সব ধরনের সরকারি ক্রয়ে ই-জিপি বাধ্যতামূলক

এখন থেকে সব ধরনের সরকারি ক্রয়ে ই-জিপি বাধ্যতামূলক করে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট (সংশোধন) অধ্যাদেশের গেজেট প্রকাশ করেছে সরকার। সংশোধনীর মাধ্যমে এতে অভ্যন্তরীণ কার্য ক্রয়ের দর প্রস্তাবে ১০ শতাংশ কম বা বেশি মূল্যসীমার বিধান বাতিল করা হয়েছে।
এছাড়াও ক্তি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রকৃত উপকারভোগী প্রকাশ বাধ্যতামূলক, টেকসই সরকারি ক্রয় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রবর্তন, প্রতিটি প্রকিউরমেন্টে কৌশলগত পরিকল্পনা প্রণয়নের বাধ্যবাধকতা, ভৌত সেবাকে স্বতন্ত্র প্রকিউরমেন্ট ক্যাটাগরি হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান, ফ্রেমওয়ার্ক অ্যাগ্রিমেন্ট ও নেগোশিয়েশনস এর ক্ষেত্র সম্প্রসারণ, একটি ডিবারমেন্ট বোর্ড প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদ নিষ্পত্তি সংক্রান্ত সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে এতে।
সরকারি ক্রয়ে স্বচ্ছতা আনতে ও সিন্ডিকেট ভাঙতে এই সংশোধনী আনা হয়েছে। এতদিন প্রাক্কলিত মূল্যের ১০ শতাংশ কম বা বেশি হলে দরপত্র প্রস্তাব বাতিল করা হতো। অভ্যন্তরীণ কার্য ক্রয়ে অতিমাত্রায় নিম্ন দর ঠেকাতে ২০১৬ সালে আইনে সংশোধন এনে এই বিধান চালু হয়। কিন্তু দেখা যায়, দাপ্তরিক প্রাক্কলিত ব্যয় দরদাতারা জেনে ফেলায় তাদের উল্লেখ করা মূল্য অনেক ক্ষেত্রে সমান হয়ে যেত। সে ক্ষেত্রে অতীত কাজের অভিজ্ঞতা, টার্নওভার, তারল্য ইত্যাদি বিবেচনা করা হতো। এতে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে কিছু বড় প্রতিষ্ঠানই বেশি কাজ পেত। অবশেষে এটি বাতিল করল সরকার।
সূত্রমতে, সরকারি ক্রয়ে সুশাসন জোরদারকরণ এবং স্বচ্ছতা, দক্ষতা ও প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নতুন প্রণীত পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস (পিপিআর), ২০২৫, গত ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হয়েছে।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটির (বিপিপিএ) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত রোববার সরকারি ক্রয় পরিচালনার ক্ষেত্রে সংশোধিত সরকারি ক্রয় আইন (পিপিএ) ২০০৬ এবং নতুনভাবে প্রণীত পিপিআর ২০২৫ যুগপৎভাবে কার্যকর করা হয়েছে। মোট ১৫৪টি বিধি ও ২১টি তপশিল অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে পিপিআর ২০২৫-এ।
সরকারি ক্রয় সম্পর্কিত আইন ও বিধিমালায় আসা প্রধান পরিবর্তনগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে টেকসই সরকারি ক্রয় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রবর্তন, প্রতিটি প্রকিউরমেন্টে কৌশলগত পরিকল্পনা প্রণয়নের বাধ্যবাধকতা, ফ্রেমওয়ার্ক অ্যাগ্রিমেন্ট ও নেগোসিয়েশনের ক্ষেত্র সম্প্রসারণ, সম্পদ নিষ্পত্তি-সংক্রান্ত সুস্পষ্ট বিধান ইত্যাদি।
বিপিপিএর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মঈন উদ্দীন আহম্মেদ বলেন, ক্রয়কারী ও দরদাতাসহ আন্তর্জাতিক মহল এসব বিষয়ে দ্রুত পরিবর্তনের পরামর্শ দিয়ে আসছিল। সে পরিপ্রেক্ষিতে দুই মাসের মধ্যে এ কাজ সম্পন্ন করার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করা হয়।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সচিব কামাল উদ্দিন বলেন, এটি সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ায় প্রতিযোগিতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করার প্রচেষ্টায় একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।
প্রসঙ্গত, আইন সংশোধন ও নতুন বিধিমালা প্রণয়ন বিষয়ে বিপিপিএর পরিচালনা পর্ষদ একটি টেকনিক্যাল ওয়ার্কিং গ্রুপ (টিডব্লিউজি) গঠন করে। টিডব্লিউজি ৯টিরও বেশি সভায় সংশোধনী বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে। পাশাপাশি বিপিপিএ ১২টি পরামর্শ সভার আয়োজন করে। যেখানে ক্রয়কারী সংস্থা, দরদাতা, সাংবাদিক, নীতিনির্ধারণী কর্মকর্তা, নারী উদ্যোক্তা ও উন্নয়ন সহযোগীরা অংশগ্রহণ করেন। জেলা-উপজেলা পর্যায়েও ক্রয়কারী ও দরদাতাদের সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।