বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ (সংশোধন) আইন, ২০১০ বাতিলে
বিটিআরসি-কে মন্ত্রণালয়ের ৯ নির্দেশনা

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ (সংশোধন) আইন, ২০১০ বাতিলে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যানকে ৯টি নির্দেশনা দিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। এতে ইন্টারনেটকে নাগরিকের মৌলিক অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠায় বিদ্যমান আইনের সংশোধন ও পরিমার্জনের নির্দেশনাও রয়েছে।
এতে সরকারি বা বেসরকারিভাবে কেউ যেন ইন্টারনেট বন্ধ করতে না পারে, সে লক্ষ্যে টেলিযোগাযোগ আইন ২০০১ সংশোধন ও পরিমার্জন করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
নির্দেশনায় বিটিআরসি’র স্বাধীনতা ও জবাবদিহিতার মধ্যে সমন্বয়সহ টেলিযোগাযোগ-ব্যবস্থায় আড়ি পাতার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক রীতি অনুসরণের বিষয়টি সুস্পষ্ট করা হয়েছে। একইসঙ্গে মানসম্পন্ন সেবা নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক মানের কেপিআইয়ের (পারদর্শিতার মান) বিধান আনার কথা বলা হলেও বিনিয়োগকারীদের অপ্রয়োজনীয় ভয়ভীতি দেখানোর ধারা সংশোধন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নির্দেশনাটি বাস্তবায়িত হলে ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার পথের সরকারি ও বেসরকারি আধিপত্য দূর হবে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। তবে চলমান এই প্রক্রিয়া নিয়ে কোনো পক্ষই এখনই মন্তব্য করতে রাজি হননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা একজন নেতা বলেছেন, ইন্টারনেট বন্ধে সরকারের পাশাপাশি রাজনৈতিক মদদপুষ্ট বড় বড় কোম্পানিও জড়িত থাকে। এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন হলে সেই পথ বন্ধ হবে। টেলিসেবায় সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা হবে।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীর পক্ষে মন্ত্রণালয় থেকে ২৮ জুলাই বিটিআরসি চেয়ারম্যানকে এই নির্দেশনাটি পাঠান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ।
নির্দেশনার শুরুতেই ইন্টারনেট বন্ধের পথ সিলগালা করা এবং সেবাদাতাদের লাইসেন্স প্রদান, লাইসেন্স নবায়ন, লাইসেন্সের নাম পরিবর্তন ও লাইসেন্সের শেয়ার হস্তান্তর বিষয়ে সুস্পষ্ট নীতিমালা; বকেয়া আদায়, রাজস্ব লিকেজ (বিভিন্নভাবে ফাঁকি) ইত্যাদিতে বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমতি কমিয়ে আনা এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। গুরুত্ব দেয়া হয়েছে বিটিআরসির নিয়োগপ্রক্রিয়ার স্বচ্ছতার ওপর। এ ক্ষেত্রে সরকারের ‘রুল অব বিজনেস’ এবং ‘অ্যালোকেশন অব বিজনেস’ (মূলত কার্যপরিধি) অনুসারে বিটিআরসির স্বাধীনতা ও জবাবদিহির ব্যবস্থা করতে হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে টেলিযোগাযোগ বিভাগের চিঠিতে।
এতে বলা হয়েছে, মন্ত্রণালয়ের ওপর অর্পিত দায়িত্বের প্রশ্নে এবং মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠানের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমতির প্রাসঙ্গিকতা থাকবে। তবে কোনো অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে, ট্যারিফ (সেবামূল্য) নির্ধারণে মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমতি তুলে দেওয়ার বিধান করতে হবে।
অপরদিকে সকল ক্ষেত্রে লাইসেন্সের বাধ্যবাধ্যকতায় কভারেজ ও ক্যাপাসিটি অন্তর্ভূক্ত করণ, নতুন লাইসেন্সের অনুমতি, শেয়ার হস্তান্তর, নাম পরিবর্তন কিংবা নতুন কোনো সম্পদ অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা আরোপের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একইভাবে লাইসেন্স নবায়নে আইপিভি সিক্স মাইগ্রেশনের মতো বিষয়ে বাধ্যবাধকতা রাখতে বলা হয়েছে।
এছাড়াও মন্ত্রণালয়ের অধীন ছয়টি টেলিযোগাযোগ কোম্পানি, বিভিন্ন টেলিযোগাযোগ সেবাসংক্রান্ত লাইসেন্স এবং কোম্পানিগুলোর স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে যুক্ত করা ও শুধু সেসব বিষয়ে পূর্বানুমতির বিধান রেখে বাদবাকি জায়গায় বিটিআরসির পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করে আইন সংশোধনের কথা বলা হয়েছে।
নির্দেশনার শেষভাগে গুরুত্ব পেয়েছে টেলিসেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সুরক্ষাব্যবস্থা। এক্ষেত্রে ব্যক্তগত তথ্য সুরক্ষা আইন, সাইবার সুরক্ষা আইন, ডেটা গভর্নেন্স অ্যান্ড ইন্টারঅপারেবিলিটি আইন, ন্যাশনাল এআই পলিসি, টেলিযাগাযোগ লাইসেন্স, মেইলিং ই-কমার্স এবং কুরিয়ার সার্ভিস পলিসির মধ্যে সমন্বয় সাধন করা হয়েছে।
অন্যদিকে টেলিযোগাযোগ-ব্যবস্থায় আড়ি পাতা বিষয়ে আন্তর্জাতিক রীতি অনুসরণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) প্রশ্নে ‘বৈধতার প্রশ্ন তৈরি করার’ কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
আড়ি পাতার বিষয়টি আধা বিচারিক প্রক্রিয়ায় আনতে নির্দেশনায় বলা হয়, ‘শুধু একটি এজেন্সিকে গেটওয়ে করে বাকি আইনানুগ আড়ি পাতা এজেন্সিদের আড়ি পাতায় কোয়াসি বা প্যাসিভ জুডিশিয়াল একনলেজমেন্টে রেখে আড়ি পাতার কাঠামোগত এবং আন্তর্জাতিক মান তৈরি করতে হবে।’
এছাড়াও টেলিযোগাযোগ লাইসেন্স এবং সেবা সংক্রান্ত বিষয়ে দেওয়ানি ও ফৌদারি অপরাধ চিহ্নিত করে বিদ্যমান আইন হালনাগাদ কারার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সূত্রমতে, যেহেতু মাস খানেক আগ থেকেই টেলিযোগাযোগ আইনের একটি খসড়া নিয়ে বিটিআরসি কাজ করছে, সেক্ষেত্রে এই নির্দেশনা প্রতিপালন সাপেক্ষে আগামী মাসেই একটি খসড়া পাঠাবে সংস্থাটি।