ইটিএসএএফ সংরক্ষণের পরও কাগজের ঘানি টানতে চায় না দুই অপারেটর
স্বীকৃত রিসাকেলিং পদ্ধতিতে ইতিবাচক বিটিআরসি, অনুমতির আগে পুনঃনিরীক্ষা

সাড়ে সাত বছরেরও বেশি সময় ধরে গ্রাহকদের সকল তথ্য ডিজিটালি সংরক্ষণ করছে দেশের মোবাইল অপারেটরগুলো। কিন্তু তারপরও প্রায় আড়াই দশক আগের নিয়মেই ফিজিক্যাল সাবসক্রাইবার অ্যাকুইজেশন ফরমও (এসআইএফ) সংরক্ষণ করতে হচ্ছে তাদের। ডিজিটালি গ্রাহকের সব তথ্য (ইটিএসএএফ) সংরক্ষণ করার পরও কাগজের ফরম সংরক্ষণে প্রতি বছরই বাড়ছে গুদামজাতকরণ ও সংরক্ষণ ব্যয় এবং নিরাপত্তা ঝুঁকি। এমন পরিস্থিতিতে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় ও ঝামেলা কমাতে পেপারলেস অফিস প্রতিষ্ঠায় গুদামে সংরক্ষিত গ্রাহকদের এসআইএফ এর বোঝা আর টানতে পারছে না দুই মোবাইল অপারেটর। এ
জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি চেয়ারম্যানের অনুমতি চেয়ে কমিশনের সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিস বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে বাংলালিংক ও গ্রামীণফোন। উভয় অপারেটরই নিজেদের গুদামে থাকা কাগজের এসআইএফ ফরম ধ্বংস করতে কমিশনে লিখিত আবেদন করেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলালিংকের চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান বলেছেন, আমাদের এখন এসআইএফ সংরক্ষণের জন্য লক্ষাধিক বাক্সসহ পুরো একটি ওয়্যারহাউজ মেইন্টেইন করতে হচ্ছে। অথচ এই কাগজের আর কোনো প্রয়োজন নেই। কেননা ইতিমধ্যেই এগুলোর আমরা সফট কপি প্রস্তুত করেছি। তাই এগুলো যেন আর বহন করতে না হয়, সেজন্য বিটিআরসি’র কাছে অনুমতি প্রার্থনা করেছি। সেখান থেকে সবুজ সঙ্কেত পেলে নিয়ম মেনেই আমরা সংরক্ষিত কাগজগুলো স্ক্র্যাপ করতে চাই।
একই রকমের আক্ষেপ শোনা গেলো গ্রামীণফোনের হেড অব রেগুলেটরি ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড কমার্শিয়াল অ্যাফেয়ার্স ইমতিয়াজ শফিকের কণ্ঠে। তিনি বললেন, গ্রাহকের এসআইফ এর হার্ডকপি সংরক্ষণের জন্য আমাদের একটা ফুটবলের মাঠের মতো জায়গা দখল করে রাখতে হয়েছে। যদিও এসব ডক্যুমেন্টের স্ক্যান কপি আমরা করেছি। এখন যদি বিটিআরসি রাজি হয় তবে আমরা যথাযথ রিসাইকেলিং পদ্ধতি মেনে বিনষ্ট করতে পারবো।
তাদের এই আবেদনকে ইতিমধ্যেই আমলে নিয়ে গত ২৫ আগস্ট কমিশন বৈঠকের ২৯৮তম সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনাও হয়েছে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এজন্য আরো কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে তাদের। কেননা, আদেন দুটি পুণঃ নিরীক্ষণ করে পরবর্তী সভায় আলাপের সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে। একই সঙ্গে বৈঠকের সিদ্ধান্ত বিষয় ২৭ আগস্টের কার্যবিবরণী বলছে, কাগজের ফরমগুলো ধ্বংস করতে হলে অনুমোদিত ও স্বীকৃত রিসাইক্লিং প্রতিষ্ঠানে সেগুলো হস্তান্তর করতে হবে। ধ্বংসকৃত সকল এসএএফ এর তালিকা সংরক্ষণ ও বিটিআরসিকে দিতে হবে। এছাড়াও কমিশন প্রয়োজনে অনাপত্তিপত্র বাতিল বা যে কোনো শর্ত বাতিল বা পরিবর্তন/পরিবর্ধন করতে পারবে।
বিটিআরসি থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বাংলালিংকের গুদামে ২ কোটি ৯৩ লাখ ৬৯ হাজার ৬৬২টি এবং গ্রামীণফোন ৮ কোটি ১০ লাখ ৯০ হাজার এসআইএফ ফরম সংরক্ষিত রয়েছে। অর্থাৎ এই দুই অপারেটর তাদের কাছে থাকা সাড়ে ১১ কোটির মতো কাগজের ফরম ধ্বংস করতে চায়।
দেশের ১৮ কোটি ৮৮ লাখ গ্রাহককে সেল্যুলার (সিম ভিত্তিক) ভয়েস ও ইন্টারনেট সেবা দেয় ৪ অপারেটর। এদের মধ্যে গ্রামীণফোনের রয়েছে ৮ কোটি ৫৫ লাখ, বাংলালিংকের ৫ কোটি ৭৫ লাখ, রবি’র ৩ কোটি ৮০ লাখ এবং রাষ্ট্রায়ত্ব টেলিটক এর ৬৬ লাখ গ্রাহক রয়েছে। এসব গ্রাহকের তথ্য সংরক্ষণে ২০১০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি’র নিয়ম অনুযায়ী, একটি কাগজের ফরমে (সাবসক্রাইবার অ্যাকুইজেশন ফরম বা এসআইএফ) গ্রাহকের পুরো নাম, জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর, জন্ম তারিখ, বর্তমান ঠিকানা ও আঙুলের ছাপসহ একটি সেবা চুক্তি করে থাকে অপারেটরগুলো। প্রযুক্তির উন্নয়নে পেপারলেস অফিসের ধারণা থেকে কমিশনের নির্দেশনাতেই ২০১৮ সালের ২৮ আগস্ট থেকে এসআইএফএর এসব তথ্য ফিজ্যিকালের পাশাপাশি ইলেকট্রনিক ফরম্যাটে ইলেকট্রনিক টেলিকমিউনিকেশন সাবসক্রাইবার অ্যাকুইজেশন ফরমে (ইটিএসএএফ) ভার্চুয়ালিও সংরক্ষণ শুরু করে অপারেটররা।
কিন্তু সময়ের সঙ্গে কাগজের স্তুপ বাড়তে থাকায় তা সরংক্ষণে জায়গা ও ব্যয় নিয়ে বেসামাল অবস্থায় পড়েছে বাংলালিংক এবং গ্রামীণফোন। ফলে কাগজের কপির চেয়ে ডিজিটালি সব তথ্য সংরক্ষণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে চায় তারা। তাই পুরোনো কাগজগুলো ধ্বংস করে ফেলতে গত বছরের ১৪ নভেম্বর ফিজিক্যাল সাবসক্রাইবার অ্যাকুইজেশন ফরমগুলো ধ্বংস করতে বিটিআরসি’র কাছে আবেদন করে বাংলালিংক। পরে একই আবেদন করে শীর্ষ মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোনও।
প্রাপ্ত তথ্য বলছে, বাংলালিংকের কাছে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৭ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ১৬৪ জন গ্রাহকের তথ্য ফরম রয়েছে। এর মধ্যে স্ক্যান কপি রয়েছে ৬ কোটি ৯৪ লাখ ৬১ হাজার ৫৬৯টি। আর এনবিআর কর্তৃক চিহ্নিত এসএএফ ৯৫ লাখ ৭২ হাজার ৪৩৮টি। আইনি বিরোধ রয়েছে ২১২টি ফরমের। এছাড়াও অন্যান্য পর্যালোচনার জন্য ৫ লাখ ১৯ হাজার ২৫৭টি। এ কারণেই বাংলালিংক ২ কোটি ৯৩ লাখ ৬৯ হাজার ৬৬২টি এসআইএফ ধ্বংস করতে চায়।
অপরদিকে গ্রামীণফোনের কাছে সংরক্ষিত মোট ২১ কোটি ২৬ লাখ ৭০ হাজার ফিজিক্যাল এসআইএফ এর মধ্যে স্ক্যান কপি ২১ কোটি ২৬ লাখ ৭০ হাজার। ২০০৫ থেকে ২০০৭ সালের সব কয়টি এসএএফ এনবিআর এর মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়াও ধ্বংসের জন্য প্রস্তুত ৮ কোটি ১০ লাখ ৯০ হাজার।