ট্রাম্পের সাথে ক্রিপ্টো নেতৃবৃন্দের বৈঠক, কৌশলগত রিজার্ভ গঠনের পরিকল্পনা

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার হোয়াইট হাউসে প্রথমবারের মতো ক্রিপ্টোকারেন্সি শিল্পের নেতাদের নিয়ে একটি সম্মেলনের আয়োজন করেন। এতে তার সরকারের ডিজিটাল সম্পদ সংরক্ষণ পরিকল্পনার ওপর জোর দেওয়া হয়। খবর রয়টার্স।
সম্মেলনে ট্রাম্পের নিজস্ব ক্রিপ্টো ব্যবসা ‘ওয়ার্ল্ড লিবার্টি ফাইন্যান্সিয়াল’-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক উইটকফসহ শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। এতে মাইক্রোস্ট্রাটেজির সিইও মাইকেল সেলর, কয়েনবেসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও ব্রায়ান আর্মস্ট্রং, বিনিয়োগকারী ক্যামেরন ও টাইলার উইঙ্কলভস এবং উদ্যোক্তা ডেভিড বেইলিসহ অনেকে অংশ নেন।
সম্মেলনের মূল আলোচ্য বিষয় ছিল ট্রাম্পের নতুন কৌশলগত রিজার্ভ গঠনের পরিকল্পনা, যাতে বিটকয়েনসহ অন্যান্য ডিজিটাল সম্পদ অন্তর্ভুক্ত করা হবে। বৃহস্পতিবার জারি করা একটি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে ট্রাম্প এই পরিকল্পনা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন। এতে বলা হয়েছে, বাজেট-বিষয়ক কোনো অতিরিক্ত ব্যয় ছাড়াই ক্রিপ্টো সম্পদ অর্জনের উপায় খুঁজে বের করতে অর্থ ও বাণিজ্য সচিবদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ট্রাম্প বলেন, “আমরা জনগণের করের অর্থ এতে ব্যয় করতে চাই না।” হোয়াইট হাউসের ক্রিপ্টো বিষয়ক সমন্বয়কারী ডেভিড স্যাকস জানান, কৌশলগত রিজার্ভের মূলধন আসবে সরকার কর্তৃক বাজেয়াপ্ত করা বিটকয়েন থেকে, যা অপরাধমূলক বা দেওয়ানি জব্দ অভিযানের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়েছে।
বাজার বিশ্লেষকদের অনেকেই আশা করেছিলেন যে সরকার নতুন ক্রিপ্টো সম্পদ কেনার জন্য নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ঘোষণা করবে, যা না হওয়ায় বিটকয়েনের দাম ৩.৪% কমে ৮৬,৩৯৪ ডলারে নেমে আসে।
বিটকয়েন ওয়ালেট ডেভেলপার এক্সোডাসের সিইও জেপি রিচার্ডসন বলেন, “এই কৌশলগত রিজার্ভ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হবে। ট্রাম্প বিটকয়েনের পাশাপাশি চারটি অতিরিক্ত কয়েন সংরক্ষণের কথা বললেও, আমি মনে করি এগুলো রিজার্ভের জন্য উপযুক্ত নয়।”
সম্মেলনে উপস্থিত কর্মকর্তারা ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের প্রশংসা করেন এবং ক্রিপ্টো শিল্পের সঙ্গে প্রশাসনের সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে ওঠার বিষয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। ওয়েভ ডিজিটাল অ্যাসেটসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা লেস বোর্সাই বলেন, “প্রথমবারের মতো শিল্প নেতারা প্রশাসনের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনার সুযোগ পাচ্ছেন।”
ট্রাম্প ক্রিপ্টো শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “আমরা একপ্রকার পথপ্রদর্শকের ভূমিকায় আছি।” তিনি আরও বলেন, “আজ থেকে আমেরিকা বিটকয়েনের একটি জনপ্রিয় নীতি অনুসরণ করবে—‘কখনোই বিটকয়েন বিক্রি করো না’।”
ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে সরকারের নিজস্ব বিটকয়েন কখনোই বিক্রি করা হবে না।
এদিকে, ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট জানান, যুক্তরাষ্ট্র ডলারকে বিশ্বব্যাপী রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে ধরে রাখতে চায় এবং এর জন্য স্টেবলকয়েন ব্যবহার করা হবে।
সম্মেলনে অংশ নেওয়া রিপল কোম্পানির সিইও ব্র্যাড গারলিংহাউস বলেন, “আমি ট্রাম্পের এই স্বীকৃতিকে স্বাগত জানাই যে ক্রিপ্টোকারেন্সির জগৎ শুধু বিটকয়েনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।” উল্লেখ্য, রিপলের সঙ্গে যুক্ত মুদ্রা এক্সআরপি ট্রাম্পের প্রস্তাবিত সংরক্ষিত ডিজিটাল সম্পদগুলোর মধ্যে একটি।
তবে ট্রাম্পের নিজস্ব ক্রিপ্টো ব্যবসা ও তার পরিবারের মেম কয়েন প্রকল্পের কারণে স্বার্থের দ্বন্দ্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যদিও তার সহকারীরা জানিয়েছেন, ট্রাম্প তার ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তর করেছেন এবং এটি নিরপেক্ষ আইনজীবীদের মাধ্যমে পর্যালোচিত হচ্ছে।
হোয়াইট হাউস এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
ডিবিটেক/বিএমটি