অন্তর্বর্তী সরকার সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলে জনআস্থা হারাচ্ছে : ডিএসএ ভিক্টিমস নেটওয়ার্ক

বাতিলের ৭ মাস পরেও সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা নিয়ে জুলাই স্পিরিটের কবর রচনা করে অন্তর্বর্তী সরকার সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলে জন আস্থা হারাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে ডিএসএ ভিক্টিমস নেটওয়ার্ক। মঙ্গলবার এই নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে নানা সময়ে এই মামলায় আক্রান্ত ও ভূক্তভোগী মানবাধিকারকর্মী, শিক্ষক, গবেষক, আইনজীবী, গণমাধ্যমকর্মী, বাউলশিল্পী ও শিক্ষার্থীসহ২৮ জন সদস্য স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই অভিযোগ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, আমরা নিম্ন স্বাক্ষরকারীরা বিগত মাফিয়া সরকারের আমলে নিবর্তনমূলক আইসিটি (৫৭ ধারা) বা ডিজিটাল নিরাপত্তা বা সাইবার নিরাপত্তা আইনের মজলুম। আমরা খুবই হতাশ হয়ে লক্ষ করছি যে, গণঅভ্যুত্থানের বাংলাদেশেও কুখ্যাত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল তো হয়ই নাই বরং এই আইনে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন মামলা করা হচ্ছে। সরকার ও প্রশাসন থেকে এই আইনে মামলা নেয়া বন্ধ করার পরিবর্তে নিয়মিত মামলা নেয়া হচ্ছে, তদন্ত ছাড়াই গ্রেফতারের তোড়জোড় করা হচ্ছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের একটা প্রথম ও প্রধান কমিটমেন্ট ছিলো সাইবার নিরাপত্তা সহ সকল নিবর্তনমূলক আইন বাতিল করার। সেই অগাস্ট মাসেই তারা তা ঘোষণা করেন। এরপর বিভিন্ন সময় সরকার অন্তত ৪ বার সময় নিলেও সাইবার নিরাপত্তা আইন এখনো বহাল আছে। সর্বশেষ বিগত ২১ জানুয়ারি আইন উপদেষ্টা স্পষ্ট ঘোষণা দেন, সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলে আইন মন্ত্রণালয়ের সকল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছে। আর তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কিছু কাজ বাকী রয়েছে। সেটা সম্পন্ন করে তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় আইন বাতিলের ঘোষণা দিবেন। এরপর আবারো প্রায় দেড় মাস পার হলেও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় বাকী কাজ সম্পন্ন হয় নাই। আইনও বাতিল হয় নাই। মামলা বাতিলের কোন তালিকাও আমরা পাই নাই। বরং নিত্য নতুন মামলা নেয়া হচ্ছে।
আমরা ক্রমেই মনে করছি, সাইবার নিরাপত্তা আইন সহ নিবর্তনমূলক আইনগুলো বাতিলে প্রকৃত ভাবে সরকারের আন্তরিকতা, সিরিয়াসনেস, কর্মতৎপরতার ঘাটতি আছে। এই অবহেলা জুলাই অভ্যুত্থানের স্পিরিটকে হত্যা করছে। সরকারের এই অযোগ্যতা, অদক্ষতার ফলে অন্তর্বর্তী সরকার ক্রমেই জনগণের আস্থা হারাচ্ছেন। এর বিপরীতে ষড়যন্ত্রকারীরা আইন হাতে তুলে নিয়ে প্রকাশ্যে খুনের ঘোষণা, সারাদেশে আইন শৃঙ্খলার অবনতি, মব জাস্টিস ইত্যাদির তান্ডপ চালাচ্ছেন। পুলিশও সাইবার নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার, জুলুম করতে অতি উৎসাহী। এবং তারা উপরোক্ত ফৌজদারি অপরাধ গুলোর ক্ষেত্রে প্রশ্রয় দিচ্ছেন।
আমরা আরো মনে করি বর্তমান সরকার প্রস্তাবিত সাইবার সুরক্ষা আইন আবারো একটি ভুল উদ্যোগ হতে যাচ্ছে। জনমনে সর্বশেষ সাইবার নিরাপত্তা আইন নিয়ে যে আতংক আছে, প্রস্তাবিত সাইবার সুরক্ষা আইন তার প্রভাব মুক্ত থাকবেনা। বরং সাইবার হ্যাকিং, অনলাইনে নারী নির্যাতন, পর্নোগ্রাফি সংক্রান্ত নিয়মিত আইনগুলোর আধুনিকায়ন বা একান্ত প্রয়োজনে সেগুলোর নতুন আইন বানানোই জনমনে আস্থার সঞ্চার করতে পারে। গণ অভ্যুত্থানের বাংলাদেশে জনগণ তাই প্রত্যাশা করে।
সর্বোপরি, অবিলম্বে সরকারকে সাইবার নিরাপত্তা সহ সকল নিবর্তনমূলক আইন বাতিল করতে হবে। এসব আইনের সকল বন্দীদের মুক্তি দিতে হবে। ভুক্তভোগীদের ক্ষতি পূরণ দিতে হবে। এবং সরকারের নিবর্তনমূলক আইন বানানোর একচ্ছত্র ক্ষমতা কাঠামোকে জবাবদিহিমূলক করতে হবে।
আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, ডিএসএ ভিকটিমস নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক গোলাম মাহফুজ জোয়ার্দার, সদস্যসচিব প্রীতম দাশ, রাষ্ট্রসংস্কার আন্দোলনের অর্থ সমন্বয়ক দিদারুল ভূঁইয়া, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মঞ্জিলা ঝুমা ও যুক্তরাষ্ট্রের পিটার্সবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক মাইদুল ইসলাম, শিক্ষক নুসরাত জাহান সোনিয়া, শিক্ষার্থী, খাদিজাতুল কুবরা, বরগুনার সাংবাদিক জামাল মীর, ঢাকার সংবাদকর্মী রহিম শুভ, বায়েজিদ আহমেদ প্রমুখ। এছাড়াও নানা পেশা ও বয়সীদের মধ্যে ঠাকুরগাঁও এর আল মামুন জীবন, কুষ্টিয়ার নাঈম বিশ্বাস, ময়মনসিংহের এহসান হাবীব, কুড়িগ্রামের মোঃ রাকিব, খাগড়াছড়ির আহসান হাবীব তছলিম প্রমুখ এই দাবি জানিয়েছেন।