গণশুনানিতে টেলিটক গ্রাহকের যত অভিযোগ

১ অক্টোবর, ২০২৫ ০০:৫৫  
গণশুনানিতে টেলিটক গ্রাহকের যত অভিযোগ

পূজার ছুটির আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘোষণা দিয়ে ভার্চুয়াল গণশুনানি করেছে রাষ্ট্রায়ত্ব মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর টেলিটক। এক ঘণ্টার শুনানিতে অংশগ্রহণকারী ছিলো ১০০ জনের কম। আর শুনানিতে কথা বলার সুযোগ পেয়েছেন ১৫ জন। তাদের ভাষ্যে, টেলিটকের নেটওয়ার্ক দুর্বল, রিচার্জ পয়েন্ট কম, ডেটা প্যাক কেনার পরও ইন্টারনেট ব্যবহার করতে না পাড়া ছাড়াও কাস্টমার কেয়ারে অপ্রতুলতা এবং বিশেষ করে পাহাড়ে ব্যাপক চাহিদা থাকলেও দ্বিগুণমূল্যে টেলিক সিম বিক্রির অভিযোগ মেলে। অভিযোগের পাশাপাশি ভালো একটি অ্যাপ ও বর্ণমালা প্যাকেজে ১ সেকেন্ড পালস ফিরে পাওয়ার দাবিও করা হয়েছে শুনানিতে। প্রশ্ন রাখা হয়, বাংলাদেশের মানুষের কী দায় পড়েছে যে টেলিটকে মাইগ্রেট করবে। নেটওয়ার্ক নাই, সেবা নাই। 

অনলাইন প্ল্যাটফর্ম জুমে ৩০ অক্টোবর, মঙ্গলবার সকাল ১০টায় শুরু হয়ে বেলা ১১টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয় এই গণশুনানি। ১০ টা ৫০ মিনিটে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ছিলো ৮৩জনের মতো। গ্রাহক ছাড়াও টেলিটকের স্থানীয় প্রতিনিধি এই শুনানিতে কথা বলার সুযোগ পান।

 

টেলিটকের উপব্যবস্থাপক শারমীন সিদ্দিকার সঞ্চালনায় এক ঘণ্টার শুনানিতে গ্রাহক ও প্রতিনিধিদের এসব অভিযোগ ও পরামর্শ শুনে টেলিটকের উপ-মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান বলেছেন, ‘প্রত্যেকটা কথা নোট করেছি। গ্রাহকদের অভিযোগগুলো সমাধানে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

খালেকুজ্জামানের মিনিট খানেকের বক্তব্যের মধ্যেও দুবার সংযোগে বিভ্রাট ঘটে। এ সময় গ্রাহকেরা বলতে শুরু করেন, ‘আপনাদের অফিসেই নেটওয়ার্ক ঠিক নাই নাকি স্যার? কথা আসতেছে না কেন?’ এরপর বক্তব্য অসম্পূর্ণ অবস্থায় শেষ হয় এই গণশুনানি। ‍

তবে সঞ্চালক টেলিটকের উপব্যবস্থাপক শারমীন সিদ্দিকা জানিয়েছেন, এর পর থেকে প্রতি মাসে গণশুনানির আয়োজন করা হবে। তারা সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করবেন। 

শুনানিতে ঢাকা থেকে মাহিবুল কবির নামে একজন গ্রাহক বলেন, ছুটিতে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি গেলে যশোর গেলে পাঁচটা ফোনকলের মধ্যে তিনটাই কলড্রপ হয়। বাকি দুইটা ঘ্যাসঘ্যাস, কথা শোনা যায় না। রিচার্জ পয়েন্ট নাই৷ ২০ টাকা লোড করতে গেলে কেউ কি ৫০০ টাকা বিকাশে ক্যাশ ইন করবে? প্রশ্ন রাখেন তিনি। ধানমন্ডি ২৭ এও রিচার্জ পয়েন্ট নাই বলে আক্ষেপ করেন টেলিটক গ্রাহক কাজী সাব্বির হাসান আশিক। 

রাজশাহী বিভাগের একজন গ্রাহক টেলিটকের সেবার ভোগান্তির কথা তুলে ধরে বলেন, ‘আমার এলাকায় কারেন্ট গেলেই নেটওয়ার্ক হাওয়া। এক সেকেন্ডের জন্য কারেন্ট গেলেও নেটওয়ার্ক চলে যায়। টাওয়ারে ব্যাটারি ব্যাকআপ নাই।’ আর একই এলাকা থেকে এক সেকেন্ড পালস ফিরিয়ে আনার দাবি জানান মনজুরুল ইসলাম। 

দিনাজপুরের বিরল উপজেলার গ্রাহক মোহাম্মদ মশিউর রহমান বলেন, ‘এই এলাকার কোথাও নেটওয়ার্ক কভারেজ নাই। এমবি কিনেও ব্যবহার করা যায় না। আধা ঘণ্টা দূরে দিনাজপুরে গিয়ে এমবি ব্যবহার করতে হয়।’

আক্ষেপ করে রংপুরের সজীব সরকার বলেন, বর্ণমালায় আগে এক সেকেন্ড পালস ছিলো। এখন ১০ সেকেন্ড পালস।  

আরেকজন গ্রাহক অভিযোগ করলেন, পাহাড়ে টেলিটকের নেটওয়ার্ক ভালো। এখানে চাহিদাও বেশি। কিন্তু সিম কিনতে হয় বেশি দাবে। সেখানে টেলিটক সিম কিনতে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা খরচ হয়। রফিকুল ইসলাম টেলিটকের আঞ্চলিক কর্মী জানান, পার্বত্য অঞ্চলে সিম সংকট, ওভার প্রাইস, মালিকানা পরিবর্তনে ঝামেলা পোহাতে হয়। 

ঝালকাঠি’র মীর এনামুল হক জানালেন, টেলিটকের অফিস সংলগ্ন একটি ভবনের নিচতলায় থাকেন। থ্রিজি ফোরজি কোনটাই পান না। ঝালকাঠির ১০টা ইউনিয়নের কোথাও কেউ বলতে পারবে না কাছেই কোথাও টেলিটকে রিচার্জ করতে পারবেন। সৌদি প্রবাসী আজাদও টেলিটকের সেবা নিয়ে আপত্তি প্রকাশ করেন। 

গ্রাহকদের অভিযোগ, অনেকটা দায়সারাভাবে করা হয়েছে এই গণশুনানি। এ বিষয়ে পর্যাপ্ত ঘোষণাও দেওয়া হয়নি। এমনকি অংশীজনেরাও এই গণশুনানির বিষয়ে জানেন না।

গণশুনানি আয়োজনের দুই দিন আগে, রবিবার টেলিটকের ফেসবুক পেজে এ বিষয়ে পোস্ট দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়, ‘সরকারি দপ্তর ও সংস্থাগুলো কর্তৃক মাসিক ভিত্তিতে গণশুনানি আয়োজন-সংক্রান্ত “সংস্কার কমিশন”-এর সুপারিশ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ একটি গণশুনানি ভার্চুয়াল মাধ্যমে (জুম) আয়োজন করতে যাচ্ছে।’