসবুক-ইউটিউবের মতো বিদেশী প্লাটফর্মগুলোর বাংলাদেশে কোনো অফিসা না থাকায় তারা আমাদের আইন বাধ্য নয়। তাছাড়া চিহ্নিত কিছু বন্ধ করা গেলেও প্রযুক্তিগত দিকদিয়ে এটা প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। এটা ফিজিবাল না। কেননা ফেসবুক-ইউটিউবের লোকাল ক্যাশ সার্ভার বাংলাদেশ থাকলেও মূল সার্ভার কলকাতায়। সঙ্গত কারণেই অনলাইনে পর্ণোগ্রাফি, জুয়া বন্ধ করা যায়নি। তাছাড়া রাজনৈতিক প্রচারণা আর ব্যক্তিগত মত এ দুটোকে আলাদা করাটাও এখন জরুরী। বিষয়গুলো ব্যবহারকারীদেরকেই বুঝে নিতে হবে।
সঙ্গতকারণেই নিষেদ্ধের পরিপত্র জারি হওয়ার পরপরই আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজে তাদের দলীয় সভানেত্রীর বিশেষ বক্তব্য প্রকাশ করা হয়। ঘন্টা চারেকের মধ্যে দায়মুক্তি বিশেষ পর্বে লাইভেও সংযুক্ত হন তিনি।
ফেসবুকে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ নামে দলটির একটি ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ রয়েছে। পেজটিতে বর্তমানে ফলোয়ার প্রায় চার মিলিয়ন (৪০ লাখ)। আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও আওয়ামী যুবলীগের আরো দুইটি ভেরিফায়েড পেজ রয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক ও যুবলীগের ওয়েবপেজ বন্ধ থাকলেও আওয়ামী লীগের সাংগঠিনক ওয়েবসাইট এখন নিউজ পোর্টালে রূপ দেয়া হয়েছে। বেশ সক্রিয় রয়েছে আওয়ামী লীগের এক্সহ্যান্ডেলম, টিকটক এবং ইনস্টাগ্রাম। সন্ধ্যার পরই প্রবল হয়ে উঠছে এই প্লাটফর্মগুলো।
এছাড়া ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নামে অনেকগুলো আন-অফিসিয়াল পেজ ও গ্রুপ রয়েছে। গ্রুপের পাশাপাশি ম্যাসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। একইসঙ্গে টেলিগ্রাম, টিকটক ও ইউটিউবে বেশ সক্রিয় রয়েছে সদ্য নিষিদ্ধ দলটি। অনলাইনেই এখন আরো বেশি সক্রিয়ে হয়ে উঠছেন দলের বিভিন্ন পদধারী নেতা-কর্মীরা।
প্রসঙ্গত, জারিকৃত প্রজ্ঞাপনের শেষাংশে বলা হয়েছে, যেহেতু সরকারের নিকট যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ রয়েছে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গ সংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল ও অকার্যকর করার লক্ষ্যে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকাসহ জনমনে ভীতি সঞ্চারের উদ্দেশে সন্ত্রাসী সংগঠনের মতো বিভিন্ন বেআইনি কার্যকলাপ ও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। যেহেতু সরকার যুক্তিসংগতভাবে মনে করে সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ এবং সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯-এর ধারা-১৮(১) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গ সংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দলটি এবং এর সব অঙ্গ সংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা সমীচীন।তাই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গ সংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গ সংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন কর্তৃক যে কোনো ধরনের প্রকাশনা, গণমাধ্যম, অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে কোনো ধরনের প্রচারণা, মিছিল, সভা-সমাবেশ, সম্মেলন আয়োজনসহ যাবতীয় কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো।