কুরআন অবমাননার ভিডিও ভাইরালের পর গ্রেফতার অপূর্ব পাল

৫ অক্টোবর, ২০২৫ ০৭:১৯  
৫ অক্টোবর, ২০২৫ ০৯:২১  
কুরআন অবমাননার ভিডিও ভাইরালের পর গ্রেফতার অপূর্ব পাল

পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কুরআন অবমাননাকারী নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী অপূর্ব পালকে গ্রেফতার করেছে ভাটারা থানা পুলিশ। তবে গ্রেফতারের আগে ফেসবুক লাইভে আটক অপূর্বের কুরআন অবমাননার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে রাতেই রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় তার বাসার সামনে শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। 

একপর্যায়ে পুলিশ অভিযুক্তকে আটক করে থানায় নিয়ে আসার চেষ্টা করলে ছাত্র-জনতা তাকে মারধর শুরু করে। পরে পুলিশ তাকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে যায়।

শনিবার (৫ অক্টোবর) দিবাগত রাত দুইটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এখন এই ঘটনার পেছনে কারা আছে তা বের করে দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবিতে সরগরম হয়ে উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়া। 

ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাকিবুল হাসান জানিয়েছেন, ওই শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

এদিকে আটক অপূর্ব পাল এর ফেসবুক পেজে অপূর্ব রদে এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে পবিত্র কুরআন শরীফ পদদলিত করা এবং লাথি দিতে দিতে নিজেই যে ভিডিও করেছিলো তা প্রকাশ্যে দেখা গেছে। ৫ টুকরো ভিডিওটি রাতেই দেড় হাজারের বেশি শেয়ার হতে দেখা গেছে। এছাড়াও ২৫ হাজারের বেশি ‘অ্যাঙ্গরি’ রিয়্যাক্ট দিয়েছেন নেটিজেনরা। 

অপূর্বকে আটকের পর প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট অ্যালায়েন্স অব বাংলাদেশের (পিইউএসএবি) অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে এই ঘটনার নিন্দা করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়েছে। পোস্টে লেখা হয়েছে,“বাংলাদেশ বিরোধী শক্তি চেয়েছিল পূজাকে কেন্দ্র করে অস্থিরতা বাড়াবে! অথচ তাদের সকল ষড়যন্ত্র ভেঙ্গেচুরে জিতে গেল আমাদের ভালোবাসা আর সৌহার্দ্যবোধ। তাদের সকল অশুভ পরিকল্পনা ভেস্তে গেলে আর তাই চরম ভাবে হেরে যাওয়ার কষ্ট কমাতে শেষ বেলায় আরেকটা চেষ্টা করা হলো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়কে সামনে রেখে। অথচ এখানেও আমাদের জুলাই আন্দোলনের সূতিকাগার প্রাইভেটিয়ানরা সর্বোচ্চ ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করলো। ইতিমধ্যেই পবিত্র কুরআন অবমাননাকারী গ্রেপ্তার হয়েছে। এখন কথা একটাই অতিদ্রুত এই ঘটনার তদন্ত এবং ব্যাকগ্রাউন্ডে আর কারা জড়িত তা বের করতে হবে। 
পাশাপাশি অতিসত্বর তার বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।”

একইভাবে অপূর্বকে আটকের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক নাফসিন মেহনাজ লেখেন, কুরআন অবমাননার ঘটনার আপডেট! অপূর্ব পালের বাসার নিচে ছাত্ররা ঘেরাও করেছে, পুলিশ এসে তাকে এরেস্ট করেছে! এখন সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার জোর দাবি জানাচ্ছি। এ ঘটনায় জড়িতের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানিয়ে ডাকসুর ভিপি সাদিক কায়েম ফেসবুকের এক স্ট্যাটাসে লেখেন, নর্থ সাউথে পবিত্র কুরআন অবমানার ঘটনা আমাদের হৃদয়ে আঘাত করেছে। অবিলম্বে উক্ত ঘটনায় অভিযুক্তকে দৃষ্টান্তমূলক বিচারের আওতায় আনুন। একইসাথে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে কোন অপশক্তি ফায়দা নেওয়ার চক্রান্ত করছে কিনা, তা খতিয়ে দেখুন। দেশবাসীর প্রতি আহবান, শান্ত থেকে বিচক্ষণতার সাথে পরিস্থিতি মোকাবিলা করুন। দেশকে অশান্ত করে কোনো অপশক্তিকে ফায়দা নিতে দেওয়া হবে না, ইনশাআল্লাহ।

এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও দ্রুত বিচারের দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, এ ঘটনা শুধু ধর্মীয় অবমাননাই নয়, বরং ইচ্ছাকৃতভাবে সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করে জনগণকে দ্বিধাবিভক্ত করার একটি অপচেষ্টা। এ ধরনের আচরণ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্ম দিতে পারে। 

‘তাই বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ দাবি করছে, এই শিক্ষার্থীকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে, যা রাষ্ট্রের জন্য বিপজ্জনক। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, দ্রুততম সময়ে এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করুন এবং দেশের অসাম্প্রদায়িক পরিবেশ ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করুন।’

ইব্রাহিম খলিল শাওন তার ভেরিফায়েড পেজে প্রশ্ন রেখেছেন, অপূর্ব পালকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাতে আমরা সবাই খুশি কিন্তু কিছু ভ্যালিড প্রশ্ন রেখে যাই-কুরআন শরীফে লাথি দেয়ার ঘটনাটা ঘটেছে সকাল ৯ টায়। সেটা ফেসবুকে পাবলিশ হয়েছে রাত ১১ টায়। তারপর গ্রেফতার হলো এখন রাত ২ টায়। তাও অনলাইন রাতারাতি ভাইরাল হয়েছে তাই, নয়তো এত তাড়াতাড়ি হতো না। সকাল ৯ টায় যখন ঘটনাটা ঘটেছে তখন ভার্সিটির কর্তৃপক্ষ কি করেছে?