প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক জলবায়ু অলিম্পিয়াডে যাচ্ছে বাংলাদেশ
বিশ্বমঞ্চে দাবনলের আগাম সতর্কতা প্রযুক্তি দেখাতে চায় তারা

রাশিয়ার ক্রাসনোদার ক্রাইয়ের একটি শহর যা জর্জিয়া ও রাশিয়ার সীমান্তের কাছে কৃষ্ণ সাগরের উপকূলে অবস্থিত সোচিতে আগামী ১৩ থেকে ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাজ্ছে আন্তর্জাতিক জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ বিষয়ক অলিম্পিয়াড (IOCE 2025)। এতে প্রথমবারের মতো অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ।
অলিম্পিয়াডে পাঁচ সদস্যের বাংলাদেশ দলটি যাচ্ছে এআই ব্যবহার করে দাবানলের আগাম সতর্কতা দেয়ার মতো পরিবেশ বান্ধব সমাধান নিয়ে। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী ফারহান মাসুদ তাসিনের নেতৃত্বে এই দলে বাকি চার সদস্যরা হলেন মাহদী বিন ফেরদৌস (ভাসানটেক সরকারি কলেজ), তাসিন মোহাম্মাদ (বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ), মো: নুর আহমদ (রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল) এবং মো: আশিকুর রহমান (হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়)।
অলিম্পিয়াডে ২০টিরও বেশি দেশের অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে সপ্তাহব্যাপী নানা কার্যক্রমে অংশ নেবে, যার মধ্যে রয়েছে তাত্ত্বিক পরীক্ষা, ব্যবহারিক ল্যাবরেটরি কাজ, মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম, কর্মশালা এবং বহুল প্রতীক্ষিত “ফেস্টিভ্যাল অব প্রজেক্টস,” যেখানে প্রতিটি দল তাদের উদ্ভাবনী, পরিবেশবান্ধব সমাধান উপস্থাপন করবে।
বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের যুবসমাজের উদ্ভাবনী শক্তিকে তুলে ধরতে পথচলাটা সহজ ছিল না। সীমিত সম্পদ, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পূর্ব অভিজ্ঞতার অভাব, এবং পড়াশোনার চাপের সঙ্গে প্রস্তুতির সমন্বয় — সবকিছু মিলিয়ে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে। কিন্তু শিক্ষকদের, মেন্টরদের ও পরিবারের সহায়তায় দলটি দৃঢ় থেকেছে। আর সেটাই বাংলাদেশের আসল শক্তি — সহনশীলতা ও লড়াই করার মানসিকতা।
বাংলাদেশের প্রজেক্ট: AI-ভিত্তিক ওয়াইল্ডফায়ার প্রেডিকশন সিস্টেম
বাংলাদেশের প্রথম পদক্ষেপটি হবে এক উচ্চাভিলাষী উদ্ভাবনের মাধ্যমে: এআই-ভিত্তিক ওয়াইল্ডফায়ার প্রেডিকশন সিস্টেম। এতে ব্যবহৃত হয়েছে সোলার-পাওয়ার্ড IoT সেন্সর এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), যা বাস্তব সময়ে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি শনাক্ত করতে সক্ষম। এটি টেকসই, পরিবেশবান্ধব এবং ব্যয়সাশ্রয়ী—যা প্রচলিত মনিটরিং সিস্টেমের সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে। একই সঙ্গে এটি বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান জলবায়ু সহনশীলতা ও দুর্যোগ প্রস্তুতির প্রতিশ্রুতিকে তুলে ধরে।
প্রতিযোগিতার ধাপগুলো
বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা প্রথমে অংশ নেবেন তাত্ত্বিক পরীক্ষাতে — ব্যক্তিগতভাবে (Individual round) এবং দলীয়ভাবে (Team round)। এরপর তাদের নিয়ে যাওয়া হবে একটি প্রাকৃতিক অভয়ারণ্যে, যেখানে পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান নিয়ে নির্দিষ্ট কাজ সম্পন্ন করতে হবে। পরবর্তীতে সেই তথ্য নিয়ে একটি ল্যাবে রিপোর্ট তৈরি করা হবে। সবগুলো ধাপের নম্বর ও মূল্যায়নের ভিত্তিতে বিজয়ী দলগুলোকে পুরস্কৃত করা হবে।
প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ নিয়ে দলনেতা ফারহান মাসুদ তাসিন বললেন, সোচির দিন যত ঘনিয়ে আসছে, দেশে তত বাড়ছে উত্তেজনা ও প্রত্যাশা। এই অংশগ্রহণ শুধু শিক্ষা বা বিজ্ঞানের মাইলফলক নয়, বরং একটি ঘোষণা বাংলাদেশ বিশ্বকে জানাচ্ছে: আমরা প্রস্তুত — একটি টেকসই ভবিষ্যৎ গড়তে, নিজেদের জন্য এবং গোটা বিশ্বের জন্য। এরবাইরেও এই অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণে আমাদের একটি প্রতীকী গুরুত্বও আছে। আর তা হলো- জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি হিসেবে বাংলাদেশকে এতদিন দেখা হয়েছে শুধু ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে। কিন্তু এবার সোচির মঞ্চে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ জানিয়ে দেবে — আমরা শুধু জলবায়ুর শিকার নই, আমরা সমাধান তৈরির অংশীদারও।
সিরিয়াস ফেডারেল টেরিটরি এবং ট্যালেন্ট অ্যান্ড সাকসেস এডুকেশনাল ফাউন্ডেশন, রাশিয়ার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় অনুষ্ঠেয় প্রতিযোগিতার বাইরেও এখানে হবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং টেকসই নগর উন্নয়ন নিয়ে আন্তর্জাতিক সংলাপ। বাংলাদেশ এখানে একদিকে শিখবে, অন্যদিকে শেয়ার করবে তার নিজস্ব অভিজ্ঞতা।