বর্ণিল স্ক্রিনে হালখাতা

১৪ এপ্রিল, ২০২৫  
১৪ এপ্রিল, ২০২৫  
বর্ণিল স্ক্রিনে হালখাতা

এক সময় হালখাতা মানে ছিল-   বকেয় পরিশোধের স্থিতি হিসাব লেখা মলমলে কাগজে বন্দি লাল রঙের খাতা- হালখাতা। বকেয়া পরিশোধ আর  “আসুন বসুন চা খান”। কিন্তু সময় বদলেছে। হিসাবও এখন ডিজিটাল। এখন হালখাতা মানে —  এক ক্লিকে কাস্টমারের ক্রেডিট ডিটেইলস।  কিস্তির তারিখ মনে করিয়ে দেওয়া অটো রিমাইন্ডার। গ্রাহককে খুদে বার্তা পাঠিয়ে মনে করিয়ে দেয়া কিংবা হোয়াটসঅ্যাপে শুভেচ্ছা পাঠানো। হিসাব, বিক্রি-ক্রয়, লাভ-ক্ষতির রিপোর্ট এখন এক স্ক্রিনে। স্টক, ইনভেন্টরি, প্রোডাক্ট ট্র্যাকিং;  ইনভয়েস জেনারেশন; খরচ ট্র্যাকিং ও ব্যালেন্স শিট; অটোমেটেড ভ্যাট, আরওআই ও প্রফিট ক্যালকুলেশন। আর এর সবটাই হয় মোবাইল/ল্যাপটপে। যেকোনো সময়, যেকোনো জায়গা থেকে মুহুর্তেই। 

লাল মলাটের জায়গায় এসেছে বর্ণিল রঙ। কাগজের খাতা বদলে গেছে ডিজিটাল স্কৃনে। পুরোনো খাতা খোঁজার দিন পেরিয়ে হিসাব জমা হচ্ছে সার্ভারে-ক্লাউডে। হিসাব-পাতি এখন আর নির্দিষ্ট মলাট বা সময়ে বন্দি নেই। মুক্ত হয়েছে সময়-দূরত্বের খাঁচা থেকে। হালখাতা হয়েছে এখন আরো রঙিন। ভিজ্যুয়াল। 

কেননা, প্রযুক্তির বদৌলতে বাংলা নতুন বছরে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ‘হালখাতা’য় যুক্ত হয়েছে নতুন মাত্রা। কম্পিউটার, সফটওয়্যার হয়ে পৌঁছেছে অ্যাপে। ট্যাবে আর মুঠোফোনে চলে এসেছে হিসাব-নিকাশ। ক্ষুদ্র-কুটির থেকে বড় ব্যবসায়ী সবাই ব্যবহার করছেন হিসাবেবর সফটওয়্যার ও অ্যাপ্লিকেশন। হিসাবের পাশাপাশি গ্রাহকের ডেটাবেজ থেকে ইন্টারনেট সংযুক্ত হয়ে ‘হালখাতা’র কাজটি করে দিচ্ছে ‘হিসাব’; ‘হিসাব বন্ধু’; ‘হিসাবপাতি’; ‘পাইকারি’; খুচরা দোকান ম্যানেজার অ্যাপ ‘মুধির’; ‘হালখাতা অ্যাপ’; ‘বাকির খাতা’; ‘টালিখাতা’; ‘টালি হিসাব’ এবং মোকাম ও পস সফটওয়্যার ‘ঠিকা’ এর মতো ডিজিটাল সল্যুশন। 

এর মধ্যে খুচরা ও পাইকেরি ব্যাবসায়ীদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় মোকাম। একাধিক সাপ্লাইয়ার, ডিস্ট্রিবিউটর এবং পাইকাররা নিজেদের হিসাব রাখেন এই বিটুবি ডিজিটাল প্লাটফর্মে। অবশ্য দেশে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় টালিখাতা। এই অ্যাপে আছে হালখাতা অনুষ্ঠানের ডিজিটাল দাওয়াতপত্র দেয়ার সুবিধা। এগুলোর অনেকগুলোতেই টাইপ না করে মুখে মুখেও হিসাব ইনপুট দেয়া যায়। স্বয়ংক্রিয় ভাবে হিসাবের স্থিতি সুন্দর কার্ডে পাঠিয়ে দেয়া যায় গ্রাহকের ই-মেইল. হোয়াটসঅ্যাপে। হিসাব রাখতে ব্যবহৃত হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাও। 

এসব সফটওয়্যার আর অ্যাপ্লিকেশনের কল্যাণে ভাটা পড়েছে ঐতিহ্যের হালখাতায়। চারপাশে প্রযুক্তির ছোঁয়া, কম্পিউটার, ল্যাপটপ আর অ্যাপসের দুনিয়ায় হাতে লেখা খাতার প্রচলন প্রায় উঠে যেতে বসেছে। ফলে এখন আর বাংলা সনের প্রথম দিনে ব্যবসায়ীদের নতুন টালিখাতা খুলতে খুব একটা দেখা যায় না। তবে ঐতিহ্য রক্ষায় এখনো রাজধানীর শাখারীবাজার, তাঁতিবাজারের মতো পুরোন ঢাকায় অনেক ব্যবসায়ী রীতি ধরে রাখতে হালখাতা উৎসব করে থাকেন। এই উৎসব এখন ভিন্ন আঙ্গিকে আরো বর্ণিল হয়েছে। হিসবা হারিয়ে বা পুড়ে যাওয়ার ঝুঁকি কমেছে। হিসাবের কারসাজিতে এসেছে স্বচ্ছতা। কিন্তু যুক্ত হয়েছে নতুন ঝুঁকি সাইবার ঝুঁকি। তাই এসব অ্যাপ ব্যবহারকারী ডিভাইসের নিরাপত্তা ও ডিজিটাল লিটারেসি এখন সামনের দিনে নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিতে পারে ডিজিটাল হালখাতায়।