লাইভ ট্র্যাকারে গাজা অভিমুখী আরও ১১ জাহাজ

৩ অক্টোবর, ২০২৫ ১৬:৫১  
৩ অক্টোবর, ২০২৫ ২০:১৯  
লাইভ ট্র্যাকারে গাজা অভিমুখী আরও ১১ জাহাজ

ইসরায়েলের অবরোধ ভাঙতে গাজা অভিমুখে নতুন করে আরও ১১টি জাহাজ যাত্রা করেছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি) জানিয়েছে, এসব নৌকায় প্রায় ১০০ জন অধিকারকর্মী আছেন। এর বহরে থাকা ‘কনসায়েন্স’ নামের একটি জাহাজে বাংলাদেশ থেকে অংশ নেওয়া দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও আলোকচিত্রী শহিদুল আলম এই  আছেন। তিনি কিছুক্ষণ পরপরই নিজের ফেসবুক পেজে ভিডিও ও তথ্য আপডেট দিচ্ছেন। 

এদিকে নতুন করে যাত্রা শুরু করা নৌযানের লাইভ ট্র্যাকিং শুরু করেছে ফ্রান্সের ফ্লোটিলার লাইভ ট্র্যাকার। এখান থেকেই দেখতে পারেন এই জাহাজগুলোর আপডেট। এই অবরোধ ভাঙার অভিযান ‘সুমুদ ফ্লোটিলা’য় অংশগ্রহণকারী আটক ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ, বার্সেলোনার সাবেক মেয়র আদা কোলাউ এবং ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্য রিমা হাসানও। 

১৫ বছরের সমুদ্র অভিযানের অভিজ্ঞতা আছে এফএফসির। এর আগে এফএফসি মাদলিন ও হান্দালা ফ্লোটিলায় অংশ নিয়েছিল। এবার অবরোধ ভাঙতে এফএফসি ব্যবহারিক পরামর্শ, দিকনির্দেশনা ও প্রক্রিয়াগত সহায়তা দিচ্ছে।

এক বিবৃতিতে এফএফসি জানিয়েছে, ৩০ সেপ্টেম্বর ‘কনসায়েন্স’ নামের জাহাজ আরও ৮টি নৌকা নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে। তাদের সঙ্গে ইতালি ও ফ্রান্সের পতাকাবাহী নৌবহর ‘থাউজেন্ড ম্যাডলিনস টু গাজা’ যোগ দিয়েছ। এই বহরে রয়েছে দুটি নৌকা। একসঙ্গে এ দুটি দল ১১টি জাহাজের বহর নিয়ে গাজা অভিমুখে ছুটে চলছে।

বার্তা সংস্থা আনাদোলু জানিয়েছে, দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আটক ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’র মানবাধিকার কর্মীরা অনির্দিষ্টকালের অনশন শুরু করেছেন। এক বিবৃতিতে ‘গাজার অবরোধ ভাঙা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক কমিটি’ জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক জলসীমায় হামলার শিকার ফ্লোটিলার জাহাজগুলোতে আটক কয়েকজন কর্মী জানিয়েছেন, আটক হওয়ার মুহূর্ত থেকেই তারা অনির্দিষ্টকালের অনশন শুরু করেছেন।

এই কর্মীদের আটক করে বন্দি করে নিয়ে যাওয়ার সময় ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির তাদের ‘সন্ত্রাসী’ বলে অভিহিত করেন।

কোয়ালিশনের তথ্য অনুযায়ী, নৌযানগুলো বর্তমানে ক্রিট দ্বীপের (পূর্ব ভূমধ্যসাগর) উপকূলে অবস্থান করছে এবং এতে প্রায় ১০০ যাত্রী আছেন।

২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানো ও সেখানে চলমান অবরোধের বিষয়ে আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণের লক্ষ্যে বেশ কয়েকবার মিশন চালিয়েছে।

ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ‘কনসায়েন্স’ নামের জাহাজটিতে ২৫টি দেশের সাংবাদিক ও স্বাস্থ্যকর্মী আছেন। এফএফসির সর্বশেষ এই মিশন গত বুধবার যাত্রা শুরু করে। ইসরায়েলের অবৈধ অবরোধ ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গাজা অভিমুখে রওনা হয়েছে আন্তর্জাতিক সাংবাদিক ও চিকিৎসকবাহী এই জাহাজ।

প্রায় দুই বছর ধরে ইসরায়েল বিদেশি সাংবাদিকদের গাজায় প্রবেশে বাধা দিয়ে আসছে। এ সময়ে ইসরায়েলি বাহিনী ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করে আসছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ২৭০ জনের বেশি সাংবাদিক নিহত হয়েছেন, অনেকে আটক ও কারাগারে বন্দী আছেন।

একই সঙ্গে ধারাবাহিক অবরোধ ও বোমাবর্ষণে গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থা কার্যত ধ্বংস হয়ে পড়েছে। হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। ফিলিস্তিনি চিকিৎসকদের অপহরণ, নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগ উঠেছে। আন্তর্জাতিক চিকিৎসক দলগুলোকেও গাজায় প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়। যাঁরা অনুমতি পান, তাঁদেরও জীবনরক্ষাকারী ওষুধ বা সরঞ্জাম আনার অনুমতি দেওয়া হয় না।

জাহাজে থাকা এফএফসির স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য হুয়াইদা আরাফ বলেন, ‘কনসায়েন্স’ শুধু ইসরায়েলের অবৈধ অবরোধের বিরুদ্ধে দৃঢ় প্রতিরোধের প্রতীক নয়, বরং বিশ্ব বিবেককে জাগ্রত করার ডাক।’

ইতালির চিকিৎসক রিকার্ডো কোররাদিনি বলেন, ‘সাংবাদিক ও চিকিৎসক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব সত্য বলা ও জীবন রক্ষা করা। এই মিশন আমাদের সহকর্মীদের প্রতি এক আহ্বান—আর সেই সঙ্গে বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিও, যাতে তারা নীরবতা ভাঙে, নীতিনৈতিকতা বজায় রাখে এবং ইতিহাসের পাশে দাঁড়ায়।’

এদিকে ত্রাণ নিয়ে গাজা অভিমুখী গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা নৌবহরের সবশেষ জাহাজটিও আজ শুক্রবার আটক করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজা উপকূলে আসলে ম্যারিনেট নামের জাহাজটির দখল নেন ইসরায়েলি সৈন্যরা। এর আগে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা নৌবহরের অন্য সব জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নেয় ইসরায়েলি বাহিনী। এসব নৌযানে থাকা অধিকারকর্মীদের আটক করা হয়।

এর আগেও ইসরায়েল গাজাগামী নৌযানে হামলা চালিয়েছে, জাহাজের মালামাল বাজেয়াপ্ত করেছে এবং অধিকারকর্মীদের বহিষ্কার করেছে।