সিলেট হাইটেক পার্কে ৯ কোম্পানির মধ্যে সচল ১
রাস্তাকাটার দৃশ্যমান ভোগান্তির চেয়ে অদৃশ্যমান ভোগান্তি বেশি

সিলেটের কোম্পানিগঞ্জে ১৬৮ একর এলাকার ওপর তৈরি করা হয়েছে সিলেট হাইটেক পার্ক। বরাদ্দযোগ্য অবস্থায় রয়েছে ১২০ একর জমি। ৯টি কোম্পানিকে মোট ৪৬ একর জমি দেয়া হলেও সেখানে মাত্র একটি কোম্পানি উৎপাদনে রয়েছে। এমন পড়ে থাকা জমি পুণরুদ্ধার এবং পড়ে থাকা ৭৪ একর জমি এবং ১০ হাজার বর্গফুট জায়গায় বিনিয়োগের মাধ্যমে টেকসই কর্মসংস্থান গড়ে তুলতে দেশী ও প্রবাসী সিলেট কমিউনিটির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। একইসঙ্গে চায়ের দেশ খ্যাত এই পর্যটন নগরীতে বিটিসিএল ও ডাক বিভাগের বেহাত জমি পূণরুদ্ধারে স্থানীয় প্রশাসন সহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সহযোগিতা কামনা করেছেন তিনি। এছাড়ও সাদা পাথর উত্তলনে জড়িত বেকারদে কর্মসংস্থানে প্রশিক্ষণ দেয়ার উদ্যোগ নিতেও তাগিদ দিয়েছেন তিনি।
৬ সেপ্টেম্বর, শনিবার সিলেট জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে "তথ্য প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় কর্তৃক নবপ্রণীত আইন, পলিসি এবং সংস্কার" নিয়ে মতবিনিময় সভায় এই তাগিদ দেন তিনি। এসময় ইন্টারনেট সেবার মান বাড়াতে হুট-হাট ফাইবার না কাটতে মেয়র এবং স্থানীয় প্রশাসনকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘রাস্তাকাটার দৃশ্যমান ভোগান্তির চেয়ে অদৃশ্যমান ভোগান্তি বেশি। এ জন্যই লাইন ডাউন হয়। ফ্রিল্যান্সাররা কাজ করতে পারে না। অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জরুরী সেবা বাধাগ্রস্ত হয়। তাই সবাই নিয়েই ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় এ নিয়ে কাজ করবে।’
সভায় এক সাংবাদিকের সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা এখনো চলছে এমন মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বিশেষ সহকারী ‘দুঃখ প্রকাশ’ কনে বলেন, সাইবার নিরাপত্তা অধ্যাদেশ পাস করা হয়েছে যাতে যে নয়টি ধারার মাধ্যমে ৯৫ শতাংশ মামলা করা হয়েছিল সেগুলো বাদ দেয়া হয়েছে। আমরা আওয়মী লীগের আমলের নিপীড়নমূলক সবগুলো ধারা বাদ দিয়েছি। এখানে নাগরিক হয়রানির কোনো এলিমেন্ট নেই।
এরপরও যদি কারো মামলা চলমান থাকে তাহলে স্থানীয় আইনশৃঙ্খল রক্ষাকারী বাহিনী এবং আদালতের শরণাপন্ন হতে বলেন তিনি। একইসঙ্গে নির্বাচিত সরকার সংসদে আলোচনার ভিত্তিতে ত্রুটি সংশোধন করে আইন হিসেবে পাশ করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ যত মামলা হয় সেখানে অনেকগুলো আইন ও ধারা জড়িয়ে মামলা করা হয়। তাই এই অধ্যাদেশ বিষয়ে যেকোনো সংশোধনের জন্য এনসিএডটগভডটবিডিতে আপনারা মেইল করে মতামত জানাতে পারেন।
জুয়ার সাইট বন্ধে সরকারের ব্যর্থতা স্বীকার করে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, বিগত সরকারের সময়ে নির্দিষ্ট সাইট বা অ্যাপ বন্ধের প্রযুক্তি কেনার নামে প্রায় আড়াই শ’ কোটি টাকা খরচ করছে। কিন্তু প্রযুক্তিটির ফিচারগুলি সিগনিফিকেন্ট করা হয়নি। তাই জুয়ার সাইট বা অ্যাপ আমরা বন্ধ করতে পারছি না। এজন্য আমরা বিটিআরসি-তে অংশীজনদের নিয়ে বৈঠক করেছি। আশাকরি আমরা এটা করতে সক্ষম হবো।
তরুণদের দক্ষতা উন্নয়নে ‘আগের আমলে মিথ্যা ট্রেনিং দিয়ে সাইন দিয়ে টাকা তুলে নেয়া এবং দাম দিয়ে নিম্নমানের ল্যাপটপ বিতরণ না করে’ অন্তর্বর্তী সরকার সাইবার সিকিউরিটি, ফ্রিল্যান্সিং, পাইথন ও মাইস্কুয়েল এর মতো বিষয়ে ইতিমধ্যেই স্কুল ও মাদরাসায় পাইলট ভিত্তিতে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে বলে জানান বিশেষ সহকারী।
তিনি বলেন, পছন্দের দলীয় ভেন্ডর নয়; এখন থেকে প্রতিটি ট্রেনিংয়ের সঙ্গে এনএসডিএ স্বীকৃত সনদপ্রদানকারীকে দিয়ে এই প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
ইন্টারনেটের দাম কমানো ও মান বাড়ানোর পাশাপাশি এই খাতে প্রতিযোগিতা সৃষ্টিতে নতুন টেলিকম নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে মন্তব্য করে ফয়েজ বলেন, আমরা এমভিএনও এর প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধ দূর করেছি। আশা করছি, সামনের দিনে নতুন সিম বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান হাজির হবে। এতে প্রতিযোগিতার সঙ্গে সেবার মানও বাড়বে। স্যাটেলাইট ইন্টারনেট আসার পর এখন আইসিপিগুলো ভালো সেবা দেওয়া শুরু করেছে। কিন্তু সেলুলার মোবাইলের টেকনেলোজি এখনো ভালো হয়নি। টেলিটকের আড়াই হাজার সাইট উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছি।
সিলেট হাইটেক পার্ক নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশেষ সহকারী বলেন, ৯টি কোম্পানির মধ্যে সম্ভবত র্যাগস সেখানে উৎপাদনে রয়েছে। বাকি ৮টি কোম্পানির কাছে তাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা জানতে চেয়েছি। তাদের উত্তরের পরিপ্রেক্ষিতে যদি দেখি তারা পলিটিক্যাল স্ট্যানবাজির কারণে জমি নিয়ে ইউটিলিটি ও ভাড়া দিচ্ছে না। তাহলে সেগুলো আমরা পূণরুদ্ধার করে সিলেটে বা সিলেটের বাইরে, লন্ডনে বা এর বাইরে সিলেটের যে কমিউনিটি রয়েছে তাদের বিনিয়োগের জন্য জমি বরাদ্দের সুবিবেচনা করবো। বর্তমানে হাইটেক পার্কে ৭৪ একর জমি বরাদ্দের উপযোগী রয়েছে। জমির বাইরে হাইটেক পার্কের ২৫ হাজার বর্গফুট জায়গায় ৫টি কোম্পানিকে ১৫ হাজার বর্গফুট দেয়া হয়েছে। এখান থেকে দুইটি স্পেস উদ্ধার করা যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি। এর বাইরেও বিগত ১৫ বছরে ডাক বিভাগ ও বিটিসিএল এর অনেক জমি এখানে বেহতা হয়েছে। এগুলো উদ্ধারে মেয়র মহোদয়, জেলাপ্রশাসক ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সহযোগিতা কামনা করি। বিদ্যমান আইসিটি ফেসিলিটিসকে কিভাবে সিলেটের বিভিন্ন সেক্টরে কাজে লাগানো যায় সে বিষয়ে আমরা ভাবছি। আমরা সিলেট হাইটেক পার্কে স্থানীয় ব্যবসায়ী কমিউনিটিকে বিনিয়োগের আহ্বান জানাই।
এছাড়াও বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব আব্দুন নাসের খান বলেন, সিলেটের পর্যটন বিকাশে ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করার চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে। পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের সাইবার সিকিউরিটি প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে।
সিলেট জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম এর সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন- সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী, মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমীর ড. নুরুল ইসলাম বাবুল, সিলেট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি আশিক উদ্দিন আশুক, মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি বদরল ইসলাম চৌধুরী।
গত প্রায় দেড় দশকে সিলেটের সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক প্রতিনিধি এবং স্থানীয় প্রশাসন নিয়ে এরকম মতবিনিময় সভার আয়োজন এই প্রথম বলে জানিয়েছেন অংশগ্রহণকারীরা।